হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুড়ি এলাকায় পাহাড়ের দেড় শ একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট। সবুজের বুকে গড়ে ওঠা রিসোর্টটির স্থাপত্য যেন মোগল আমলের রাজপ্রাসাদ। রাজা-বাদশাহদের কারবারই বটে। রিসোর্টের একেবারে ন্যূনতম ভাড়া ১২ হাজার টাকা। আর তিন কক্ষের প্রেসিডেনশিয়াল ভিলার ভাড়া এক দিনে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা!
ভাড়া শুনে চক্ষু চড়কগাছ হলেও হতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো, হঠাৎ পাওয়া দিন ছয়েকের ছুটিতে এই রিসোর্ট ফাঁকা নেই।
ছোট পাহাড়ের কোলঘেঁষা হবিগঞ্জের এই রিসোর্টটিই শুধু নয়, কক্সবাজারের সাতটির মতো তারকা হোটেল ও রিসোর্টেও লম্বা ছুটির হাওয়া এসে লেগেছে। চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলের পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফও পর্যটকে ভরা। তবে বিলাসবহুল হোটেলের ব্যবসার এমন রমরমা অবস্থার মধ্যেও কুয়াকাটার হোটেলগুলোর চিত্র মলিন। সেখানে পর্যটকের সংখ্যা আশানুরূপ না।
হবিগঞ্জের দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে প্যালেস সূত্রে জানা গেছে, তাদের অধিকাংশ রিসোর্ট কক্ষ ও ভিলা ভাড়া হয়ে গেছে। টানা সরকারি ছুটিতে হঠাৎ করে অতিথির সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধি করেনি। ছুটিতে আসা অতিথিদের জন্য সকালের নাশতা, দুপুর ও রাতের খাবারে বিশেষ অফার রাখা হয়েছে।
বাহুবলের সবুজ টিলার চূড়ায় চূড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে প্যালেসের এ ভবনগুলো। এক টিলা থেকে অন্য টিলায় যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হয়েছে দুটো ঝুলন্ত সেতু। পাশে রয়েছে থরে থরে ফল আর সবজির বাগান। রিসোর্ট থেকে এক পা এগোলেই চোখে পড়বে সবুজ চা-বাগান। এ প্রকৃতির সজীবতা উপভোগ করতেই এখানে ছুটে আসছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এর ভেতরে আছে বিলিয়ার্ড, রিমোট কন্ট্রোল কার রেসিং, ফুটবল, বাস্কেটবল আর টেনিস গ্রাউন্ড, আছে দুটো সিনেপ্লেক্সে থ্রিডি সিনেমা দেখার ব্যবস্থা। দোতলায় বার কাম রেস্তোরাঁ। রিসোর্টের ভেতরে চলাচলে আছে গলফ কোর্ট। যত ইচ্ছা সিনেমা দেখেন, কার্টে করে ঘুরে বেড়ান আর ইনফিনিটি পুলে সাঁতরে বেড়ান না কেন, এ জন্য আপনাকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে না।
দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টের রিজারভেশন সুপারভাইজার জাহাদুল ইসলাম জানান, টানা ছুটির কারণে তাঁদের অতিথির সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছেন। জাহাদুল ইসলাম বলেন, তাঁদের এ লাক্সারি রিসোর্টে বিভিন্ন ধরনের কক্ষ আছে। টাওয়ারে এক্সিকিউটিভ রুমের ভাড়া ভ্যাট ছাড়া ১২ হাজার টাকা থেকে শুরু। এক রুমের ভিলাগুলো ১৮ হাজার ২০০ টাকা। আছে তিন কক্ষের প্রেসিডেনশিয়াল ভিলা রবি শঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসন। ভ্যাট ছাড়াই এগুলোর জন্য দিনপ্রতি ভাড়া গুনতে হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো।
সমুদ্র শহর কক্সবাজারের শহরে পাঁচ তারকা হোটেলের মধ্যে আছে সী-গাল, সাইমান বিচ রিসোর্ট, ওশান প্যারাডাইস, কক্স টুডে। এ ছুটিতে এসব হোটেল প্রায় পূর্ণ। এমনিতেই কয়েক মাস ধরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিদেশি কক্সবাজারে থাকছেন। প্রায় সবাই রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করছেন। আর এর ওপর ছুটির চাপ। সি গালের প্রধান নির্বাহী ইমরুল সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর হোটেলের ৯৫ শতাংশ সিট বুক হয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বিদেশি। সি গালের একটি কক্ষের ভাড়া ৬ হাজার থেকে শুরু হয়ে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কক্সবাজারে ইনানী সৈকতের কাছে প্যাঁচার দ্বীপ এলাকায় মারমেড ইকো রিসোর্ট ও বিচ রিসোর্টের ভাড়া ৭ হাজার থেকে ৮৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। রিসোর্টের মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাদের রিসোর্ট এখন প্রায় পূর্ণ।
দেশের চায়ের রাজধানী হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফে আজ শুক্রবার এবং কাল শনিবার দুদিন কোনো কক্ষ খালি নেই। এ কথা জানান হোটেলটির জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক পলাশ চৌধুরী। তিনি জানান, এখন সামার প্যাকেজ চলছে। শুরুর ভাড়া ১৪ হাজার ৭৭৭ টাকা। এই মূল্যে দুজন থাকতে পারেন। সর্বোচ্চ ভাড়া ৩৯ হাজার ৭৭৭ টাকা। এখানে চারজন থাকতে পারবে। দুটি প্যাকেজেই সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার যুক্ত আছে। বাড়তি ট্যাক্স বা ভ্যাটও দিতে হবে না।
তারকা হোটেলের এমন রমরমা অবস্থার মধ্যে কুয়াকাটার হোটেলগুলো কিন্তু শুভ সংবাদ নেই। কুয়াকাটার অভিজাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলা এবং কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড সি রিসোর্ট পর্যটকদের আগমনের জন্য বাড়তি প্রস্তুতি নিলেও সেভাবে বুকিং না থাকায় এ দুটি হোটেলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ হতাশ। সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জয়নাল আবেদীন চোকদার হতাশার সুরে বলেন, ‘আমাদের ১২টি ভিলা এবং এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের ৬৮টি রুম রয়েছে। সব মিলিয়ে ২০টি রুম ভাড়া হবে কি না, সন্দেহ রয়েছে।’
কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড সি রিসোর্টের ফ্রন্ট অফিস এক্সিকিউটিভ শাকিল মজুমদার বলেন, ‘আমাদের হোটেলে ৬ ধরনের ২৬টি রুম রয়েছে। এর মধ্যে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ২টি রুম বুকিং হয়েছে। ছুটির অন্য সময়ে যেভাবে চাপ পড়ে এবার সে রকম মনে হচ্ছে না।’
কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটার ১১ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা সড়ক, কুয়াকাটার অভ্যন্তরীণ সড়কের নাজুক হাল এবং স্থানীয় অবকাঠামোর বেহাল অবস্থার জন্যই বড় ছুটিতেও পর্যটকেরা এই এলাকার কম আসছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।