ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যাসিনো এখন লঞ্চে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ এক বছর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানোর পর আরামবাগ ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনো বা জুয়ার আসর এখন স্থান করে নিয়েছে বিলাসবহুল লঞ্চে। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আরও জানা গেছে, ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িতদের অনেকে এখন এসব লঞ্চের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করছে। উল্লেখ্য, ঢাকার ক্লাবগুলোতে একসময় অন্তত ১৫ হাজার লোক ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাদের একটি বড় অংশ এখন আবার কোনো না কোনোভাবে জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মুখে পালিয়ে যাওয়া নেপালিরাও নাকি আবার ঢাকার জুয়ার আসরে সক্রিয় হয়েছে।

বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বলা যায়, রাজধানীর জুয়ার আসরটির স্থানান্তর ঘটেছে মাত্র, বন্ধ হয়ে যায়নি। তাহলে এত অভিযান, গ্রেফতার ও আইনি ব্যবস্থার সুফল কী?

গত বছর সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে, রাজধানীতে এসব জুয়ার আসর চালু ছিল অনেক আগে থেকেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের কাছে অন্তত ৫৬টি ক্যাসিনোর তালিকা থাকার কথা বলেছিলেন। বস্তুত রাজধানীর ক্যাসিনো কালচার দীর্ঘদিনের।

শুধু রেজিস্টার্ড ক্লাব নয়, রাজধানীর এখানে-সেখানে গড়ে উঠেছিল অনেক আন-রেজিস্টার্ড ক্লাব বা স্থাপনা, যেখানে জুয়ার আসর বসত। বেশকিছু ক্লাবের প্রচলিত জুয়ার আসরকে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণসজ্জিত করে ক্যাসিনোতে রূপান্তর করে একদল নেপালি। জুয়া চালাতে তাদের ভাড়া করে আনেন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিছু নেতা-কর্মী। নেপালিরা চুক্তির বিনিময়ে কাজ করলেও জুয়ার মূল টাকা যেত ওই নেতাদের পকেটে।

আর এসব চলত পুলিশের নাকের ডগাতেই- মতিঝিল থানা ওই এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে। শুধু তাই নয়, অভিযোগ ওঠে, জুয়ার কারবার নির্বিঘ্ন করত পুলিশ। রাতের বেলা জুয়ার আসরের সামনে নাকি পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত! বোঝা যাচ্ছে, ক্যাসিনো কর্মকাণ্ড এখনও বন্ধ হয়নি।

লঞ্চসহ বিভিন্ন স্থানে তা চালু রয়েছে। সেক্ষেত্রে জুয়াড়িরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে; নাকি ম্যানেজ করে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ক্যাসিনো লঞ্চগুলো কীভাবে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

বর্তমানে বিলাসবহুল লঞ্চ ছাড়াও রাজধানীর কয়েকটি এলাকার ফ্ল্যাটও নাকি মিনি ক্যাসিনোতে পরিণত হয়েছে। অনলাইনেও চলছে জুয়ার আসর। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবারও একটি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো উচিত বলে মনে করি আমরা। এসব কাজে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার। দৃষ্টান্ত হিসেবে গত বছরের ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত হওয়াও জরুরি।

সেসময় আটক কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিচার শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। তবে কারও কারও বিরুদ্ধে অসুস্থতার কথা বলে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করারও অভিযোগ আছে। সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, এটাই কাম্য।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্যাসিনো এখন লঞ্চে

আপডেট টাইম : ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ এক বছর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানোর পর আরামবাগ ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনো বা জুয়ার আসর এখন স্থান করে নিয়েছে বিলাসবহুল লঞ্চে। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আরও জানা গেছে, ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িতদের অনেকে এখন এসব লঞ্চের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করছে। উল্লেখ্য, ঢাকার ক্লাবগুলোতে একসময় অন্তত ১৫ হাজার লোক ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাদের একটি বড় অংশ এখন আবার কোনো না কোনোভাবে জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মুখে পালিয়ে যাওয়া নেপালিরাও নাকি আবার ঢাকার জুয়ার আসরে সক্রিয় হয়েছে।

বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বলা যায়, রাজধানীর জুয়ার আসরটির স্থানান্তর ঘটেছে মাত্র, বন্ধ হয়ে যায়নি। তাহলে এত অভিযান, গ্রেফতার ও আইনি ব্যবস্থার সুফল কী?

গত বছর সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে, রাজধানীতে এসব জুয়ার আসর চালু ছিল অনেক আগে থেকেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের কাছে অন্তত ৫৬টি ক্যাসিনোর তালিকা থাকার কথা বলেছিলেন। বস্তুত রাজধানীর ক্যাসিনো কালচার দীর্ঘদিনের।

শুধু রেজিস্টার্ড ক্লাব নয়, রাজধানীর এখানে-সেখানে গড়ে উঠেছিল অনেক আন-রেজিস্টার্ড ক্লাব বা স্থাপনা, যেখানে জুয়ার আসর বসত। বেশকিছু ক্লাবের প্রচলিত জুয়ার আসরকে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণসজ্জিত করে ক্যাসিনোতে রূপান্তর করে একদল নেপালি। জুয়া চালাতে তাদের ভাড়া করে আনেন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিছু নেতা-কর্মী। নেপালিরা চুক্তির বিনিময়ে কাজ করলেও জুয়ার মূল টাকা যেত ওই নেতাদের পকেটে।

আর এসব চলত পুলিশের নাকের ডগাতেই- মতিঝিল থানা ওই এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে। শুধু তাই নয়, অভিযোগ ওঠে, জুয়ার কারবার নির্বিঘ্ন করত পুলিশ। রাতের বেলা জুয়ার আসরের সামনে নাকি পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত! বোঝা যাচ্ছে, ক্যাসিনো কর্মকাণ্ড এখনও বন্ধ হয়নি।

লঞ্চসহ বিভিন্ন স্থানে তা চালু রয়েছে। সেক্ষেত্রে জুয়াড়িরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে; নাকি ম্যানেজ করে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ক্যাসিনো লঞ্চগুলো কীভাবে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

বর্তমানে বিলাসবহুল লঞ্চ ছাড়াও রাজধানীর কয়েকটি এলাকার ফ্ল্যাটও নাকি মিনি ক্যাসিনোতে পরিণত হয়েছে। অনলাইনেও চলছে জুয়ার আসর। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবারও একটি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো উচিত বলে মনে করি আমরা। এসব কাজে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার। দৃষ্টান্ত হিসেবে গত বছরের ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত হওয়াও জরুরি।

সেসময় আটক কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিচার শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। তবে কারও কারও বিরুদ্ধে অসুস্থতার কথা বলে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করারও অভিযোগ আছে। সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, এটাই কাম্য।