ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই জলাবদ্ধতার শেষ কোথায় আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খুব ভারি বর্ষণের প্রয়োজন হয় না, সামান্য বৃষ্টিতেও এখন ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী অচল হয়ে যায়। রাস্তায় থাকে কোমর সমান পানি। ঘরবাড়ি, দোকানপাটে পানি ঢুকে যায়। সেই সঙ্গে দীর্ঘ যানজট তো আছেই। মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আগে কী বলেছিলেন, তা বেমালুম ভুলে গিয়ে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে এমন সব কথা বলেন, যা ভুক্তভোগীদের সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে আরো হতাশ করে। শুধু দুই মহানগরই নয়, এভাবে চলতে থাকলে দেশের প্রায় সব বড় শহরই নিকট ভবিষ্যতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতার জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় অপর্যাপ্ত নিষ্কাশনব্যবস্থাকে। সংস্কারের অভাবে ড্রেনগুলো দিয়ে পানি নামতে পারে না। খালগুলো ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। আগের মতো জলাভূমি নেই। কিছু এলাকায় খাল ভরাট করে বক্স কালভার্ট বানানো হয়েছে। এখন সেগুলো ময়লায় ঠাসা। খালও গেছে, বক্স কালভার্ট দিয়েও পানি নামতে পারছে না। এমন আরো অনেক কারণে জলাবদ্ধতা যেন নিয়তি হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেয় নানা ধরনের উন্নয়নকাজ। গ্যাস, বিদ্যুৎ বা ড্রেন মেরামতের নামে বর্ষা এলেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। রাস্তায় তৈরি হয় অসংখ্য গর্ত। জলাবদ্ধতার সময় এসব গর্তে পড়ে বহু মানুষ আঘাত পায়, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।

ঢাকার খালগুলোর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ওয়াসা। দুর্নীতির আখড়া হিসেবে খ্যাত এই সংস্থাটির কাছে নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়টি ন্যূনতম গুরুত্ব পায় বলে মনে হয় না। রাজধানীর খাল উদ্ধারের নামে চলে প্রহসন। অতীতে দেখা গেছে, খাল দখলমুক্ত করার নামে তারা কিছু স্থাপনা ভেঙে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ খালেই পড়ে থেকে খাল ভরাট প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে। আবার এটাও সত্য, সিটি করপোরেশনগুলোর কঠিন বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়ায় ঘাটতি রয়েছে। যেখানে-সেখানে ময়লা জমে স্তূপ হয়ে থাকে। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে সেগুলো খালে বা ড্রেনে গিয়ে জমা হয়। পানি নিষ্কাশন মুখ থুবড়ে পড়ে। অথচ সময়মতো এ কাজগুলো সঠিকভাবে করা হলে সংশ্লিষ্টদের এখন এত অর্থহীন কথা বলার প্রয়োজন হতো না।

নগরীর জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অপরিকল্পনার ফসল। এক দিনে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। উন্নয়নকাজগুলোর সমন্বয় করতে হবে এবং জবাবদিহি বাড়াতে হবে। সড়ক নষ্ট করে অনির্দিষ্টকাল ধরে কোনো উন্নয়নকাজ চলতে পারে না। খালগুলোকে দ্রুত দখলমুক্ত ও নাব্য করে তুলতে হবে। ড্রেনগুলো নিয়মিত সংস্কার ও পরিষ্কার করতে হবে। বক্স কালভার্ট ও স্টর্ম স্যুয়ারেজব্যবস্থা চালু করতে হবে। স্লুইস গেটগুলো কার্যকর রাখতে হবে। এসব কাজের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো খননের মাধ্যমে নাব্য রাখতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

এই জলাবদ্ধতার শেষ কোথায় আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে

আপডেট টাইম : ০১:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খুব ভারি বর্ষণের প্রয়োজন হয় না, সামান্য বৃষ্টিতেও এখন ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী অচল হয়ে যায়। রাস্তায় থাকে কোমর সমান পানি। ঘরবাড়ি, দোকানপাটে পানি ঢুকে যায়। সেই সঙ্গে দীর্ঘ যানজট তো আছেই। মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আগে কী বলেছিলেন, তা বেমালুম ভুলে গিয়ে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে এমন সব কথা বলেন, যা ভুক্তভোগীদের সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে আরো হতাশ করে। শুধু দুই মহানগরই নয়, এভাবে চলতে থাকলে দেশের প্রায় সব বড় শহরই নিকট ভবিষ্যতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতার জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় অপর্যাপ্ত নিষ্কাশনব্যবস্থাকে। সংস্কারের অভাবে ড্রেনগুলো দিয়ে পানি নামতে পারে না। খালগুলো ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। আগের মতো জলাভূমি নেই। কিছু এলাকায় খাল ভরাট করে বক্স কালভার্ট বানানো হয়েছে। এখন সেগুলো ময়লায় ঠাসা। খালও গেছে, বক্স কালভার্ট দিয়েও পানি নামতে পারছে না। এমন আরো অনেক কারণে জলাবদ্ধতা যেন নিয়তি হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেয় নানা ধরনের উন্নয়নকাজ। গ্যাস, বিদ্যুৎ বা ড্রেন মেরামতের নামে বর্ষা এলেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। রাস্তায় তৈরি হয় অসংখ্য গর্ত। জলাবদ্ধতার সময় এসব গর্তে পড়ে বহু মানুষ আঘাত পায়, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।

ঢাকার খালগুলোর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ওয়াসা। দুর্নীতির আখড়া হিসেবে খ্যাত এই সংস্থাটির কাছে নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়টি ন্যূনতম গুরুত্ব পায় বলে মনে হয় না। রাজধানীর খাল উদ্ধারের নামে চলে প্রহসন। অতীতে দেখা গেছে, খাল দখলমুক্ত করার নামে তারা কিছু স্থাপনা ভেঙে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ খালেই পড়ে থেকে খাল ভরাট প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে। আবার এটাও সত্য, সিটি করপোরেশনগুলোর কঠিন বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়ায় ঘাটতি রয়েছে। যেখানে-সেখানে ময়লা জমে স্তূপ হয়ে থাকে। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে সেগুলো খালে বা ড্রেনে গিয়ে জমা হয়। পানি নিষ্কাশন মুখ থুবড়ে পড়ে। অথচ সময়মতো এ কাজগুলো সঠিকভাবে করা হলে সংশ্লিষ্টদের এখন এত অর্থহীন কথা বলার প্রয়োজন হতো না।

নগরীর জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অপরিকল্পনার ফসল। এক দিনে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। উন্নয়নকাজগুলোর সমন্বয় করতে হবে এবং জবাবদিহি বাড়াতে হবে। সড়ক নষ্ট করে অনির্দিষ্টকাল ধরে কোনো উন্নয়নকাজ চলতে পারে না। খালগুলোকে দ্রুত দখলমুক্ত ও নাব্য করে তুলতে হবে। ড্রেনগুলো নিয়মিত সংস্কার ও পরিষ্কার করতে হবে। বক্স কালভার্ট ও স্টর্ম স্যুয়ারেজব্যবস্থা চালু করতে হবে। স্লুইস গেটগুলো কার্যকর রাখতে হবে। এসব কাজের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো খননের মাধ্যমে নাব্য রাখতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে।