ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝুঁকিতে বিপুল গ্যাস উত্তোলন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারি সম্পদ, জনগণের মালিকানাধীন প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের। অথচ ছোট আয়তনের দেশ হওয়ার কারণে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি সর্বজনস্বীকৃত।

এ অবস্থায় সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য যেখানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হয়, সেখানে তাদের গাফিলতি ও অনিয়ম-দুর্নীতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

সর্বশেষ দেখা যাচ্ছে, গাফিলতি ও নানা অনিয়মের কারণে দেশের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্যাসক্ষেত্র তিতাস গভীর সংকটের মুখে পড়েছে। কম্প্রেসার না বসানোয় বছরে অন্তত ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হুমকির মুখে পড়েছে, যার বাজারমূল্য কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

জানা যায়, সময়মতো কম্প্রেসার বসাতে না পারার কারণে এমন আশঙ্কার মুখে পড়েছে গ্যাস উত্তোলনের বিষয়টি। আমরা মনে করি, যেখানে গ্যাস উত্তোলন কম হওয়ায় আমাদের অনেক কিছু চলছে না, অনেক কারখানা চালু করা যাচ্ছে না; সেখানে সম্ভাব্য গ্যাস উত্তোলনও কমে যাওয়া আশঙ্কার বিষয়। যে কোনো মূল্যে দ্রুত সমস্যা সমাধান করে গ্যাসের চাপ বাড়ানো ও উত্তোলন ত্বরান্বিত করার বিকল্প নেই।

আশঙ্কার বিষয়, তিতাসের লোকেশন-১-এর ৫টি কূপে গ্যাসের চাপ বা রিজার্ভার প্রেসার কমে যাওয়াকে সামনে রেখে ওয়েলহেড কম্প্রেসার বসানোর প্রকল্প নেয়া হলেও বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দরপত্রে সমস্যা হওয়ায় কাজটি থমকে যায়।

ফলে ৫টি কূপের গ্যাস উত্তোলন যে কোনো মুহূর্তে থেমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। টেকনোস্টিম এনার্জি নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানিকে কাজ দেয়ার কারণে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। ওই কোম্পানিটি মূলত ভুয়া কোম্পানি।

এর ব্যবহৃত ঠিকানার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, এমনকি কোম্পানিটির ওয়েবসাইট তৈরি করা হয় দরপত্রে অংশ নেয়ার পর। এসব কারণে নোয়া বা নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড দেয়ার ২৮ দিনের মধ্যেও কোম্পানিটি চুক্তি করতে পারেনি। জমা দিতে পারেনি দরপত্রের ১০ শতাংশ পারফরম্যান্স গ্যারান্টি (পিজি) মানিও।

কোম্পানিটির স্থানীয় এজেন্ট মজুমদার এন্টারপ্রাইজের প্রতারণার কারণে দরপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া সাড়ে ১২ কোটি টাকার বিডবন্ডটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়।

এ অবস্থায় নতুন করে টেন্ডার দিয়ে ওয়েলহেড কম্প্রেসার বসানোর কাজ সম্পূর্ণ করতে আরও দু’বছর লেগে যাওয়া ও গ্যাস উত্তোলনে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফলে বিজিএফসিএলের উচিত, দ্রুত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের পাশাপাশি যাদের কারণে এমন সংকট তৈরি হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

গ্যাস, কয়লা ও পাথরসহ যে কোনো প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় আমাদের দেশে অহরহ হচ্ছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও মধ্যপাড়া পাথর খনিতে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর বেশ পুরনো।

এর আগে নাইকোসহ নানা কোম্পানির দুর্নীতির কারণে আমাদের অনেক গ্যাস নষ্ট হয়েছে। সর্বশেষ তিতাসের একটি লোকশনের পাঁচটি কূপে সমস্যার খবর সামনে এলো। যখন নতুন নতুন গ্যাস আবিষ্কার ও উত্তোলনে জোর দেয়ার কথা, তখন বিদ্যমান কূপের জমা গ্যাস উত্তোলন হুমকির মুখে পড়ার ঘটনা অশনিসংকেত।

কিছু মানুষের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়, জাতিকে কষ্টের মধ্যে ফেলার মতো হীন পরিস্থিতি যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে অবিলম্বে। গ্যাসের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ঝুঁকিতে বিপুল গ্যাস উত্তোলন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

আপডেট টাইম : ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারি সম্পদ, জনগণের মালিকানাধীন প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের। অথচ ছোট আয়তনের দেশ হওয়ার কারণে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি সর্বজনস্বীকৃত।

এ অবস্থায় সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য যেখানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হয়, সেখানে তাদের গাফিলতি ও অনিয়ম-দুর্নীতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

সর্বশেষ দেখা যাচ্ছে, গাফিলতি ও নানা অনিয়মের কারণে দেশের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্যাসক্ষেত্র তিতাস গভীর সংকটের মুখে পড়েছে। কম্প্রেসার না বসানোয় বছরে অন্তত ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হুমকির মুখে পড়েছে, যার বাজারমূল্য কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

জানা যায়, সময়মতো কম্প্রেসার বসাতে না পারার কারণে এমন আশঙ্কার মুখে পড়েছে গ্যাস উত্তোলনের বিষয়টি। আমরা মনে করি, যেখানে গ্যাস উত্তোলন কম হওয়ায় আমাদের অনেক কিছু চলছে না, অনেক কারখানা চালু করা যাচ্ছে না; সেখানে সম্ভাব্য গ্যাস উত্তোলনও কমে যাওয়া আশঙ্কার বিষয়। যে কোনো মূল্যে দ্রুত সমস্যা সমাধান করে গ্যাসের চাপ বাড়ানো ও উত্তোলন ত্বরান্বিত করার বিকল্প নেই।

আশঙ্কার বিষয়, তিতাসের লোকেশন-১-এর ৫টি কূপে গ্যাসের চাপ বা রিজার্ভার প্রেসার কমে যাওয়াকে সামনে রেখে ওয়েলহেড কম্প্রেসার বসানোর প্রকল্প নেয়া হলেও বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দরপত্রে সমস্যা হওয়ায় কাজটি থমকে যায়।

ফলে ৫টি কূপের গ্যাস উত্তোলন যে কোনো মুহূর্তে থেমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। টেকনোস্টিম এনার্জি নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানিকে কাজ দেয়ার কারণে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। ওই কোম্পানিটি মূলত ভুয়া কোম্পানি।

এর ব্যবহৃত ঠিকানার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, এমনকি কোম্পানিটির ওয়েবসাইট তৈরি করা হয় দরপত্রে অংশ নেয়ার পর। এসব কারণে নোয়া বা নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড দেয়ার ২৮ দিনের মধ্যেও কোম্পানিটি চুক্তি করতে পারেনি। জমা দিতে পারেনি দরপত্রের ১০ শতাংশ পারফরম্যান্স গ্যারান্টি (পিজি) মানিও।

কোম্পানিটির স্থানীয় এজেন্ট মজুমদার এন্টারপ্রাইজের প্রতারণার কারণে দরপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া সাড়ে ১২ কোটি টাকার বিডবন্ডটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়।

এ অবস্থায় নতুন করে টেন্ডার দিয়ে ওয়েলহেড কম্প্রেসার বসানোর কাজ সম্পূর্ণ করতে আরও দু’বছর লেগে যাওয়া ও গ্যাস উত্তোলনে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফলে বিজিএফসিএলের উচিত, দ্রুত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের পাশাপাশি যাদের কারণে এমন সংকট তৈরি হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

গ্যাস, কয়লা ও পাথরসহ যে কোনো প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় আমাদের দেশে অহরহ হচ্ছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও মধ্যপাড়া পাথর খনিতে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর বেশ পুরনো।

এর আগে নাইকোসহ নানা কোম্পানির দুর্নীতির কারণে আমাদের অনেক গ্যাস নষ্ট হয়েছে। সর্বশেষ তিতাসের একটি লোকশনের পাঁচটি কূপে সমস্যার খবর সামনে এলো। যখন নতুন নতুন গ্যাস আবিষ্কার ও উত্তোলনে জোর দেয়ার কথা, তখন বিদ্যমান কূপের জমা গ্যাস উত্তোলন হুমকির মুখে পড়ার ঘটনা অশনিসংকেত।

কিছু মানুষের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়, জাতিকে কষ্টের মধ্যে ফেলার মতো হীন পরিস্থিতি যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে অবিলম্বে। গ্যাসের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।