বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের কারণে গত মাস থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গতকালের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা চার লাখ ১২ হাজারের বেশি। আগে বিভিন্ন সময়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা আরো প্রায় পাঁচ লাখ। এই ৯ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। আগে ততটা সোচ্চার না হলেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সোচ্চার হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও সর্বসম্মতভাবে মিয়ানমারের আচরণের নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে সেনা অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমার সরকারের স্টেট কাউন্সেলর ও ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি গতকাল রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের অধিবাসীদের ‘যাচাই করে’ ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে। এটি অবশ্য মন্দের ভালো। তাঁর সুর কিছুটা হলেও নরম হয়েছে বলা যায়।
‘যাচাই করে’ ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্যে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের যাচাই করা হবে কিসের ভিত্তিতে? তাদের না আছে নাগরিকত্ব সনদ, না আছে পরিচয়পত্র। ফলে বিষয়টি নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—ত্রিপক্ষীয় আয়োজনে এই যাচাইপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। আমরা মনে করি, মিয়ানমার নেত্রীর কথায় যদি আন্তরিকতা থাকে, তাহলে তিনি প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাদ সাধবেন না। সু চি অবশ্য এ কথাও বলেছেন, তাঁরা শিগগিরই আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নও অত্যন্ত জরুরি। সুপারিশে রয়েছে, দেশটির ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক রীতিনীতি বিবেচনায় নিতে হবে। এটি করা হলে রোহিঙ্গাদের সে দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা ঝামেলা থাকবে বলে মনে হয় না। আনান কমিশনের সুপারিশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা প্রদান, অবাধে চলাচলের অধিকারসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, সব কাজই হতে হবে জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। শুধু তখনই মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাবোধ নিয়ে ফিরে যেতে পারবে। তা না হলে আবারও সেনা অভিযানের আতঙ্ক তাদের তাড়া করে বেড়াবে। তারা ফিরে যেতে সম্মত হবে না।
সারা বিশ্ব স্বীকার করছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ এখন চরম দুর্বিপাকে। অনেক দেশই বাংলাদেশের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। কিছু দেশ ত্রাণ পাঠিয়ে সহযোগিতাও করছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও ঘোষণা করেছেন, এই সংকটে তাঁদের দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় উদ্যোগে রোহিঙ্গা সংকট অচিরেই কেটে যাবে।