ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শর্ষে ও মধুর সমন্বিত চাষে লাভবান সব পক্ষ

নওগাঁর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন হলুদের ঢেউ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শর্ষেখেতে ফলন আসায় এমন চোখজুড়ানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এসব খেতের পাশেই মৌবাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে শর্ষে ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে।

এর ফলে একদিকে শর্ষের উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় এ বছর ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। গত রোববার পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০টি মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন ৮২ জন মৌচাষি। চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৭০ হাজার কেজি (২৭০ মেট্রিক টন) মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। প্রতি কেজি মধু ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবার জেলায় শর্ষের ফুল থেকে প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে।

এবার মান্দা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শর্ষের আবাদ হয়েছে, যার পরিমাণ ১ হাজার ৭০০ হেক্টর। উপজেলার তেঁতুলিয়া, ভারশো, পরানপুর, কালিকাপুর ও ভালাইন ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে শর্ষেখেতের পাশে ৫০ জন মৌচাষি মৌখামার করেছেন।
মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, শর্ষেখেতে মৌমাছির আনাগোনা থাকলে শর্ষের ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি বাড়ে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মৌমাছি শর্ষের ফুলে যে পরাগায়ন ঘটায়, তাতে শর্ষের দানা ভালো হয় ও ফলন বাড়ে। যে শর্ষেখেতে মৌমাছির আনাগোনা থাকে না, সেখানে ফলন কম হয়।

রোববার মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাটইল গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শর্ষেখেত। পাশে একটি আমবাগানে ১৫০টি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন আবু বক্কর (সুজন)। পাশের পিরাকৈর মাঠে তাঁর আরও একটি মৌমাছির খামার রয়েছে। ওই খামারে ১৫০টি মৌবাক্স রয়েছে। তিনি ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য।

আবু বক্কর বলেন, মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ১২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছেন। ২০ দিন হলো তিনি সাটইল ও পিরাকৈর মাঠে মৌবাক্স বসিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৩০০টি বাক্স থেকে ৪ বার মধু সংগ্রহ করেছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে সাত থেকে আট কেজি মধু পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন তিনি। আরও দুই সপ্তাহ এসব মাঠ থেকে মধু পাওয়া যায়। শর্ষেখেতে ফুল কমে গেলে তিনি সংগ্রহের জন্য অন্য মাঠে চলে যাবেন।

সাটইল গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘রাজশাহীর তানোর উপজেলার এক মৌচাষির কাছ থেকে মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ছয় বছর ধরে নিজের শর্ষেখেতের পাশে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। গত বছর ১০০টি বাক্স থেকে ১৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করেছি। এবার মধুর দাম বেশি। ১০০টা বাক্স থেকে আশা করছি, এবার ১৫ লাখ ১৬ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে। মৌসুমের সময় খামারে ছয় থেকে সাতজন শ্রমিক কাজ করে। মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মৌবাক্সে স্থাপিত মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মৌমাছি শর্ষের ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছে। এতে শর্ষে ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে শর্ষের ফলন বাড়ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত হিসেবে মধু পাচ্ছেন মৌচাষিরা। সমন্বিত চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। শর্ষের সঙ্গে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শর্ষে ও মধুর সমন্বিত চাষে লাভবান সব পক্ষ

আপডেট টাইম : ১৬ ঘন্টা আগে

নওগাঁর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন হলুদের ঢেউ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শর্ষেখেতে ফলন আসায় এমন চোখজুড়ানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এসব খেতের পাশেই মৌবাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে শর্ষে ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে।

এর ফলে একদিকে শর্ষের উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় এ বছর ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। গত রোববার পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০টি মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন ৮২ জন মৌচাষি। চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৭০ হাজার কেজি (২৭০ মেট্রিক টন) মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। প্রতি কেজি মধু ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবার জেলায় শর্ষের ফুল থেকে প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে।

এবার মান্দা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শর্ষের আবাদ হয়েছে, যার পরিমাণ ১ হাজার ৭০০ হেক্টর। উপজেলার তেঁতুলিয়া, ভারশো, পরানপুর, কালিকাপুর ও ভালাইন ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে শর্ষেখেতের পাশে ৫০ জন মৌচাষি মৌখামার করেছেন।
মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, শর্ষেখেতে মৌমাছির আনাগোনা থাকলে শর্ষের ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি বাড়ে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মৌমাছি শর্ষের ফুলে যে পরাগায়ন ঘটায়, তাতে শর্ষের দানা ভালো হয় ও ফলন বাড়ে। যে শর্ষেখেতে মৌমাছির আনাগোনা থাকে না, সেখানে ফলন কম হয়।

রোববার মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাটইল গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শর্ষেখেত। পাশে একটি আমবাগানে ১৫০টি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন আবু বক্কর (সুজন)। পাশের পিরাকৈর মাঠে তাঁর আরও একটি মৌমাছির খামার রয়েছে। ওই খামারে ১৫০টি মৌবাক্স রয়েছে। তিনি ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য।

আবু বক্কর বলেন, মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ১২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছেন। ২০ দিন হলো তিনি সাটইল ও পিরাকৈর মাঠে মৌবাক্স বসিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৩০০টি বাক্স থেকে ৪ বার মধু সংগ্রহ করেছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে সাত থেকে আট কেজি মধু পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন তিনি। আরও দুই সপ্তাহ এসব মাঠ থেকে মধু পাওয়া যায়। শর্ষেখেতে ফুল কমে গেলে তিনি সংগ্রহের জন্য অন্য মাঠে চলে যাবেন।

সাটইল গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘রাজশাহীর তানোর উপজেলার এক মৌচাষির কাছ থেকে মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ছয় বছর ধরে নিজের শর্ষেখেতের পাশে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। গত বছর ১০০টি বাক্স থেকে ১৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করেছি। এবার মধুর দাম বেশি। ১০০টা বাক্স থেকে আশা করছি, এবার ১৫ লাখ ১৬ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে। মৌসুমের সময় খামারে ছয় থেকে সাতজন শ্রমিক কাজ করে। মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মৌবাক্সে স্থাপিত মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মৌমাছি শর্ষের ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছে। এতে শর্ষে ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে শর্ষের ফলন বাড়ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত হিসেবে মধু পাচ্ছেন মৌচাষিরা। সমন্বিত চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। শর্ষের সঙ্গে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।