ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইলিশে আশার আলো

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  গত চারদশকে পদ্মাসহ দেশের প্রধান নদনদীগুলোর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় হাজার হাজার মাইল নৌপথ বিলুপ্ত হলেও রূপালি ইলিশের উৎপাদন এ সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুন হয়েছে। দেশের জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে এ সময়ে খাদ্য উৎপাদনও দ্বিগুন হয়েছে। তবে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে ধারাবাহিকভাবে সরকারের কিছু সময়োপযোগি উদ্যোগ। বিশেষত: জাটকা নিধন রোধ এবং মাছের প্রজননকালে মা মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারির সুফল পাওয়া যাচ্ছে। জাটকা ও মাছধরা নিষিদ্ধের সময় কর্মহীন জেলেদের জন্য সরকারের বিশেষ সহায়তা প্রকল্প গ্রহণ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভ’মিকা পালন করেছে। মাত্র দুই দশক আগেও যেখানে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল প্রায় ২ লাখ টন। সরকারী উদ্যোগগুলোর সুফল হিসেবে গত মওসুমে প্রায় ৪ লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। এক দশকের বেশী কাল ধরে ইলিশ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি শতকরা প্রায় ১০ ভাগ। পদ্মার উজানে গঙ্গায় ভারতের ফারাক্কা বাঁধ না থাকলে ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পেত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। দেশে মাছ ও প্রাণীজ প্রোটিনের চাহিদার এক বিশাল অংশই এককভাবে ইলিশের মাধ্যমে পূরণ হয়। প্রায় ২ লাখ জেলের কর্মসংস্থানসহ জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের অবদান প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। দেশের বিপুল চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ইলিশ রফতানী থেকে বছরে জিডিপিতে সরাসরি যোগ হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
ইলিশ মাছ ভারতসহ বিশ্বের আরো অনেক দেশেই উৎপাদিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের জুড়ি মেলা ভার। পদ্মার ইলিশের স্বাদ, গন্ধ ও সৌন্দর্যের কারণেই সারাবিশ্বে এর বিপুল চাহিদা রয়েছে। এ কারণেই পদ্মার(চাঁদপুরের) ইলিশ আমাদের অন্যতম ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য। ইলিশের উৎপাদন যতই বাড়ছে আভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে বাজারমূল্যও। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অন্যসব মাছের চেয়ে ইলিশের মূল্য কয়েকগুণ বেশী। জাটকা সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে ইলিশের উৎপাদন যেমন বাড়ছে সেই সাথে ইলিশের আকার আকৃতিও বাড়ছে। যদিও সাধারণ মানুষের পক্ষে বড় সাইজের ইলিশ মাছ কেনা অনেকটাই দু:সাধ্য। জাটকা সংরক্ষণে গৃহীত নানা উদ্যোগের পরও মওসুমে হাজার হাজার টন জাটকা ধরার খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের প্রজনন সহায়ক উদ্যোগগুলো আরো যথার্থভাবে বাস্তবায়িত হলে বড় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে সমুদ্রপথে ইলিশ পাচার ও অবৈধ চোরাচালান বন্ধ করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
‘মাছচাষে গড়বো দেশ বদলে দেব বাংলাদেশ’ শ্লোগান নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৭। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ চলার সময় আগামী ২২ জুলাই অমাবস্যার ‘ভরা জো’ তে নদী মোহনা ও সমুদ্রোপক’লে ব্যাপক ইলিশ ধরা পড়ার আশা করছে জেলে ও আড়তদাররা। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সরকারী উদ্যোগের ধারাবাহিকতা রক্ষার সুফল হিসেবেই দেড় দশকে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুন হয়েছে। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও কঠোর নির্দেশনা এবং মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ ও নজরদারির ফলেই এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আরো শতভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা অসম্ভব নয়। দেশে মাছের চাহিদার জোগান নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমাদের মৎস্য উৎপাদকরা বছরে কয়েকশ মিলিয়ন ডলারের মাছ রফতানী করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে শতকোটি মানুষের দেশ চীন বছরে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের মাছ বিশ্ববাজারে রফতানী করে শীর্ষ স্থান অধিকার করে আছে, একইভাবে ভারতও বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের মাছ রফতানী করছে, সেখানে বাংলাদেশে নদনদী ও সমুদ্রোপকুলের মৎস্য সম্পদ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মাছ রফতানী সম্ভব। মৎস্য সংরক্ষণ ও আহরণের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনার পাশাপাশি উপক’লীয় জেলেদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ নৌদস্যুতা থেকে রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সমুদ্রপথে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইলিশের চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। জাতীয় মাছ ইলিশের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং ও রফতানী বাণিজ্য থেকে যেমন দেশের জন্য আরো হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে নৌদস্যুতা, ডাকাতি ও চোরাচালান বন্ধের মাধ্যমে ইলিশের স্বাদ সাধারণ মানুষের কাছে আরো সহজলভ্য করা সম্ভব। সমুদ্রোপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের নিরাপত্তা ও মৎস্যসম্পদ আহরণ নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টহল ও নজরদারি আরো জোরদার করা আবশ্যক। ইলিশ ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সরকার আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ইলিশে আশার আলো

আপডেট টাইম : ০১:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  গত চারদশকে পদ্মাসহ দেশের প্রধান নদনদীগুলোর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় হাজার হাজার মাইল নৌপথ বিলুপ্ত হলেও রূপালি ইলিশের উৎপাদন এ সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুন হয়েছে। দেশের জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে এ সময়ে খাদ্য উৎপাদনও দ্বিগুন হয়েছে। তবে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে ধারাবাহিকভাবে সরকারের কিছু সময়োপযোগি উদ্যোগ। বিশেষত: জাটকা নিধন রোধ এবং মাছের প্রজননকালে মা মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারির সুফল পাওয়া যাচ্ছে। জাটকা ও মাছধরা নিষিদ্ধের সময় কর্মহীন জেলেদের জন্য সরকারের বিশেষ সহায়তা প্রকল্প গ্রহণ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভ’মিকা পালন করেছে। মাত্র দুই দশক আগেও যেখানে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল প্রায় ২ লাখ টন। সরকারী উদ্যোগগুলোর সুফল হিসেবে গত মওসুমে প্রায় ৪ লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। এক দশকের বেশী কাল ধরে ইলিশ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি শতকরা প্রায় ১০ ভাগ। পদ্মার উজানে গঙ্গায় ভারতের ফারাক্কা বাঁধ না থাকলে ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পেত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। দেশে মাছ ও প্রাণীজ প্রোটিনের চাহিদার এক বিশাল অংশই এককভাবে ইলিশের মাধ্যমে পূরণ হয়। প্রায় ২ লাখ জেলের কর্মসংস্থানসহ জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের অবদান প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। দেশের বিপুল চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ইলিশ রফতানী থেকে বছরে জিডিপিতে সরাসরি যোগ হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
ইলিশ মাছ ভারতসহ বিশ্বের আরো অনেক দেশেই উৎপাদিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের জুড়ি মেলা ভার। পদ্মার ইলিশের স্বাদ, গন্ধ ও সৌন্দর্যের কারণেই সারাবিশ্বে এর বিপুল চাহিদা রয়েছে। এ কারণেই পদ্মার(চাঁদপুরের) ইলিশ আমাদের অন্যতম ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য। ইলিশের উৎপাদন যতই বাড়ছে আভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে বাজারমূল্যও। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অন্যসব মাছের চেয়ে ইলিশের মূল্য কয়েকগুণ বেশী। জাটকা সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে ইলিশের উৎপাদন যেমন বাড়ছে সেই সাথে ইলিশের আকার আকৃতিও বাড়ছে। যদিও সাধারণ মানুষের পক্ষে বড় সাইজের ইলিশ মাছ কেনা অনেকটাই দু:সাধ্য। জাটকা সংরক্ষণে গৃহীত নানা উদ্যোগের পরও মওসুমে হাজার হাজার টন জাটকা ধরার খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের প্রজনন সহায়ক উদ্যোগগুলো আরো যথার্থভাবে বাস্তবায়িত হলে বড় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে সমুদ্রপথে ইলিশ পাচার ও অবৈধ চোরাচালান বন্ধ করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
‘মাছচাষে গড়বো দেশ বদলে দেব বাংলাদেশ’ শ্লোগান নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৭। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ চলার সময় আগামী ২২ জুলাই অমাবস্যার ‘ভরা জো’ তে নদী মোহনা ও সমুদ্রোপক’লে ব্যাপক ইলিশ ধরা পড়ার আশা করছে জেলে ও আড়তদাররা। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সরকারী উদ্যোগের ধারাবাহিকতা রক্ষার সুফল হিসেবেই দেড় দশকে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুন হয়েছে। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও কঠোর নির্দেশনা এবং মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ ও নজরদারির ফলেই এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আরো শতভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা অসম্ভব নয়। দেশে মাছের চাহিদার জোগান নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমাদের মৎস্য উৎপাদকরা বছরে কয়েকশ মিলিয়ন ডলারের মাছ রফতানী করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে শতকোটি মানুষের দেশ চীন বছরে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের মাছ বিশ্ববাজারে রফতানী করে শীর্ষ স্থান অধিকার করে আছে, একইভাবে ভারতও বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের মাছ রফতানী করছে, সেখানে বাংলাদেশে নদনদী ও সমুদ্রোপকুলের মৎস্য সম্পদ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মাছ রফতানী সম্ভব। মৎস্য সংরক্ষণ ও আহরণের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনার পাশাপাশি উপক’লীয় জেলেদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ নৌদস্যুতা থেকে রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সমুদ্রপথে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইলিশের চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। জাতীয় মাছ ইলিশের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং ও রফতানী বাণিজ্য থেকে যেমন দেশের জন্য আরো হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে নৌদস্যুতা, ডাকাতি ও চোরাচালান বন্ধের মাধ্যমে ইলিশের স্বাদ সাধারণ মানুষের কাছে আরো সহজলভ্য করা সম্ভব। সমুদ্রোপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের নিরাপত্তা ও মৎস্যসম্পদ আহরণ নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টহল ও নজরদারি আরো জোরদার করা আবশ্যক। ইলিশ ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সরকার আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।