ঢাকা , বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষকের আঙিনায় সোনালি হাসির ঝিলিক

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ষড়ঋতুর বাংলায় এবার আষাঢ়-শ্রাবণ কেটেছে প্রায় বৃষ্টিহীন। ঝকঝকে নীল আকাশে মাঝে মধ্যে কেবল পেজো তুলার মতো মেঘ এদিক-ওদিক ভেসে বেড়িয়েছে। অনেক সময় গর্জে উঠলেও বর্ষায়নি। গর্বের আবহাওয়া যেন দিনদিনই বদলে যাচ্ছে। কৃষিপ্রধান এ দেশে আবহাওয়া বদলের ফলে দেখা দিচ্ছে নানান সমস্যা। প্রতিকূল এই আবহাওয়ায় রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের আবাদ। তবে বাজারে দাম বেশি হওয়ায় কম ফলনেই বেশি লাভে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। ক্ষেতের উৎপাদিত কষ্টার্জিত ফসল বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের চাষিদের আঙিনাজুড়ে এখন সোনালি উৎসব চলছে।

বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলে পুরোদমে পাট কাটা ও জাগ দেওয়ার কাজ চলছে। পাট কাটা, পচানো ও শুকোনোর কাজেই দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামের তৃণমূল কৃষক। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই ডোবা-নালা, খাল-বিলেও পানি কম। বেশিরভাগ গ্রামে মিনি পুকুর বা গর্ত তৈরি করে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট থেকে ছাড়ানো ছাল পচানোর কাজ চলছে। ভালো দামের আশায় সবকিছু ভুলে আবারও এই সোনালি আঁশকে নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন তারা।

গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ের এই কৃষকরা বলছেন, কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় এর কদর বাড়ছে। ফলে কৃষকরা পাটের ভালো দাম পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তারপরেও সরকার যদি পাটের দাম নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে পাট তার হারিয়ে যাওয়া সোনালি অতীত ফিরে পাবে। কৃষকের স্বপ্নও পূরণ হবে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন সাংবাদিককে বলেন, এখন সরকারিভাবে খাদ্যশস্য মজুদে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এই অঞ্চলে আবারও পাটের চাহিদা বাড়েছে। পাটের হারিয়ে যাওয়া সুদিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। এজন্য অধিক মুনাফার আশায় কৃষকেরা আগের চেয়ে বেশি জমিতে পাটের আবাদ করছেন।

নুরুল আমিন জানান, গতবার তিনি এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। এবছর দুই বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছেন। তবে গতবার বেশি বৃষ্টি হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। এবার অনেকেই মিনি পুকুর বা গর্ত তৈরি করে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট থেকে ছাড়ানো ছাল পচানোর কাজ করছেন।

একই উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের কৃষক জয়নাল হোসেন সাংবাদিককে বলেন, ভরা মৌসুমে বৃষ্টি হয়নি ঠিকই। কিন্তু শুরুর দিকে হরহামেশাই বৃষ্টি হয়েছে। আর অসময়ের এই বৃষ্টিতে গ্রামের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যায়। ফলে পাট চাষিরা সময়মত বীজ বপন করতে পারেননি। এতে পাটের আবাদ এবার কিছুটা কমেছে।

তবে শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এবার পাটের আবাদ করতে প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে প্রায় নয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর বিপরীতে বিঘায় পাট উৎপাদন হয়েছে আট থেকে ১২ মণ। আর বাজারে এখন প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। গত বছর উঠতি মৌসুমে পাট বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। ফলে এবার পাট বেচে চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন বলেও জানান কৃষক জয়নাল হোসেন।

তবে মধ্যসত্ত্বভোগী ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট না থাকলে পাটের দাম আরও বেশি হতো বলে মনে করেন কর্নহার গ্রামের কৃষক সাহবুল ইসলাম। তাই কৃষকরা যেনো চলতি মৌসুমে পাটের ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য এখনই সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সরকার যদি পাটের দাম নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে পাট ফিরে পাবে তার হারানো সোনালি অতীত। আর কৃষকের মুনাফার স্বপ্নপূরণ হবে বলেও দাবি করেন এই কৃষক।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, রাজশাহীতে এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৯১৫ হেক্টর। এর বিপরীতে পাটের আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ১৩ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। ফলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তথ্যমতে গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় আট হাজার বিঘা কম জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালি সাংবাদিককে বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট কম উৎপাদন হয়েছে। তবে ফলন খারাপ হয়নি। এছাড়া বাজারে পাটের দাম ভালো। তাই কম ফলনেও কৃষকরা ভালো মুনাফা পাবেন। এতে পাটের প্রতি দিনদিন কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন ঊর্ধ্বতন এ কৃষি কর্মকর্তা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

কৃষকের আঙিনায় সোনালি হাসির ঝিলিক

আপডেট টাইম : ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ষড়ঋতুর বাংলায় এবার আষাঢ়-শ্রাবণ কেটেছে প্রায় বৃষ্টিহীন। ঝকঝকে নীল আকাশে মাঝে মধ্যে কেবল পেজো তুলার মতো মেঘ এদিক-ওদিক ভেসে বেড়িয়েছে। অনেক সময় গর্জে উঠলেও বর্ষায়নি। গর্বের আবহাওয়া যেন দিনদিনই বদলে যাচ্ছে। কৃষিপ্রধান এ দেশে আবহাওয়া বদলের ফলে দেখা দিচ্ছে নানান সমস্যা। প্রতিকূল এই আবহাওয়ায় রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের আবাদ। তবে বাজারে দাম বেশি হওয়ায় কম ফলনেই বেশি লাভে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। ক্ষেতের উৎপাদিত কষ্টার্জিত ফসল বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের চাষিদের আঙিনাজুড়ে এখন সোনালি উৎসব চলছে।

বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলে পুরোদমে পাট কাটা ও জাগ দেওয়ার কাজ চলছে। পাট কাটা, পচানো ও শুকোনোর কাজেই দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামের তৃণমূল কৃষক। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই ডোবা-নালা, খাল-বিলেও পানি কম। বেশিরভাগ গ্রামে মিনি পুকুর বা গর্ত তৈরি করে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট থেকে ছাড়ানো ছাল পচানোর কাজ চলছে। ভালো দামের আশায় সবকিছু ভুলে আবারও এই সোনালি আঁশকে নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন তারা।

গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ের এই কৃষকরা বলছেন, কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় এর কদর বাড়ছে। ফলে কৃষকরা পাটের ভালো দাম পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তারপরেও সরকার যদি পাটের দাম নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে পাট তার হারিয়ে যাওয়া সোনালি অতীত ফিরে পাবে। কৃষকের স্বপ্নও পূরণ হবে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন সাংবাদিককে বলেন, এখন সরকারিভাবে খাদ্যশস্য মজুদে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এই অঞ্চলে আবারও পাটের চাহিদা বাড়েছে। পাটের হারিয়ে যাওয়া সুদিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। এজন্য অধিক মুনাফার আশায় কৃষকেরা আগের চেয়ে বেশি জমিতে পাটের আবাদ করছেন।

নুরুল আমিন জানান, গতবার তিনি এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। এবছর দুই বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছেন। তবে গতবার বেশি বৃষ্টি হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। এবার অনেকেই মিনি পুকুর বা গর্ত তৈরি করে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট থেকে ছাড়ানো ছাল পচানোর কাজ করছেন।

একই উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের কৃষক জয়নাল হোসেন সাংবাদিককে বলেন, ভরা মৌসুমে বৃষ্টি হয়নি ঠিকই। কিন্তু শুরুর দিকে হরহামেশাই বৃষ্টি হয়েছে। আর অসময়ের এই বৃষ্টিতে গ্রামের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যায়। ফলে পাট চাষিরা সময়মত বীজ বপন করতে পারেননি। এতে পাটের আবাদ এবার কিছুটা কমেছে।

তবে শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এবার পাটের আবাদ করতে প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে প্রায় নয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর বিপরীতে বিঘায় পাট উৎপাদন হয়েছে আট থেকে ১২ মণ। আর বাজারে এখন প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। গত বছর উঠতি মৌসুমে পাট বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। ফলে এবার পাট বেচে চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন বলেও জানান কৃষক জয়নাল হোসেন।

তবে মধ্যসত্ত্বভোগী ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট না থাকলে পাটের দাম আরও বেশি হতো বলে মনে করেন কর্নহার গ্রামের কৃষক সাহবুল ইসলাম। তাই কৃষকরা যেনো চলতি মৌসুমে পাটের ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য এখনই সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সরকার যদি পাটের দাম নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে পাট ফিরে পাবে তার হারানো সোনালি অতীত। আর কৃষকের মুনাফার স্বপ্নপূরণ হবে বলেও দাবি করেন এই কৃষক।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, রাজশাহীতে এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৯১৫ হেক্টর। এর বিপরীতে পাটের আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ১৩ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। ফলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তথ্যমতে গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় আট হাজার বিঘা কম জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালি সাংবাদিককে বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট কম উৎপাদন হয়েছে। তবে ফলন খারাপ হয়নি। এছাড়া বাজারে পাটের দাম ভালো। তাই কম ফলনেও কৃষকরা ভালো মুনাফা পাবেন। এতে পাটের প্রতি দিনদিন কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন ঊর্ধ্বতন এ কৃষি কর্মকর্তা।