ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জঘন্য হত্যার রাজনীতি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ১৭ বছর আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই মামলায় বিচারিক আদালত গতকাল রায় ঘোষণা করেছেন। ১০ জনকে ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রাণদণ্ড কার্যকর এবং ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দেরিতে হলেও এই রায় বিচারে বিশ্বাসী মানুষকে সন্তুষ্ট করেছে।

বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এটি আজ স্পষ্ট যে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের কিছু নব্য দোসর। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে কয়েকজন খুনির শাস্তি হলেও পরিকল্পনাকারী ও মদদদানকারীরা রয়ে গেছে দৃষ্টির আড়ালে। সর্বোচ্চ আদালতও তা স্বীকার করেছেন এবং তার জন্য তদন্তের দুর্বলতাকেই দায়ী করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও হামলা করা হয়। প্রতিবারই তিনি আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাণে বেঁচে যান। সেই ধারাবাহিকতারই একটি জঘন্য প্রকাশ ঘটেছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট।

অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর জনসভায় গ্রেনেড, বোমা ও বন্দুক নিয়ে হামলা চালানো হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন এবং আহত হন দুই শতাধিক নেতাকর্মী।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের যুদ্ধ শেষ করলেও পরাজিত পাকিস্তান, তাদের মিত্র ও এ দেশীয় দোসররা কখনো থেমে থাকেনি। তারা স্বাধীন দেশটির বিরুদ্ধে ও স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সারা দেশে কয়েক শ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চূড়ান্ত আঘাত হেনেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুকে নির্বংশ করার লক্ষ্যে তাঁর শিশুসন্তানকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তাঁর দুই কন্যা। এরপর তাঁদেরও হত্যা করার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র চলে। ২১ আগস্টের হামলার পেছনে যে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর সমর্থন ছিল, তা স্পষ্ট হয় তৎকালীন মন্ত্রীদের বিভিন্ন বক্তব্যে এবং প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। একাধিক মন্ত্রী এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেছিলেন। কেউ কেউ এমনও বলেছিলেন, শেখ হাসিনাই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। অবিস্ফোরিত গ্রেনেডসহ হামলার আলামত দ্রুত নষ্ট করা হয়েছিল। বিচার ও তদন্তের নামে প্রহসন করা হয়েছিল, জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল—দেশবাসীর সেগুলো অজানা নয়। তাই এই হামলায় যারা অংশ নিয়েছিল, শুধু তাদের বিচার করলেই হবে না, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হামলার পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদেরও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শোকাবহ ২১ আগস্টে আমরা হতাহতদের ত্যাগকে স্মরণ করছি এবং দ্রুত এই জঘন্য হামলার পরিপূর্ণ বিচার দাবি করছি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

জঘন্য হত্যার রাজনীতি

আপডেট টাইম : ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ১৭ বছর আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই মামলায় বিচারিক আদালত গতকাল রায় ঘোষণা করেছেন। ১০ জনকে ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রাণদণ্ড কার্যকর এবং ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দেরিতে হলেও এই রায় বিচারে বিশ্বাসী মানুষকে সন্তুষ্ট করেছে।

বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এটি আজ স্পষ্ট যে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের কিছু নব্য দোসর। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে কয়েকজন খুনির শাস্তি হলেও পরিকল্পনাকারী ও মদদদানকারীরা রয়ে গেছে দৃষ্টির আড়ালে। সর্বোচ্চ আদালতও তা স্বীকার করেছেন এবং তার জন্য তদন্তের দুর্বলতাকেই দায়ী করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও হামলা করা হয়। প্রতিবারই তিনি আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাণে বেঁচে যান। সেই ধারাবাহিকতারই একটি জঘন্য প্রকাশ ঘটেছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট।

অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর জনসভায় গ্রেনেড, বোমা ও বন্দুক নিয়ে হামলা চালানো হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন এবং আহত হন দুই শতাধিক নেতাকর্মী।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের যুদ্ধ শেষ করলেও পরাজিত পাকিস্তান, তাদের মিত্র ও এ দেশীয় দোসররা কখনো থেমে থাকেনি। তারা স্বাধীন দেশটির বিরুদ্ধে ও স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সারা দেশে কয়েক শ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চূড়ান্ত আঘাত হেনেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুকে নির্বংশ করার লক্ষ্যে তাঁর শিশুসন্তানকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তাঁর দুই কন্যা। এরপর তাঁদেরও হত্যা করার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র চলে। ২১ আগস্টের হামলার পেছনে যে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর সমর্থন ছিল, তা স্পষ্ট হয় তৎকালীন মন্ত্রীদের বিভিন্ন বক্তব্যে এবং প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। একাধিক মন্ত্রী এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেছিলেন। কেউ কেউ এমনও বলেছিলেন, শেখ হাসিনাই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। অবিস্ফোরিত গ্রেনেডসহ হামলার আলামত দ্রুত নষ্ট করা হয়েছিল। বিচার ও তদন্তের নামে প্রহসন করা হয়েছিল, জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল—দেশবাসীর সেগুলো অজানা নয়। তাই এই হামলায় যারা অংশ নিয়েছিল, শুধু তাদের বিচার করলেই হবে না, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হামলার পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদেরও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শোকাবহ ২১ আগস্টে আমরা হতাহতদের ত্যাগকে স্মরণ করছি এবং দ্রুত এই জঘন্য হামলার পরিপূর্ণ বিচার দাবি করছি।