ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমদানির প্রভাব নেই বাজারে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খাদ্য সংকট এড়াতে ও চালের বাজার সহনীয় রাখতে আমদানিতে সরকার শুল্ক কমিয়ে আনার পর সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়েই চাল আমদানি বেড়েছে। এর পাশাপাশি শূন্য মার্জিনে চাল আমদানির সুযোগও দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এর ফলে গত দুই মাসেই চাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব ঋণপত্রের বিপরীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল দেশে এসেছেও। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী জুনের আগ পর্যন্ত কয়েক মাস ধরে প্রতি মাসে গড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ কোটি টাকার চাল আমদানি হতো দেশে। এরপর বাড়তে থাকে আমদানির পরিমাণ। জুনেই চাল আমদানির এলসি খোলা হয় এক হাজার ৪৬৭ কোটি টাকার। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে চাল আমদানির জন্য ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১২৫.৩৭ শতাংশ বেশি। জুলাই মাসে চাল আমদানির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে সাত কোটি ১২ লাখ ডলারের, যা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৫৩.১৬ শতাংশ বেশি। এলসি নিষ্পত্তির পর দুই মাসে দেশে প্রবেশ করেছে প্রায় দেড় লাখ টন চাল।

সরকার শুল্ক কমিয়ে আনার পর প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হচ্ছে বাংলাদেশে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫১ দিনে মোট তিন লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় তিন গুণ। বাকি চাল আমদানির পর্যায়ে থাকলেও এর প্রভাব নেই বাজারে। চলতি বছরের শুরু থেকে চালের দাম নিয়ে চাপে রয়েছে ক্রেতারা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবারও ঢাকার বাজারে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায়। আর ভালো মানের চালে কেজিতে ৫৮ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে। টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে এক টাকার বেশি বেড়েছে। আর এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৮ টাকা।

চাল আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। আমদানির জন্য খোলা এলসিও বেড়েছে। কিন্তু তার কোনো প্রভাব নেই বাজারে। এর কারণ খুঁজে বের করা দরকার। এমনিতেই বাংলাদেশে ক্রেতা অধিকার সংরক্ষিত নয়। সরকারি নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অদৃশ্য সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে পণ্যমূল্য। কিন্তু বাংলাদেশে ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত। আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের শুরুতেই এলসির সংখ্যা ও চাল আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও বাজারে কেন তার প্রভাব পড়ছে না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শুধু আমদানি করে যে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখা যাবে না, এটা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে। কাজেই বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সক্রিয় হবে—এটাই কাম্য। এর পাশাপাশি বিকল্প বাজার ব্যবস্থার বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আমদানির প্রভাব নেই বাজারে

আপডেট টাইম : ০৫:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খাদ্য সংকট এড়াতে ও চালের বাজার সহনীয় রাখতে আমদানিতে সরকার শুল্ক কমিয়ে আনার পর সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়েই চাল আমদানি বেড়েছে। এর পাশাপাশি শূন্য মার্জিনে চাল আমদানির সুযোগও দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এর ফলে গত দুই মাসেই চাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব ঋণপত্রের বিপরীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল দেশে এসেছেও। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী জুনের আগ পর্যন্ত কয়েক মাস ধরে প্রতি মাসে গড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ কোটি টাকার চাল আমদানি হতো দেশে। এরপর বাড়তে থাকে আমদানির পরিমাণ। জুনেই চাল আমদানির এলসি খোলা হয় এক হাজার ৪৬৭ কোটি টাকার। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে চাল আমদানির জন্য ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১২৫.৩৭ শতাংশ বেশি। জুলাই মাসে চাল আমদানির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে সাত কোটি ১২ লাখ ডলারের, যা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৫৩.১৬ শতাংশ বেশি। এলসি নিষ্পত্তির পর দুই মাসে দেশে প্রবেশ করেছে প্রায় দেড় লাখ টন চাল।

সরকার শুল্ক কমিয়ে আনার পর প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হচ্ছে বাংলাদেশে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫১ দিনে মোট তিন লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় তিন গুণ। বাকি চাল আমদানির পর্যায়ে থাকলেও এর প্রভাব নেই বাজারে। চলতি বছরের শুরু থেকে চালের দাম নিয়ে চাপে রয়েছে ক্রেতারা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবারও ঢাকার বাজারে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায়। আর ভালো মানের চালে কেজিতে ৫৮ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে। টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে এক টাকার বেশি বেড়েছে। আর এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৮ টাকা।

চাল আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। আমদানির জন্য খোলা এলসিও বেড়েছে। কিন্তু তার কোনো প্রভাব নেই বাজারে। এর কারণ খুঁজে বের করা দরকার। এমনিতেই বাংলাদেশে ক্রেতা অধিকার সংরক্ষিত নয়। সরকারি নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অদৃশ্য সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে পণ্যমূল্য। কিন্তু বাংলাদেশে ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত। আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের শুরুতেই এলসির সংখ্যা ও চাল আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও বাজারে কেন তার প্রভাব পড়ছে না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শুধু আমদানি করে যে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখা যাবে না, এটা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে। কাজেই বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সক্রিয় হবে—এটাই কাম্য। এর পাশাপাশি বিকল্প বাজার ব্যবস্থার বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখতে হবে।