বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ দেশে ছোট-বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া যেন সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় যে কোনো মেগা প্রকল্প দুর্নীতিমুক্ত রাখতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মাতারবাড়িতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দেওয়া নিয়ে শুরুতেই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার কাজটি ১০০ ডলার মূলধনের দেশীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুর্নীতির কারণে দেশে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই কোম্পানিসহ তিন প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়া কনসোর্টিয়ামকে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এমন প্রতিষ্ঠানকে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটিই প্রশ্ন।
জানা গেছে, কনসোর্টিয়ামের সদস্য কোম্পানিগুলো হলো-জাপানি মারুবেনি করপোরেশন, সুইস ট্রেডিং ফার্ম ভিটল এবং স্থানীয় এজেন্ট পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল। এর মধ্যে বাংলাদেশি কোম্পানি পাওয়ারকোর পরিশোধিত মূলধন মাত্র ১০০ ডলার। এ কনসোর্টিয়ামের অপর সদস্য ভিটলের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুস দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ঘুস দেওয়ার অভিযোগে ভিটলকে সম্প্রতি দুটি দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়ে মারুবেনি দুর্নীতি করায় একবার জাইকা কর্তৃক কালো তালিকাভুক্তও হয়েছিল। এছাড়া এদের এ ধরনের কাজ করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতারও ঘাটতি আছে। প্রশ্ন হল, এত কিছুর পরও এ কনসোর্টিয়ামকে কেন বেছে নিয়েছে বিপিসি? অথচ এ মেগা প্রকল্পের কাজ পাওয়ার জন্য আরও ৩টি বিদেশি কোম্পানি তাদের আগ্রহপত্র জমা দিয়েছে বিপিসি’র কাছে।
ইতোমধ্যে বিপিসি অভিযুক্ত কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে এমওইউ (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) করার জন্য জ্বালানি বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। জাপান তার দেশীয় সংস্থা জাইকার মাধ্যমে এ প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। জাপানি কোনো প্রতিষ্ঠানকে লিড পার্টনার করে একটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল।
পছন্দের কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য দুর্নীতিবাজরা কী ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নেয়, এসব বারবার আলোচনায় আসে। কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে দুর্নীতি-অনিয়ম না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষভাবে তৎপর হতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান যথাযথ পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখলে দেশে দুর্নীতি-অনিয়ম কমে আসতে বাধ্য। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যা বলা বাহুল্য।