ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভিডিও করবেন, নাকি সাহায্য

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব; সব শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষকে। কিন্তু সব শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েও মানুষ চিরস্থায়ী নয়। পৃথিবীতে ক্ষণিকের অবস্থান তার। যেন ভ্রমণ করতে আসা। আর এই ভ্রমণের পরিসমাপ্তি হয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। অথচ এই সহজ সত্যকে আমরা সহজভাবে নিতে জানি না। আমরা আজ হিংসা, অহংকার আর স্বার্থ নিয়ে বেঁচে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সত্যি বলতে, আমরা এখন প্রত্যেকেই আমিত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। কেউ কষ্ট পাচ্ছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, কেউবা রাস্তায় পড়ে আছে মুমূর্ষু অবস্থায়। কিন্তু তাতে আমার-আপনার কী? হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে এখন এ প্রবণতাই কাজ করে। আমরা পথে কেউ দুর্ঘটনায় পড়লে এগিয়ে যাই না, পালিয়ে যাই। কেউ কাউকে কুপিয়ে মারলেও আমরা এগিয়ে যাই না, পালিয়ে যাই। তবে হ্যাঁ, পালিয়ে না গিয়েও অনেকে একটা কাজ করে থাকে। সেটা হচ্ছে লোকটার অসহায়ত্বের দৃশ্য ভিডিও করা, অথবা নিজের দুচোখ দিয়ে উপভোগ করা। বনানীতে আগুন লাগার দৃশ্যের কথা কি মনে আছে? অসহায় মানুষ পাগলের মতো বাঁচার চেষ্টা করছে। অথচ আমরা নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি। শুধু দেখেছি বললে ভুল হবে, আমরা ভিডিও করেছি। শুধু তাই নয়, আমরা ভিডিও করে সেটা আবার ফেসবুকেও দিয়েছি। এতে অনেক লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট পড়েছে। দিনশেষে নায়ক বনে গিয়েছি ফেসবুকে।

হ্যাঁ, এরকম ফেসবুকের নায়ক এ সমাজে অহরহ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মানুষের উপকার করে, মানুষের কষ্ট দেখলে এগিয়ে যায় এমন মানুষের সংখ্যা এখন খুবই কম। তারা সংখ্যালঘুদের চেয়েও সংখ্যালঘু। আজ আমরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে পছন্দ করি। এই স্বভাবটা কখন থেকে আমাদের প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা জানা নেই। তবে আমরা নিত্যদিন এমন দৃশ্য দেখতে পাই, যেখানে মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে অন্যের কষ্টের দৃশ্য দেখছে। এই তো সেদিনের ঘটনা। অফিসে যাচ্ছিলাম সিএনজিতে চড়ে। চট্টগ্রামের ঝাউতলা রেলগেট পার হয়ে যাচ্ছি, এমন সময় রাস্তায় দেখি মানুষ জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি অবশ্য দাঁড়াতে পারিনি। কারণ ড্রাইভার চলছিল তার আপন গতিতে। পরে খবর নিয়ে জানলাম, সেই স্থানে এক মোটরসাইকেল আরোহী অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। মানুষ তাকেই গোল হয়ে দেখছে। আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। ভাবছি এ কেমন মনুষ্যত্ব! কিন্তু সত্য এটাই।

আমাদের ভেতর এখন না আছে মানবতা, না আছে মনুষ্যত্ব। আমরা বাইরে শুধু মানুষের রূপ নিয়ে চলছি। কিন্তু এভাবে আর কত? মানুষ তো মানুষের জন্য। আপনি অন্যের জন্য মানবতা, মনুষ্যত্ব না দেখালে আপনার জন্যও কেউ দেখাবে-এমনটা আশা করতে পারেন না। আর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই স্বভাব ত্যাগ করে এগিয়ে যেতে হবে মানুষের বিপদে। নিজের চিন্তা নয়, অন্যের চিন্তা যে করে তার চিন্তা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা করবেন। তাই আসুন মানুষের পাশে দাঁড়াই, মানুষকে সহায়তা করি। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার স্বভাব ত্যাগ করি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ভিডিও করবেন, নাকি সাহায্য

আপডেট টাইম : ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ মার্চ ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব; সব শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষকে। কিন্তু সব শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েও মানুষ চিরস্থায়ী নয়। পৃথিবীতে ক্ষণিকের অবস্থান তার। যেন ভ্রমণ করতে আসা। আর এই ভ্রমণের পরিসমাপ্তি হয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। অথচ এই সহজ সত্যকে আমরা সহজভাবে নিতে জানি না। আমরা আজ হিংসা, অহংকার আর স্বার্থ নিয়ে বেঁচে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সত্যি বলতে, আমরা এখন প্রত্যেকেই আমিত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। কেউ কষ্ট পাচ্ছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, কেউবা রাস্তায় পড়ে আছে মুমূর্ষু অবস্থায়। কিন্তু তাতে আমার-আপনার কী? হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে এখন এ প্রবণতাই কাজ করে। আমরা পথে কেউ দুর্ঘটনায় পড়লে এগিয়ে যাই না, পালিয়ে যাই। কেউ কাউকে কুপিয়ে মারলেও আমরা এগিয়ে যাই না, পালিয়ে যাই। তবে হ্যাঁ, পালিয়ে না গিয়েও অনেকে একটা কাজ করে থাকে। সেটা হচ্ছে লোকটার অসহায়ত্বের দৃশ্য ভিডিও করা, অথবা নিজের দুচোখ দিয়ে উপভোগ করা। বনানীতে আগুন লাগার দৃশ্যের কথা কি মনে আছে? অসহায় মানুষ পাগলের মতো বাঁচার চেষ্টা করছে। অথচ আমরা নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি। শুধু দেখেছি বললে ভুল হবে, আমরা ভিডিও করেছি। শুধু তাই নয়, আমরা ভিডিও করে সেটা আবার ফেসবুকেও দিয়েছি। এতে অনেক লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট পড়েছে। দিনশেষে নায়ক বনে গিয়েছি ফেসবুকে।

হ্যাঁ, এরকম ফেসবুকের নায়ক এ সমাজে অহরহ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মানুষের উপকার করে, মানুষের কষ্ট দেখলে এগিয়ে যায় এমন মানুষের সংখ্যা এখন খুবই কম। তারা সংখ্যালঘুদের চেয়েও সংখ্যালঘু। আজ আমরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে পছন্দ করি। এই স্বভাবটা কখন থেকে আমাদের প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা জানা নেই। তবে আমরা নিত্যদিন এমন দৃশ্য দেখতে পাই, যেখানে মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে অন্যের কষ্টের দৃশ্য দেখছে। এই তো সেদিনের ঘটনা। অফিসে যাচ্ছিলাম সিএনজিতে চড়ে। চট্টগ্রামের ঝাউতলা রেলগেট পার হয়ে যাচ্ছি, এমন সময় রাস্তায় দেখি মানুষ জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি অবশ্য দাঁড়াতে পারিনি। কারণ ড্রাইভার চলছিল তার আপন গতিতে। পরে খবর নিয়ে জানলাম, সেই স্থানে এক মোটরসাইকেল আরোহী অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। মানুষ তাকেই গোল হয়ে দেখছে। আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। ভাবছি এ কেমন মনুষ্যত্ব! কিন্তু সত্য এটাই।

আমাদের ভেতর এখন না আছে মানবতা, না আছে মনুষ্যত্ব। আমরা বাইরে শুধু মানুষের রূপ নিয়ে চলছি। কিন্তু এভাবে আর কত? মানুষ তো মানুষের জন্য। আপনি অন্যের জন্য মানবতা, মনুষ্যত্ব না দেখালে আপনার জন্যও কেউ দেখাবে-এমনটা আশা করতে পারেন না। আর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই স্বভাব ত্যাগ করে এগিয়ে যেতে হবে মানুষের বিপদে। নিজের চিন্তা নয়, অন্যের চিন্তা যে করে তার চিন্তা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা করবেন। তাই আসুন মানুষের পাশে দাঁড়াই, মানুষকে সহায়তা করি। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার স্বভাব ত্যাগ করি।