ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৃজনশীল শিক্ষণ পদ্ধতি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল করে তোলার উদ্দেশ্যেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয়েছিল। এর আগে যে ধারা চালু ছিল তাতে একজন ছাত্র বা ছাত্রী কতটুকু সৃজনশীল তা বোঝার উপায় ছিল না। তারা গতানুগতিক কিছু প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে আসত। এতে তাদের মুখস্থবিদ্যার বহিঃপ্রকাশ ঘটত। কিন্তু কোনো বিষয় তারা নিজের মতো বোঝে কি না তা জানা যেত না। ওই বিষয়ে তাদের উপলব্ধির পরিমাপ করা সম্ভব হতো না। অর্থাৎ পঠিত কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরপত্রে তারা যা লিখত তাতে নিজস্বতা রয়েছে কি না বোঝা যেত না। মুখস্থ করে কোনো বিষয়ে ভালো ফল অর্জন ওই বিষয়ে পারদর্শিতার মাপকাঠি নয়। সুশিক্ষা মানে পারদর্শী হওয়া, সৃজনশীল হওয়া। ছাত্র-ছাত্রীদের সুশিক্ষিত করার উদ্দেশ্যেই সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল ২০০৯ সালে।

শিক্ষার মান বাড়ানো ও ছাত্র-ছাত্রীদের পারদর্শী করে তোলার জন্য প্রবর্তিত এ পদ্ধতির কাঙ্ক্ষিত ফল এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষাবিষয়ক সেমিনারে, গণমাধ্যমের আলোচনা-নিবন্ধে ও সাময়িকীর প্রবন্ধে অনেক কথাই বলা হয়েছে। প্রায় সবার অভিমত, পদ্ধতিটি যথাযথভাবে কাজ করছে না। আর এর জন্য মূলত শিক্ষকদের অনোপলব্ধিই দায়ী। তাঁদের  অনেকেই এ পদ্ধতি ঠিকমতো বোঝেন না। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝাতে পারেন না।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের একাডেমিক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এসব অভিযোগের সত্যতাই প্রমাণিত হয়েছে। দেশে ১৮ হাজার ৫৯৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। গত মে মাসে ছয় হাজার ৬৭৬টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫২.০৫ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এখনো সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝেন না। ৩০.৮৯ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় প্রশ্ন তৈরি করেন। আর শিক্ষক সমিতি থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করেন ২১.১৭ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সবচেয়ে পিছিয়ে বরিশাল অঞ্চল। এ বিভাগের ৭৯.২৪ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন না। সবচেয়ে এগিয়ে কুমিল্লা অঞ্চল। সেখানকার ৭২.৯২ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন। ঢাকার ৫২.৫১ শতাংশ, ময়মনসিংহের ৭৬.৫৫, সিলেটের ২৮.১৪, চট্টগ্রামের ৫০.৯৪, রংপুরের ৫০.৫২, রাজশাহীর ৪৬.৫৬ ও খুলনার ৩৫.১২ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন না।

ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল করে তোলার মুখ্য দায়িত্ব শিক্ষকদের। তাঁরা সৃজনশীল পদ্ধতি না বুঝলে সে অনুযায়ী পাঠদান সম্ভব নয়। আর সেটি না হলে ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ সম্ভব নয়। এ কারণেই কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষাবিদরা, অভিভাবকরা এ কথাই বলে আসছেন। বিষয়টি সুখকর নয়। প্রশিক্ষণের ঘাটতি থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি সারতে হবে। পদ্ধতির সফলতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

সৃজনশীল শিক্ষণ পদ্ধতি

আপডেট টাইম : ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল করে তোলার উদ্দেশ্যেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয়েছিল। এর আগে যে ধারা চালু ছিল তাতে একজন ছাত্র বা ছাত্রী কতটুকু সৃজনশীল তা বোঝার উপায় ছিল না। তারা গতানুগতিক কিছু প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে আসত। এতে তাদের মুখস্থবিদ্যার বহিঃপ্রকাশ ঘটত। কিন্তু কোনো বিষয় তারা নিজের মতো বোঝে কি না তা জানা যেত না। ওই বিষয়ে তাদের উপলব্ধির পরিমাপ করা সম্ভব হতো না। অর্থাৎ পঠিত কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরপত্রে তারা যা লিখত তাতে নিজস্বতা রয়েছে কি না বোঝা যেত না। মুখস্থ করে কোনো বিষয়ে ভালো ফল অর্জন ওই বিষয়ে পারদর্শিতার মাপকাঠি নয়। সুশিক্ষা মানে পারদর্শী হওয়া, সৃজনশীল হওয়া। ছাত্র-ছাত্রীদের সুশিক্ষিত করার উদ্দেশ্যেই সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল ২০০৯ সালে।

শিক্ষার মান বাড়ানো ও ছাত্র-ছাত্রীদের পারদর্শী করে তোলার জন্য প্রবর্তিত এ পদ্ধতির কাঙ্ক্ষিত ফল এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষাবিষয়ক সেমিনারে, গণমাধ্যমের আলোচনা-নিবন্ধে ও সাময়িকীর প্রবন্ধে অনেক কথাই বলা হয়েছে। প্রায় সবার অভিমত, পদ্ধতিটি যথাযথভাবে কাজ করছে না। আর এর জন্য মূলত শিক্ষকদের অনোপলব্ধিই দায়ী। তাঁদের  অনেকেই এ পদ্ধতি ঠিকমতো বোঝেন না। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝাতে পারেন না।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের একাডেমিক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এসব অভিযোগের সত্যতাই প্রমাণিত হয়েছে। দেশে ১৮ হাজার ৫৯৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। গত মে মাসে ছয় হাজার ৬৭৬টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫২.০৫ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এখনো সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝেন না। ৩০.৮৯ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় প্রশ্ন তৈরি করেন। আর শিক্ষক সমিতি থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করেন ২১.১৭ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সবচেয়ে পিছিয়ে বরিশাল অঞ্চল। এ বিভাগের ৭৯.২৪ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন না। সবচেয়ে এগিয়ে কুমিল্লা অঞ্চল। সেখানকার ৭২.৯২ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন। ঢাকার ৫২.৫১ শতাংশ, ময়মনসিংহের ৭৬.৫৫, সিলেটের ২৮.১৪, চট্টগ্রামের ৫০.৯৪, রংপুরের ৫০.৫২, রাজশাহীর ৪৬.৫৬ ও খুলনার ৩৫.১২ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন না।

ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল করে তোলার মুখ্য দায়িত্ব শিক্ষকদের। তাঁরা সৃজনশীল পদ্ধতি না বুঝলে সে অনুযায়ী পাঠদান সম্ভব নয়। আর সেটি না হলে ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ সম্ভব নয়। এ কারণেই কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষাবিদরা, অভিভাবকরা এ কথাই বলে আসছেন। বিষয়টি সুখকর নয়। প্রশিক্ষণের ঘাটতি থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি সারতে হবে। পদ্ধতির সফলতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।