আমনের ভরা মৌসুমেও রাজশাহীতে বেড়েছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এসব চালের মধ্যে কাটারি, জিরাশাইল, নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
ব্যবসায়ী ও চালকলের মালিকরা বলছেন, অনেক ফঁড়িয়া ব্যবসায়ী ধান মজুত করেছেন। তাদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। এজন্য চালের বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। যা বাজারে গিয়ে বাড়তি দর ৩০০ থকে ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তবে পাইকারি বিক্রেতারা পাল্টা বলছেন, চালকলের মালিকরা দাম বাড়াচ্ছেন। চালকলের মালিকরা বলছেন, ফঁড়িয়া ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সব দোষ পাইকারি ব্যবসায়ীদের। কারণ চালকলের মালিকরা এক টাকা বাড়ালে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাড়ায় দ্বিগুণ।
রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা যায়, বাজারে গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। শনিবার বাজারে বিআরআই-২৮ জাতের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫-৬৮, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৬৫ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৭৮-৮০, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৮-৭৫ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৬, যা ছিল ৭০-৭৮ টাকা। গুটি স্বর্ণার কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৫৫ টাকা।
নগরীর সাহেববাজারে চাল কিনতে আসা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা যারা নির্দিষ্ট আয় করি বা, যারা খেটে খাই তাদের কষ্ট তো সরকার বোঝে না, ব্যবসায়ীরাও বোঝে না। দাম বাড়ার কারণে আমি এখন চাল কম করে কিনছি।’ আরেক ক্রেতা রনি বলেন, আমাদের জমিজমা না থাকায় সারাবছর চাল কিনতে হয়। নতুন সরকারের আমলে ভেবেছিলাম দাম কমবে। কিন্তু এখন দেখছি আরও বাড়তি।
সাহেববাজারের চাল ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দাম বাড়ানোয় আমাদের কোনো হাত নেই। কারণ আমরা পাইকারি দরে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করি। দাম বাড়ার কারণ চালকল মালিকরাই ভালো বলতে পারবেন।’
চালকলের মালিকরা বলছেন, এখন মিলপর্যায়ে প্রতি বস্তা আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩,২৫০ থেকে ৩,৩৫০ টাকায়। মোটা চালের বস্তা ২,৭৫০-২,৮০০ টাকা ও জিরাশাইল ৩,৫০০ টাকায়। এই চাল আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে গেলে প্রতিবস্তায় বেড়ে আরও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা যোগ হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে আরও এক দফা দাম বাড়ায় ক্রেতার কাছে যেতে প্রকারভেদে বস্তায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকাও বাড়ছে। রবিবার রাজশাহী নগরীর খুচরা বাজারে আটাশ চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৭২-৭৫ টাকা দরে। গুটি স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৬৩-৬৫ টাকা ও জিরাশাইল ৮০ টাকা দরে।
নগরীর সাগরপাড়া এলাকার অমিত স্টোরের স্বত্বাধিকারী অমিত সরকার বলেন, ‘আড়ত থেকে চাল কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে আমাদের। গত এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়েছে। প্রতি বস্তায় ৩০০-৫০০
টাকা বাড়তি।’ সাহেববাজারের এপি চাল ভাণ্ডারের মালিক প্রকাশ প্রসাদ বলেন, ‘মিল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগী উপকৃত হচ্ছেন। ক্রেতাদের ওপর চাপ বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের করার কিছু নাই।’
কামাল অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন বলেন, ‘এখন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ধান মজুত করে রেখেছেন। তারা বাড়তি দাম না পেলে ধান ছাড়ছেন না। ফলে তাদের কাছ থেকে বেশি দামেই ধান কিনতে হচ্ছে। আমাদের খরচও আছে। এ কারণে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।’
রাজশাহী চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলামও বলছেন, ‘চালের দাম বাড়লেই আমাদের দোষ হয়। কিন্তু এখন ধানের দাম বাড়তি থাকায় চাল করতে বেশি খরচ পড়ছে। এ কারণে মিল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের পাশাপাশি ধানের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ধান মজুত করছেন। দাম বেশি না পেলে বিক্রি করছেন না। তার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।
এদিকে, বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান চলছে। চাল ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হচ্ছে। এরপরও যারা সতর্ক হচ্ছেন না, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে’।