ঢাকা , রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ভাঙা খুঁটিতেই লাখ টাকার ঘর

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাকা খুঁটির ভেতরে রডের বদলে দেয়া হয়েছে জিআই তার। ঘরে লাগানোর আগেই ভেঙে গেছে সেই খুঁটি। ভাঙা অংশে বাঁশ-কাঠের টুকরো বেঁধে সেটিই কাজে লাগানো হয়েছে। কাঠ নিম্নমানের। ইটের মানও ভালো নয়। সিমেন্টের পরিমাণও কম। ঘরহীন মানুষের জন্য সরকারের দেয়া ঘর বানানোর উপকরণের এই হাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। অভিযোগ আছে আরো বিস্তর। কোনো কোনো এলাকায় ঘরের উপকরণ নিজ খরছে উপকারভোগী মানুষকে তার জমি পর্যন্ত টেনে নিতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও নির্মাণ সামগ্রীও কিনে দিতে হচ্ছে ঘর পাওয়া দরিদ্র লোকজনকে।

ঘর পেতে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারকে দিতে হয়েছে টাকা। ঘর পাওয়া লোকের তালিকাতেও আছে অনিয়ম। ঘর আছে,অবস্থা ভালো-এমন লোকও পেয়েছে ঘর। ইউপি সদস্যরা নিজে ও পরিবারের সদস্যদের নামে ঘর বাগিয়েছেন। একজনের নামে বরাদ্দ ঘর আরেকজনের বাড়িতে উঠানো হচ্ছে। ঘর নিয়ে এ অনিয়ম শামাল দিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হয়েছে নবীনগর উপজেলা প্রশাসনকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলায় সরজমিন খোঁজ খবরে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ মিলে। এই প্রকল্পের আওতায় যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। ২৫৬ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি টিনের ঘর নির্মাণে সরকারের বরাদ্দ এক লাখ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৭টি উপজেলায় এখন পর্যন্ত ২৫৬০টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় ১৬২, নাসিরনগর উপজেলায় ৪৭৬, কসবা উপজেলায় ২২২,বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৫০,সদর উপজেলায় ৫১২, বিজয়নগর উপজেলায় ৪৮৭ এবং নবীনগর উপজেলায় ৬৫১টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। নবীনগরের একটি ইউনিয়ন বিদ্যাকুটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৫০টি ঘর। একেকটি ঘরের জন্য উপকরণ হিসেবে ধরা আছে ঘর ও বারান্দার জন্য সাড়ে ৫ বান টিন (৩৪০ এমএম), কাঠ সাড়ে ১৮ সিএফটি, ইট সাড়ে ৫শটি, সিমেন্ট ১০ ব্যাগ, বালু ও সুড়কি ৫০ ফুট করে। ভালো মানের টিন, কাঠ ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী দিয়েই প্রকল্প সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। ৬০ দিনের মধ্যে ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ৩/৪ মাসেও ঘর সম্পন্ন হচ্ছে না। ঠিকাদার বা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করছে। কাজ অর্ধেক করে ফেলে রাখছে।

বিজয়নগর উপজেলায় সিংগারবিল ও চম্পকনগর ইউনিয়নে ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয় প্রথমে। এরপরই এই দুই ইউনিয়নের সচ্ছল ও জনপ্রতিনিধিদের নিজস্ব লোকজন ঘর পেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আফরোজ এবং ওই দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও হামিদুল হকের বিরুদ্ধে প্রকৃত ঘরহীন মানুষের পক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।

সরজমিন সিংগারবিল ইউনিয়নের দৌলতকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সরকারের দেয়া ঘরে বসবাস করছেন ঘর পাওয়া পরিবারগুলো। তাদের একজন আবদুল আউয়াল। তার অভিযোগ ঘরের টিন ভালো হলেও ইট, সুড়কি, কাঠ কোনোটাই ভালো দেয়া হয়নি। কাঠে এখনই ঘুণেধরা শুরু হয়েছে। চেয়ারম্যান নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ঘর এনেছেন বলে চেয়ারম্যানের লোক আবু তাহের তার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে সুদে টাকা এনে ৩ হাজার টাকা দেন তিনি। বুধন্তী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য স্বপ্না রানী দাশ তার ছেলে মিটন চন্দ্র দাশের নামে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন।

স্বপ্না ঘর নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আগের ঘর ভাঙ্গা, থাকার মতো সুযোগ নাই। এই উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম বলেন-তালিকা হয়েছে অনেক আগে। তালিকায় ত্রুটি থাকলে আমরা বাদ দিয়ে দিচ্ছি। নবীনগরে ঘর নিয়ে অনিয়মের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হয় উপজেলা প্রশাসনকে। শ্রীরামপুর ও রসুল্লাবাদ ইউনিয়নে একজনের নামে বরাদ্দ করা ঘর আরেকজন উঠিয়ে ফেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এমন ২ জনের কাছ থেকে একলাখ টাকা করে জরিমানা আদায় করে আদালত। ১৫/২০ দিন আগে এই আদালত পরিচালনা করা হয়।

সম্প্রতি ইউএনও ঘর বরাদ্দ পাওয়া লোকজন যাতে কাউকে টাকা না দেয় এ ব্যাপারে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। নবীনগর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন-অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও এ ব্যাপারে কঠোর। সরাইলের অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে প্রতিটি ঘরের জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, ইএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। নাসিরনগরে নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ঘর বানানোর অভিযোগ রয়েছে। তালিকাতেও আছে অনিয়ম।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

রাজধানীর ১৫টি খাল খননে দূর হবে ৮০ শতাংশ জলাবদ্ধতা

ভাঙা খুঁটিতেই লাখ টাকার ঘর

আপডেট টাইম : ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাকা খুঁটির ভেতরে রডের বদলে দেয়া হয়েছে জিআই তার। ঘরে লাগানোর আগেই ভেঙে গেছে সেই খুঁটি। ভাঙা অংশে বাঁশ-কাঠের টুকরো বেঁধে সেটিই কাজে লাগানো হয়েছে। কাঠ নিম্নমানের। ইটের মানও ভালো নয়। সিমেন্টের পরিমাণও কম। ঘরহীন মানুষের জন্য সরকারের দেয়া ঘর বানানোর উপকরণের এই হাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। অভিযোগ আছে আরো বিস্তর। কোনো কোনো এলাকায় ঘরের উপকরণ নিজ খরছে উপকারভোগী মানুষকে তার জমি পর্যন্ত টেনে নিতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও নির্মাণ সামগ্রীও কিনে দিতে হচ্ছে ঘর পাওয়া দরিদ্র লোকজনকে।

ঘর পেতে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারকে দিতে হয়েছে টাকা। ঘর পাওয়া লোকের তালিকাতেও আছে অনিয়ম। ঘর আছে,অবস্থা ভালো-এমন লোকও পেয়েছে ঘর। ইউপি সদস্যরা নিজে ও পরিবারের সদস্যদের নামে ঘর বাগিয়েছেন। একজনের নামে বরাদ্দ ঘর আরেকজনের বাড়িতে উঠানো হচ্ছে। ঘর নিয়ে এ অনিয়ম শামাল দিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হয়েছে নবীনগর উপজেলা প্রশাসনকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলায় সরজমিন খোঁজ খবরে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ মিলে। এই প্রকল্পের আওতায় যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। ২৫৬ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি টিনের ঘর নির্মাণে সরকারের বরাদ্দ এক লাখ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৭টি উপজেলায় এখন পর্যন্ত ২৫৬০টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় ১৬২, নাসিরনগর উপজেলায় ৪৭৬, কসবা উপজেলায় ২২২,বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৫০,সদর উপজেলায় ৫১২, বিজয়নগর উপজেলায় ৪৮৭ এবং নবীনগর উপজেলায় ৬৫১টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। নবীনগরের একটি ইউনিয়ন বিদ্যাকুটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৫০টি ঘর। একেকটি ঘরের জন্য উপকরণ হিসেবে ধরা আছে ঘর ও বারান্দার জন্য সাড়ে ৫ বান টিন (৩৪০ এমএম), কাঠ সাড়ে ১৮ সিএফটি, ইট সাড়ে ৫শটি, সিমেন্ট ১০ ব্যাগ, বালু ও সুড়কি ৫০ ফুট করে। ভালো মানের টিন, কাঠ ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী দিয়েই প্রকল্প সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। ৬০ দিনের মধ্যে ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ৩/৪ মাসেও ঘর সম্পন্ন হচ্ছে না। ঠিকাদার বা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করছে। কাজ অর্ধেক করে ফেলে রাখছে।

বিজয়নগর উপজেলায় সিংগারবিল ও চম্পকনগর ইউনিয়নে ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয় প্রথমে। এরপরই এই দুই ইউনিয়নের সচ্ছল ও জনপ্রতিনিধিদের নিজস্ব লোকজন ঘর পেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আফরোজ এবং ওই দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও হামিদুল হকের বিরুদ্ধে প্রকৃত ঘরহীন মানুষের পক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।

সরজমিন সিংগারবিল ইউনিয়নের দৌলতকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সরকারের দেয়া ঘরে বসবাস করছেন ঘর পাওয়া পরিবারগুলো। তাদের একজন আবদুল আউয়াল। তার অভিযোগ ঘরের টিন ভালো হলেও ইট, সুড়কি, কাঠ কোনোটাই ভালো দেয়া হয়নি। কাঠে এখনই ঘুণেধরা শুরু হয়েছে। চেয়ারম্যান নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ঘর এনেছেন বলে চেয়ারম্যানের লোক আবু তাহের তার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে সুদে টাকা এনে ৩ হাজার টাকা দেন তিনি। বুধন্তী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য স্বপ্না রানী দাশ তার ছেলে মিটন চন্দ্র দাশের নামে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন।

স্বপ্না ঘর নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আগের ঘর ভাঙ্গা, থাকার মতো সুযোগ নাই। এই উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম বলেন-তালিকা হয়েছে অনেক আগে। তালিকায় ত্রুটি থাকলে আমরা বাদ দিয়ে দিচ্ছি। নবীনগরে ঘর নিয়ে অনিয়মের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হয় উপজেলা প্রশাসনকে। শ্রীরামপুর ও রসুল্লাবাদ ইউনিয়নে একজনের নামে বরাদ্দ করা ঘর আরেকজন উঠিয়ে ফেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এমন ২ জনের কাছ থেকে একলাখ টাকা করে জরিমানা আদায় করে আদালত। ১৫/২০ দিন আগে এই আদালত পরিচালনা করা হয়।

সম্প্রতি ইউএনও ঘর বরাদ্দ পাওয়া লোকজন যাতে কাউকে টাকা না দেয় এ ব্যাপারে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। নবীনগর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন-অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও এ ব্যাপারে কঠোর। সরাইলের অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে প্রতিটি ঘরের জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, ইএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। নাসিরনগরে নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ঘর বানানোর অভিযোগ রয়েছে। তালিকাতেও আছে অনিয়ম।