ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দূষণ রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বায়ুদূষণে ২০১৯ সালের মতো এবারও বিশ্বের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এটি আমাদের জন্য একটি নেতিবাচক খবর। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউ এয়ার’ গত ২৫ ফেব্র“য়ারি এ সংক্রান্ত বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০১৯ প্রকাশ করেছে। ২০১৯ সালে বিশ্বের ৯৮টি দেশের সার্বক্ষণিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম ২.৫-এর পরিমাণ দেখে তালিকাটি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ছিল ৮৩.৩।

এর আগের বছর যা ছিল ৯৭.১। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটারে যা থাকার কথা ১০-এর কম।

দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে বায়ুদূষণের হার বাড়ছে বলে মনে করা হয়। ইটভাটাও এ জন্য দায়ী। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অতিরিক্ত যানবাহন বায়ুদূষণের জন্য অন্যতম দায়ী। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন দফতরের আন্তঃসমন্বয়হীনতাও কম দায়ী নয়।

আমরা সাধারণ নাগরিকও বায়ু বা অন্যান্য দূষণ বাড়াচ্ছি। এ ক্ষেত্রে নিজস্ব লাভ-লোকসানের হিসাবই করি আমরা। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভালো ও বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়ার বিষয়ে আমরা খুব কমই করছি।

দূষণ রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন এবং এর বাস্তবায়ন করতে হবে। যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে। অনেক ভালো আইন আছে। সেগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন সংশোধন, পরিমার্জন করে সময়োপযোগী করতে হবে।

বর্তমান বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি নিরাপদ বায়ুর নিশ্চয়তা। ধুলার কারণে এই দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত ইটভাটা, যানবাহন, নির্মাণকাজ ও কলকারখানার ধোঁয়ার কারণে ঢাকা শহরে প্রায় দেড় কোটি মানুষ বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে বাস করছে।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে।

ঢাকা শহরের ছয়টি বিদ্যালয়ের শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতা নিয়ে ২০১৬ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাব। ফলাফলে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলোর ২৫ শতাংশ শিশুর ফুসফুস পূর্ণ মাত্রায় কাজ করছে না। তাদের ফুসফুস ৬৫-৮০ শতাংশ কাজ করছে।

একটি গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা ৫৮ শতাংশ, রোড ডাস্ট ও সয়েল ডাস্ট ১৮ শতাংশ, যানবাহন ১০ শতাংশ, বায়োমাস পোড়ানো ৮ শতাংশ দায়ী। দেশে পরিবেশ দূষণ অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, শুধু ঢাকায়ই এক বছরে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সারা দেশের শহরাঞ্চলে মারা গেছে ৮০ হাজার। পরিবেশ দূষণের সমন্বিত নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনের ওপর।

দেশে বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৭ ভাগ। পরিবেশ দূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু, রোগী আর বৃদ্ধরা।

জনসচেতনতা সৃষ্টিই পারে বিভিন্ন রকমের দূষণের ভয়াবহতা কমাতে। পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। নগরায়ণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে। সবুজ বিপ্লব দরকার। বনায়ন দরকার। পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

দূষণ রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরি

আপডেট টাইম : ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ মার্চ ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বায়ুদূষণে ২০১৯ সালের মতো এবারও বিশ্বের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এটি আমাদের জন্য একটি নেতিবাচক খবর। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউ এয়ার’ গত ২৫ ফেব্র“য়ারি এ সংক্রান্ত বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০১৯ প্রকাশ করেছে। ২০১৯ সালে বিশ্বের ৯৮টি দেশের সার্বক্ষণিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম ২.৫-এর পরিমাণ দেখে তালিকাটি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ছিল ৮৩.৩।

এর আগের বছর যা ছিল ৯৭.১। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটারে যা থাকার কথা ১০-এর কম।

দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে বায়ুদূষণের হার বাড়ছে বলে মনে করা হয়। ইটভাটাও এ জন্য দায়ী। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অতিরিক্ত যানবাহন বায়ুদূষণের জন্য অন্যতম দায়ী। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন দফতরের আন্তঃসমন্বয়হীনতাও কম দায়ী নয়।

আমরা সাধারণ নাগরিকও বায়ু বা অন্যান্য দূষণ বাড়াচ্ছি। এ ক্ষেত্রে নিজস্ব লাভ-লোকসানের হিসাবই করি আমরা। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভালো ও বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়ার বিষয়ে আমরা খুব কমই করছি।

দূষণ রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন এবং এর বাস্তবায়ন করতে হবে। যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে। অনেক ভালো আইন আছে। সেগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন সংশোধন, পরিমার্জন করে সময়োপযোগী করতে হবে।

বর্তমান বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি নিরাপদ বায়ুর নিশ্চয়তা। ধুলার কারণে এই দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত ইটভাটা, যানবাহন, নির্মাণকাজ ও কলকারখানার ধোঁয়ার কারণে ঢাকা শহরে প্রায় দেড় কোটি মানুষ বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে বাস করছে।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে।

ঢাকা শহরের ছয়টি বিদ্যালয়ের শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতা নিয়ে ২০১৬ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাব। ফলাফলে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলোর ২৫ শতাংশ শিশুর ফুসফুস পূর্ণ মাত্রায় কাজ করছে না। তাদের ফুসফুস ৬৫-৮০ শতাংশ কাজ করছে।

একটি গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা ৫৮ শতাংশ, রোড ডাস্ট ও সয়েল ডাস্ট ১৮ শতাংশ, যানবাহন ১০ শতাংশ, বায়োমাস পোড়ানো ৮ শতাংশ দায়ী। দেশে পরিবেশ দূষণ অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, শুধু ঢাকায়ই এক বছরে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সারা দেশের শহরাঞ্চলে মারা গেছে ৮০ হাজার। পরিবেশ দূষণের সমন্বিত নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনের ওপর।

দেশে বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৭ ভাগ। পরিবেশ দূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু, রোগী আর বৃদ্ধরা।

জনসচেতনতা সৃষ্টিই পারে বিভিন্ন রকমের দূষণের ভয়াবহতা কমাতে। পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। নগরায়ণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে। সবুজ বিপ্লব দরকার। বনায়ন দরকার। পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে।