বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চালের দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই, মজুদের অবস্থাও ভালো নয়। চাল সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার, কিন্তু কোনোটিই কাজে আসছে না। প্রতি সপ্তাহেই দাম বাড়ছে। দায় এড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দুষছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, তাদের তদারকির অভাবে চালের দাম বাড়ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ দায় তাদের নয়।
গত এক মাসে সরু চালের দাম কেজিতে ছয় টাকা এবং মাঝারি ও মোটা চালের দাম কেজিতে তিন-চার টাকা বেড়েছে। এক কেজি সরু চালের দাম ৬০ টাকার বেশি। বছরের এই সময়ে এ চালের দাম সাধারণত ৫০ টাকার নিচে থাকে। মাঝারি মানের চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা এবং মোটা চাল মানভেদে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ১০ থেকে ১৩ টাকা বেশি দামে এসব চাল বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মিল মালিকরা ধানের সংকটের কথা বলছে। দেশে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন চাল উৎপন্ন হয়। গত বোরো মৌসুমে হাওরে অকালবন্যার কারণে ধানের উৎপাদন ২০ লাখ টন কম হয়েছে। ব্যবসায়ীরা, চালকল মালিকরা এটিকে কাজে লাগাচ্ছে। ধান মজুদ রেখে চালের বাজারে সংকট তৈরি করছে তারা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে অভিযান চালিয়ে কারসাজি ও সিন্ডিকেটবাজির প্রমাণ পেয়েছে সরকারের টাস্কফোর্স। গুদামে লাখ লাখ টন ধান মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে, চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের গুদামে কমপক্ষে ছয় লাখ টন চাল মজুদ থাকার কথা, আছে মাত্র সোয়া তিন লাখ টন। দেশের চালকল মালিক ও কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেও মজুদ বাড়ানো যায়নি। ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত, চালের সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষমতা সরকারের নেই। তাই বেশি মুনাফার লোভে তারা দাম বাড়াচ্ছে। বাজার তদারকির অভাবও দাম বাড়ার বড় একটি কারণ।
চালের বাড়তি দামের কারণে সমস্যায় পড়ছে মধ্যবিত্ত, বিশেষত শহুরে মধ্যবিত্ত। আর অতিদরিদ্র মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। চালের কেজিপ্রতি দাম ৪০ টাকার ওপরে উঠলেই তাদের জন্য কম দামে খোলাবাজারে চাল বিক্রির কার্যক্রম (ওএমএস) চালু করা হয়। মজুদ অপর্যাপ্ত থাকায় খাদ্য মন্ত্রণালয় এখনো ওএমএস চালু করতে পারেনি। ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রির কার্যক্রম এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পারস্পরিক দোষারোপ সংকট মোচনে ভূমিকা রাখবে না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত চালের মজুদ বাড়ানো এবং বড় আয়োজনে ওএমএস চালু করা। বেসরকারি খাতের চাল আমদানিতেও তাদের সহায়তা করা উচিত। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কড়া নজর রাখতে হবে, যাতে ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা কারসাজি ও সিন্ডিকেটবাজি করতে না পারে।