ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বপ্নর পদ্মা সেতু নির্দিষ্ট সময়ে উদ্বোধন হোক

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন আমাদের সক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে দ্রুতগতিতে ছুটছে উদ্বোধনের দিকে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর- ২০২১ সালের জুলাই মাসেই উদ্বোধনের পর চলাচল করবে গাড়ি ও ট্রেন।

বাংলাদেশের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলেই নয়, ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর সংস্থাটিকে অনুসরণ করে আরও তিনটি দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে যায়।

অনেকে তখন ঘাবড়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর অদম্য ইচ্ছায় নিজেদের উদ্যোগ ও অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী পদক্ষেপ বর্তমান বিশ্বে আমাদের সক্ষমতার নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে। এ কারণে পদ্মা সেতু আমাদের কাছে স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। আর কিছুদিন পরই যখন এর উপর দিয়ে যান চলাচল করবে, তখন অর্থনীতির অগ্রগতির পাশাপাশি বহির্বিশ্বে তৈরি হবে আমাদের নতুন ইমেজও।

এরই মধ্যে নির্মীয়মাণ সেতুর পিলারের উপর বসে গেছে ২৫তম স্প্যান। বাকি পিলারগুলোর উপর আর ১৬টি স্প্যান বসবে। মূল সেতু নির্মাণের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৭ শতাংশ। আমরা আশা করব, নির্মাণসংশ্লিষ্টরা রাতদিন পরিশ্রম করে হলেও নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ করবেন।

পদ্মায় কেবল সেতুই নির্মিত হচ্ছে না, একই সঙ্গে রচিত হচ্ছে এক থেকে দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়ার এবং দারিদ্র্যের হার দশমিক ৮৪ শতাংশ কমিয়ে আনার মহাকাব্য।

এটি যে কেবল কথার কথা নয়- বাস্তবতাও, তার প্রমাণ পাওয়া যায় অর্থনীতিবিদদের বক্তব্যে। তারা বলছেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে সরাসরি তিনটি পরিবর্তন আসবে। প্রথমত, এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। ফলে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তারলাভ করবে, বিনিয়োগ বাড়বে।

দ্বিতীয়ত, কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তারা তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরাসরি পাঠাতে পারবেন। ফলে পণ্যের ভালো দাম পাওয়ার মধ্য দিয়ে উৎপাদনে মনোযোগী হবেন তারা, যা আমাদের কৃষি খাতে ইতিবাচক ফল বয়ে আনব। তৃতীয়ত, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তৃতি ঘটবে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ এনে দেবে পদ্মা সেতু।

দুর্ভাগ্যের বিষয়, এ অপরিহার্য সেতুটি নির্মাণে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে এসেছে নানা বাধা। নানা গুজব ছড়ানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সব ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞ। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে ২১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা এরই মধ্যে ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের কাজও প্রত্যাশা মতো ৭৭ শতাংশ শেষ হয়েছে।

পদ্মা সেতুর প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদেরও ভাগ্য ফিরছে। তাদের জমির ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি বাড়তি সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়েছে ৬৮৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এছাড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও আলাদা প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

আমাদের প্রত্যাশা, নদীশাসনসহ সবকিছু ঠিকমতো এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হবে দেশকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন। এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

স্বপ্নর পদ্মা সেতু নির্দিষ্ট সময়ে উদ্বোধন হোক

আপডেট টাইম : ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন আমাদের সক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে দ্রুতগতিতে ছুটছে উদ্বোধনের দিকে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর- ২০২১ সালের জুলাই মাসেই উদ্বোধনের পর চলাচল করবে গাড়ি ও ট্রেন।

বাংলাদেশের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলেই নয়, ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর সংস্থাটিকে অনুসরণ করে আরও তিনটি দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে যায়।

অনেকে তখন ঘাবড়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর অদম্য ইচ্ছায় নিজেদের উদ্যোগ ও অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী পদক্ষেপ বর্তমান বিশ্বে আমাদের সক্ষমতার নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে। এ কারণে পদ্মা সেতু আমাদের কাছে স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। আর কিছুদিন পরই যখন এর উপর দিয়ে যান চলাচল করবে, তখন অর্থনীতির অগ্রগতির পাশাপাশি বহির্বিশ্বে তৈরি হবে আমাদের নতুন ইমেজও।

এরই মধ্যে নির্মীয়মাণ সেতুর পিলারের উপর বসে গেছে ২৫তম স্প্যান। বাকি পিলারগুলোর উপর আর ১৬টি স্প্যান বসবে। মূল সেতু নির্মাণের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৭ শতাংশ। আমরা আশা করব, নির্মাণসংশ্লিষ্টরা রাতদিন পরিশ্রম করে হলেও নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ করবেন।

পদ্মায় কেবল সেতুই নির্মিত হচ্ছে না, একই সঙ্গে রচিত হচ্ছে এক থেকে দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়ার এবং দারিদ্র্যের হার দশমিক ৮৪ শতাংশ কমিয়ে আনার মহাকাব্য।

এটি যে কেবল কথার কথা নয়- বাস্তবতাও, তার প্রমাণ পাওয়া যায় অর্থনীতিবিদদের বক্তব্যে। তারা বলছেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে সরাসরি তিনটি পরিবর্তন আসবে। প্রথমত, এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। ফলে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তারলাভ করবে, বিনিয়োগ বাড়বে।

দ্বিতীয়ত, কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তারা তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরাসরি পাঠাতে পারবেন। ফলে পণ্যের ভালো দাম পাওয়ার মধ্য দিয়ে উৎপাদনে মনোযোগী হবেন তারা, যা আমাদের কৃষি খাতে ইতিবাচক ফল বয়ে আনব। তৃতীয়ত, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তৃতি ঘটবে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ এনে দেবে পদ্মা সেতু।

দুর্ভাগ্যের বিষয়, এ অপরিহার্য সেতুটি নির্মাণে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে এসেছে নানা বাধা। নানা গুজব ছড়ানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সব ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞ। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে ২১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা এরই মধ্যে ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের কাজও প্রত্যাশা মতো ৭৭ শতাংশ শেষ হয়েছে।

পদ্মা সেতুর প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদেরও ভাগ্য ফিরছে। তাদের জমির ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি বাড়তি সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়েছে ৬৮৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এছাড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও আলাদা প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

আমাদের প্রত্যাশা, নদীশাসনসহ সবকিছু ঠিকমতো এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হবে দেশকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন। এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।