বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পটুয়াখালীর বাউফলে খোলা আকাশের নিচে দুই দফা বৃষ্টিতে ভিজেছে সরকারি খাদ্যগুদামের শতাধিক টন ধান।বৃহস্পতি ও শনিবার একটি ইটভাটায় বৃষ্টিতে ভেজার পর সেগুলোকে পরিষ্কার করে খাদ্যগুদামের বস্তায় ভরে বগা খাদ্যগুদামে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রশ্ন হল, সরকারি গুদামের ধান কেন খোলা আকাশের নিচে পরিত্যক্ত ইটভাটায় পড়ে থাকবে? জানা যায়, সাবেক চিফ হুইপ ও বর্তমান এমপির ভাইয়ের মধ্যস্থতায় কেনার কারণে সরকারি গুদামের ধান গুদাম থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরের ইটভাটায় উন্মুক্ত পড়ে থেকে বৃষ্টিতে ভেজে। তিনি সেখানে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে কিনে পরে সরকারের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন।
এ ক্ষেত্রে সরকারি দাম ৪০ কেজি বা এক মণ ১০৪০ টাকা হলেও কৃষকের কাছ থেকে ৬০০-৭০০ টাকায় কিনে সরকারের কাছে নির্ধারিত দামে বিক্রি করে বস্তা তথা মণপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা মুনাফা করে মধ্যস্থতাকারীরা।
এ জন্য কৃষককে ভয়ভীতি দেখিয়ে সরাসরি সরকার কিনবে না বলে তাদের কাছ থেকে চেকে সই নিয়ে রাখা হয়। অথচ নিয়ম হচ্ছে সরকার সরাসরি কৃষক থেকে ধান-চাল কিনবে এবং গুদামেই সেগুলো গ্রহণ করা হবে, বাইরে নয়।
কিন্তু সিন্ডিকেটের মুনাফাবাজির জন্য নানা কারসাজির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। এমনকি সরকারি তথা জনগণের অর্থে জনগণের জন্য কেনা খাদ্যশস্য অনিয়ম-অবহেলায় নষ্ট করা হচ্ছে।
এটা যে কেবল পটুয়াখালীর বাউফলেই হচ্ছে তা নয়, দেশজুড়ে সব খাদ্যগুদামের প্রায় একই অবস্থা। অনিয়মের জন্য কৃষক না হলেও সরবরাহকারীকে কৃষক দেখানো হয়। যেমন এমপির ভাইকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কালাইয়া ইউনিয়নের এক নম্বর তালিকাভুক্ত কৃষক দেখানো হয়েছে।
এটি হচ্ছে মাঠপর্যায়ে সরকারি ধান-চাল কেনার বাস্তব পরিস্থিতি। এর বাইরে গুদাম থেকে সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্য চুরি, ওজনে কম দেয়া, খারাপ খাদ্যশস্যকে ভালো হিসেবে দেখানোসহ অনেক ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি সামনে রেখে দেশজুড়ে বেশিরভাগ গুদামকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
বিভিন্ন সময় গুদামকেন্দ্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি ও আত্মসাতের খবর অন্তত তাই বলে। এ কারণে সংকটের সময় খাদ্যগুদামের যে উদ্দেশ্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, তার কোনো প্রভাব বাজারে পড়ে না। বিপরীতে সরকারি খাদ্যশস্য কেনা, মজুদ ও সরবরাহ পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
আমরা মনে করি, সুস্থ খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও বাজার ব্যবস্থা ভালো করার জন্য সরকারি খাদ্যগুদামের যথেষ্ট ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
এ জন্য খাদ্যগুদামকেন্দ্রিক অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল ও অন্যান্য খাদ্যশস্য কেনা নিশ্চিত করতে হবে।
এ জন্য ধান-চাল কেনাসহ সরকারি যে কোনো ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার অবিলম্বে।