ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষি বিদায় দিয়ে নগরমুখী শ্রমিক

ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ হয়ে সিলেটের পথে পাকা সড়কের দুই পাশে মাইলের পর মাইল ফসলি জমি। কোথাও ধান, কোথাও শিম, কোথাওবা অন্য ফসলের আবাদ।

আবাদী জমির ফাঁকে ফাঁকে বিস্তীর্ণ খালি বা অনাবাদী জমি পড়ে আছে। ধান তো ভালোই হচ্ছে, তবে এত জমি খালি কেন—এ প্রশ্নের জবাবে নবীগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের কাছে চায়ের দোকানে বসা স্কুল শিক্ষক মনসুর আলী বললেন, ‘মজুরের অভাব। বেশি মজুরি দিয়েও শ্রমিক মেলে না। ’মনসুর মাস্টার বলেন, ‘খালি জমিতে চাষাবাদ তো দূরের কথা, এই ধান কাটা নিয়েই মানুষ এখন দুশ্চিন্তায় আছে। ছেলেপেলেরা এখন কেউ চাষি বা কৃষক হতে চায় না। একটু বড় হলেই সবাই ঢাকার দিকে পা বাড়ায়। শ্রমজীবীদের সন্তানরাও নগদ টাকা কামাইয়ের আশায় ছুটছে ঢাকায়। সেখানে তারা রিকশা চালায় কিংবা অন্য দিনমজুরের কাজ করে, কিন্তু তারা নিজের এলাকায় কৃষি শ্রমিক হতে চায় না। ’

শুধু সিলেটেই নয়, উত্তরের জেলা রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া কিংবা দক্ষিণের জেলা বরিশাল-পটুয়াখালী-বরগুনা-ভোলাসহ দেশের প্রায় সব এলাকার চিত্রও একই রকমের। বরিশাল থেকে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার দিকে যাওয়ার পথেও মাইলের পর মাইল ফাঁকা জমি চোখে পড়ে যেকোনো মৌসুমে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরকুকরিমুকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাশেম মহাজন কালের কণ্ঠকে বলেন, গ্রামের ছেলেপেলেরা বড় হলেই শহরমুখী হয়ে উঠছে। এলাকায় যারা থাকে তারাও কৃষিকাজে জড়িত হতে চায় না। ফলে এলাকায় কৃষি শ্রমিকের দামও বেড়ে গেছে। ৫০০ টাকার নিচে শ্রমিক পাওয়া কঠিন। ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই চাষাবাদে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, এলাকায় থাকা শ্রমিকরা ক্ষেতে কাজ না করে নদীতে বা সাগরে মাছ ধরতে চলে যাচ্ছে। আবার আগে অনেকে ঢাকা গেলেও ধান কাটা মৌসুমে ঠিকই এলাকায় চলে আসত, কিন্তু এখন আর ফেরে না।

গ্রামে কৃষি শ্রমিক না মিললেও ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের পাশে, বসিলা, মিরপুর, বারিধারাসংলগ্ন নতুনবাজার, কারওয়ান বাজার, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, বাবুবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন সূর্য ওঠার পরপরই বসে শ্রমজীবী ‘মানুষের হাট’। কিশোর থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ—সবাই শ্রম বিক্রির জন্য বসে ওই হাটে। কেউ দক্ষ-রাজমিস্ত্রি কিংবা কাঠমিস্ত্রির মতো নির্দিষ্ট কিছু পেশার হলেও বেশির ভাগই বসে থাকে যেকোনো ধরনের কাজের অপেক্ষায়। মাটিকাটা, মালামাল বহন, নির্মাণকাজের জোগালি, রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, যে কাজই হোক, তারা করতে চায়।

কারওয়ান বাজারের ‘মানুষের হাটে’ কথা হয় তরুণ সাইদুলের সঙ্গে। সে জানায়, তার বাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। পড়াশোনা করেছে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। বাবা অন্যের চিংড়ি ঘেরে কাজ করতেন। এখন সেখানেই কৃষিকাজ করেন। বর্গা চাষি হিসেবে ধান চাষ করেন। ঢাকায় কেন এলে—এ প্রশ্নের জবাবে সাইদুল বলে, ‘জমির কাদাপানিতে কাম কইরতে ভালো লাইগতে ছিল না। এলাকার মানুষ কামলা কইয়ে ডাকিছে, আবার ঘরে কারেন্ট নেই, লবণ পানি, আর সব সময় কাম-কাইজও থাইকত না। ’

একটু থেমে হাসতে হাসতে সাইদুল বলতে থাকে, ‘আমি আরেকটা বড় সমস্যায় পইড়ে গেছিলাম। গ্রামে তো এখন লুঙ্গির চেইয়ে কম দামে জিনস প্যান্ট মিলিছে। আর লুঙ্গি পইরতে শরম করে। জিনস প্যান্ট পরার অভ্যাস অয়ে গেছে তো, এইটে পইরে কী ধান ক্ষেতে কাম কইরতে পারি! বাপ কয়েছিল জিনস প্যান্ট ছাইড়ে লুঙ্গি পইরে ক্ষেতে নাইমতে, তাই করিনি বইলে বাপ মাইরেছে। এরপরই ছয় মাস আগে রাগ কইরে একজনের সাথে ঢাকায় চইলে আইসেছি। কড়াইল বস্তিতে থাইকতেছি। রাজের জুগালি কইরতেছি। দিনে ৪০০ টাকা করি পাচ্চি। সব দিন কাম হচ্চেও না। এইখানে আইসে বইসে থাইকতে হয়। ’

নতুন বাজার ‘মানুষের হাটে’ থাকা বরিশালের বাবুগঞ্জের বিল্লাল বলেন, ‘গ্রামে সব সময় কাম পাওন যাইত না। ধান লাগানের সময় আর কাডোনের সময়ই বেশি কাম-কাইজ থাকত। বাহি সময় বইয়া থাহন লাগে। আয়-ইনকাম অইত না। আর আশপাশের  মোর হোমাইন্না বয়সের অনেকেরেই দেখছি ঢাকায় আইতে, হেইয়ার দেহাদেহি মুইও আইয়া পড়ছি। এহন এইহানে মাঝে মইধ্যে রিকশা চালাই, আবার জুগাইল্যার কাম-কাইজও হরি। ’

ঢাকায় এসে লাভ কী হয়েছে জানতে চাইলে বিল্লাল বলেন, ‘টাহার অঙ্কে হিসাব করলে হেইরম কোনো লাভ দেহি না, গ্রামেই ক্ষেতে কাম হরলে দিনে ৪০০-৫০০ টাহা পাওন যাইত। মাঝে মইধ্যে গাঙ্গে মাছ ধরতে পারতাম। হেইয়া বেইচ্চাও ভালোই টাহা পাওন যাইত। এইহানে যেই দিন কাম হরতে পারি, হেইদিনে পাওন যায় ৪০০ টাহা। তয় গ্রামে যেমন বেশির ভাগ সময়ই কাম পাইতাম না, আর এইহানে বেশির ভাগ সময়ই কাম পাওন যায়। হেই ইসাবে আয় বেশি। কিন্তু আবার ঘর ভাড়া, খাওন খরচ দিয়া হোমানে হোমান। ’

এভাবে নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত মানুষেরা গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হওয়ায় কৃষি খাতে শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কমছে। শ্রমিকের অভাবে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষকরা। তারা বেশির ভাগ কৃষি জমি হয়তো খালি ফেলে রাখছে কিংবা অন্য কাজে ব্যবহার করছে। বিশেষজ্ঞরা এমন পরিস্থিতিকে দেশের কৃষির জন্য বড় হুমকি বলে মনে করছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে কৃষিসচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কৃষি শ্রমিকের ঘাটতি মোকাবিলায় আমরা এখন আধুনিক সব প্রযুক্তির ওপরে জোর দিচ্ছি। জমি চাষ, রোপণ, ফসল কাটা, ধান মাড়াই থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। কারণ জনশক্তি না পাওয়া গেলে আপাতত প্রযুক্তিকেই বিকল্প হিসেবে নিতে হবে। ’

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল বেশি উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান কিংবা নানা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে থাকা ভালো লক্ষণ নয়। এতে কৃষি খাতের জনশক্তি আরো হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য নতুন প্রযুক্তির পাশাপাশি কৃষি জনশক্তি গ্রামে ধরে রাখতে প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া কৃষি শ্রমিকদের পেশাদার শ্রমিক হিসেবে মূল্যায়ন করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দেশে অন্যান্য অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের জন্য নীতিমালা করা গেলে ঢাকায় প্রতিদিন অনিশ্চিত কাজের জন্য অপেক্ষায় থাকা এমন ‘মানুষের হাট’ও দেখতে হবে না।

কৃষিসচিব বলেন, ‘প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় ও টেকসই করার ক্ষেত্রে এসব কৃষি প্রযুক্তি কেনায় সরকারের তরফ থেকে ৩০ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, যা এখন ৫০ শতাংশে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি এটা হয়ে যাবে। আর জনবলের সংকট হলেও প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে উৎপাদনে কোনো সমস্যা হবে না। বরং উৎপাদন ব্যয় কমবে, উৎপাদনের পরিমাণ বাড়বে। ’

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশের মোট শ্রমজীবী মানুষের সাড়ে ৮৭ শতাংশ শ্রমজীবী রয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। যার সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। যাদের মধ্যে রয়েছে কৃষি শ্রমিক, গৃহ শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ভাসমান বিক্রেতা ইত্যাদি। যাদের কোনো স্বীকৃতি নেই।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ১৯৯৯-২০০০ সালের তুলনায় ২০০৯-১০ সময়ে দেশে কৃষি, বন ও মৎস্য, পশুপালন, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ, কৃষিকাজে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা কমে ছিল ২.৩ শতাংশ। আবার ২০০২-০৩ সময়ের তুলনায় বর্তমানে কৃষি, বন ও মৎস্য খাতে পুরুষ শ্রমিক কমেছে ১০.৪ শতাংশ। যদিও ওই সময়ের মধ্যে এ খাতে নারী শ্রমিকের হার বেড়েছে ১১৬ শতাংশ। বিশেষ করে বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে কৃষিকাজে যুক্ত ৭১.৫ শতাংশ আর পুরুষের মধ্যে ৬০.৩ শতাংশ। অনেক পুরুষই কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় যাচ্ছে, আর সেই কাজে যুক্ত হতে হচ্ছে নারীদের। তবে শুধু পুরুষরাই নয়, গ্রাম ছেড়ে কাজের খোঁজে শহরে আসা নারীদের সংখ্যাও অনেক। আবার শহরে বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া মোট জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই গ্রাম থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছে মূলত কাজের খোঁজে।

বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ মতে, দেশের মোট বস্তিবাসীর মধ্যে ৫১ শতাংশই কাজের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে শহরের বস্তিতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বাকিদের মধ্যে ২৯ শতাংশ এসেছে দারিদ্র্যের কারণে, ৭ শতাংশ নদীভাঙনের শিকার হয়ে, ২ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে, ১ শতাংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে এবং ১০ শতাংশ অন্যান্য কারণে। বস্তির মানুষের প্রধান আয়ের উেসর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩.১৮ শতাংশ পোশাক শ্রমিক, ৬.৯২ শতাংশ রিকশা-ভ্যান শ্রমিক, ৬.৭১ শতাংশ ছোট ব্যবসায়, ৬.৪১ শতাংশ গৃহকর্মী, ৫.০৮ শতাংশ দিনমজুর বা কুলি, ৩.৪৫ শতাংশ নির্মাণ শ্রমিক, ৩.০২ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক, বাকিরা অন্যান্য কাজে নিয়োজিত। এর মধ্যে ঢাকার বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭.১২ শতাংশই পোশাক শ্রমিক। অন্যদিকে বস্তিতে থাকা মানুষদের ৮৪.০৭ শতাংশ ভূমিহীন, ১৫.৯৩ শতাংশের কৃষিজমি রয়েছে। তবে এর পাশাপাশি অনেকেই অন্য পেশায়ও কাজ করে।

সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজে নিয়োজিত। দেশের পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে আঞ্চলিক বৈষম্যের কারণে পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে ১৪ শতাংশ বেশি দারিদ্র্য বিরাজমান। দারিদ্র্যের হার পূর্বাঞ্চলে ৩৬-৩৯ শতাংশ ও পশ্চিমাঞ্চলে ৪৭-৫৪ শতাংশ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তি প্রসারের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং গ্রামীণ যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র চাষিদের জন্য কৃষি সহায়ক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারই নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় জেলায় জেলায় কৃষকদের জন্য প্রদর্শনী স্থাপন, প্রশিক্ষণ, কৃষি মেলা, কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে। অনেক এলাকায় ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি, দারিদ্র্যতা হ্রাস, ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে পতিত জমি ব্যবহারের মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধির কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নানামুখী প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান  বলেন, কৃষি জনশক্তি দ্রুত কমে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এই জনশক্তির সব যে ঢাকায় চলে আসছে তেমনটা ভাবা ঠিক নয়। বরং অনেকেই গ্রামে থেকে কৃষি থেকে অকৃষিকাজে যুক্ত হচ্ছে। গ্রামপর্যায়েও এখন বহুমুখী কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। ফলে অনেকেই চাষাবাদের কাজ ফেলে পেশা পরিবর্তন করে কৃষির তুলনায় কম সময়ে ও সহজে উপার্জনশীল শিল্প-বাণিজ্য বা অন্য খাতের উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে নিজেদের নিয়োজিত করছে। আর যারা স্থানীয়ভাবে অকৃষি খাতে উপার্জনে সক্ষম নয়, তারাই মূলত গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় বা অন্যান্য বড় শহরে পাড়ি জমাচ্ছে।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান পরামর্শ দিয়ে বলেন, কৃষি থেকে মানুষ যখন শিল্পমুখী হয়ে উঠছে তখন কৃষি খাতকেও শিল্পনির্ভর হয়ে উঠতে হবে। নয় তো সমস্যা কাটানো যাবে না। এ জন্য কৃষি খাতে আরো বেশি বেশি প্রযুক্তির প্রয়োজন ঘটাতে হবে। পাশাপাশি তরুণ সমাজকে কৃষিসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া কৃষি খাতকে আরো আয় বাড়ানোর পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃষি বিদায় দিয়ে নগরমুখী শ্রমিক

আপডেট টাইম : ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ হয়ে সিলেটের পথে পাকা সড়কের দুই পাশে মাইলের পর মাইল ফসলি জমি। কোথাও ধান, কোথাও শিম, কোথাওবা অন্য ফসলের আবাদ।

আবাদী জমির ফাঁকে ফাঁকে বিস্তীর্ণ খালি বা অনাবাদী জমি পড়ে আছে। ধান তো ভালোই হচ্ছে, তবে এত জমি খালি কেন—এ প্রশ্নের জবাবে নবীগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের কাছে চায়ের দোকানে বসা স্কুল শিক্ষক মনসুর আলী বললেন, ‘মজুরের অভাব। বেশি মজুরি দিয়েও শ্রমিক মেলে না। ’মনসুর মাস্টার বলেন, ‘খালি জমিতে চাষাবাদ তো দূরের কথা, এই ধান কাটা নিয়েই মানুষ এখন দুশ্চিন্তায় আছে। ছেলেপেলেরা এখন কেউ চাষি বা কৃষক হতে চায় না। একটু বড় হলেই সবাই ঢাকার দিকে পা বাড়ায়। শ্রমজীবীদের সন্তানরাও নগদ টাকা কামাইয়ের আশায় ছুটছে ঢাকায়। সেখানে তারা রিকশা চালায় কিংবা অন্য দিনমজুরের কাজ করে, কিন্তু তারা নিজের এলাকায় কৃষি শ্রমিক হতে চায় না। ’

শুধু সিলেটেই নয়, উত্তরের জেলা রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া কিংবা দক্ষিণের জেলা বরিশাল-পটুয়াখালী-বরগুনা-ভোলাসহ দেশের প্রায় সব এলাকার চিত্রও একই রকমের। বরিশাল থেকে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার দিকে যাওয়ার পথেও মাইলের পর মাইল ফাঁকা জমি চোখে পড়ে যেকোনো মৌসুমে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরকুকরিমুকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাশেম মহাজন কালের কণ্ঠকে বলেন, গ্রামের ছেলেপেলেরা বড় হলেই শহরমুখী হয়ে উঠছে। এলাকায় যারা থাকে তারাও কৃষিকাজে জড়িত হতে চায় না। ফলে এলাকায় কৃষি শ্রমিকের দামও বেড়ে গেছে। ৫০০ টাকার নিচে শ্রমিক পাওয়া কঠিন। ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই চাষাবাদে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, এলাকায় থাকা শ্রমিকরা ক্ষেতে কাজ না করে নদীতে বা সাগরে মাছ ধরতে চলে যাচ্ছে। আবার আগে অনেকে ঢাকা গেলেও ধান কাটা মৌসুমে ঠিকই এলাকায় চলে আসত, কিন্তু এখন আর ফেরে না।

গ্রামে কৃষি শ্রমিক না মিললেও ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের পাশে, বসিলা, মিরপুর, বারিধারাসংলগ্ন নতুনবাজার, কারওয়ান বাজার, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, বাবুবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন সূর্য ওঠার পরপরই বসে শ্রমজীবী ‘মানুষের হাট’। কিশোর থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ—সবাই শ্রম বিক্রির জন্য বসে ওই হাটে। কেউ দক্ষ-রাজমিস্ত্রি কিংবা কাঠমিস্ত্রির মতো নির্দিষ্ট কিছু পেশার হলেও বেশির ভাগই বসে থাকে যেকোনো ধরনের কাজের অপেক্ষায়। মাটিকাটা, মালামাল বহন, নির্মাণকাজের জোগালি, রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, যে কাজই হোক, তারা করতে চায়।

কারওয়ান বাজারের ‘মানুষের হাটে’ কথা হয় তরুণ সাইদুলের সঙ্গে। সে জানায়, তার বাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। পড়াশোনা করেছে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। বাবা অন্যের চিংড়ি ঘেরে কাজ করতেন। এখন সেখানেই কৃষিকাজ করেন। বর্গা চাষি হিসেবে ধান চাষ করেন। ঢাকায় কেন এলে—এ প্রশ্নের জবাবে সাইদুল বলে, ‘জমির কাদাপানিতে কাম কইরতে ভালো লাইগতে ছিল না। এলাকার মানুষ কামলা কইয়ে ডাকিছে, আবার ঘরে কারেন্ট নেই, লবণ পানি, আর সব সময় কাম-কাইজও থাইকত না। ’

একটু থেমে হাসতে হাসতে সাইদুল বলতে থাকে, ‘আমি আরেকটা বড় সমস্যায় পইড়ে গেছিলাম। গ্রামে তো এখন লুঙ্গির চেইয়ে কম দামে জিনস প্যান্ট মিলিছে। আর লুঙ্গি পইরতে শরম করে। জিনস প্যান্ট পরার অভ্যাস অয়ে গেছে তো, এইটে পইরে কী ধান ক্ষেতে কাম কইরতে পারি! বাপ কয়েছিল জিনস প্যান্ট ছাইড়ে লুঙ্গি পইরে ক্ষেতে নাইমতে, তাই করিনি বইলে বাপ মাইরেছে। এরপরই ছয় মাস আগে রাগ কইরে একজনের সাথে ঢাকায় চইলে আইসেছি। কড়াইল বস্তিতে থাইকতেছি। রাজের জুগালি কইরতেছি। দিনে ৪০০ টাকা করি পাচ্চি। সব দিন কাম হচ্চেও না। এইখানে আইসে বইসে থাইকতে হয়। ’

নতুন বাজার ‘মানুষের হাটে’ থাকা বরিশালের বাবুগঞ্জের বিল্লাল বলেন, ‘গ্রামে সব সময় কাম পাওন যাইত না। ধান লাগানের সময় আর কাডোনের সময়ই বেশি কাম-কাইজ থাকত। বাহি সময় বইয়া থাহন লাগে। আয়-ইনকাম অইত না। আর আশপাশের  মোর হোমাইন্না বয়সের অনেকেরেই দেখছি ঢাকায় আইতে, হেইয়ার দেহাদেহি মুইও আইয়া পড়ছি। এহন এইহানে মাঝে মইধ্যে রিকশা চালাই, আবার জুগাইল্যার কাম-কাইজও হরি। ’

ঢাকায় এসে লাভ কী হয়েছে জানতে চাইলে বিল্লাল বলেন, ‘টাহার অঙ্কে হিসাব করলে হেইরম কোনো লাভ দেহি না, গ্রামেই ক্ষেতে কাম হরলে দিনে ৪০০-৫০০ টাহা পাওন যাইত। মাঝে মইধ্যে গাঙ্গে মাছ ধরতে পারতাম। হেইয়া বেইচ্চাও ভালোই টাহা পাওন যাইত। এইহানে যেই দিন কাম হরতে পারি, হেইদিনে পাওন যায় ৪০০ টাহা। তয় গ্রামে যেমন বেশির ভাগ সময়ই কাম পাইতাম না, আর এইহানে বেশির ভাগ সময়ই কাম পাওন যায়। হেই ইসাবে আয় বেশি। কিন্তু আবার ঘর ভাড়া, খাওন খরচ দিয়া হোমানে হোমান। ’

এভাবে নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত মানুষেরা গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হওয়ায় কৃষি খাতে শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কমছে। শ্রমিকের অভাবে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষকরা। তারা বেশির ভাগ কৃষি জমি হয়তো খালি ফেলে রাখছে কিংবা অন্য কাজে ব্যবহার করছে। বিশেষজ্ঞরা এমন পরিস্থিতিকে দেশের কৃষির জন্য বড় হুমকি বলে মনে করছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে কৃষিসচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কৃষি শ্রমিকের ঘাটতি মোকাবিলায় আমরা এখন আধুনিক সব প্রযুক্তির ওপরে জোর দিচ্ছি। জমি চাষ, রোপণ, ফসল কাটা, ধান মাড়াই থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। কারণ জনশক্তি না পাওয়া গেলে আপাতত প্রযুক্তিকেই বিকল্প হিসেবে নিতে হবে। ’

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল বেশি উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান কিংবা নানা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে থাকা ভালো লক্ষণ নয়। এতে কৃষি খাতের জনশক্তি আরো হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য নতুন প্রযুক্তির পাশাপাশি কৃষি জনশক্তি গ্রামে ধরে রাখতে প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া কৃষি শ্রমিকদের পেশাদার শ্রমিক হিসেবে মূল্যায়ন করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দেশে অন্যান্য অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের জন্য নীতিমালা করা গেলে ঢাকায় প্রতিদিন অনিশ্চিত কাজের জন্য অপেক্ষায় থাকা এমন ‘মানুষের হাট’ও দেখতে হবে না।

কৃষিসচিব বলেন, ‘প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় ও টেকসই করার ক্ষেত্রে এসব কৃষি প্রযুক্তি কেনায় সরকারের তরফ থেকে ৩০ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, যা এখন ৫০ শতাংশে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি এটা হয়ে যাবে। আর জনবলের সংকট হলেও প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে উৎপাদনে কোনো সমস্যা হবে না। বরং উৎপাদন ব্যয় কমবে, উৎপাদনের পরিমাণ বাড়বে। ’

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশের মোট শ্রমজীবী মানুষের সাড়ে ৮৭ শতাংশ শ্রমজীবী রয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। যার সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। যাদের মধ্যে রয়েছে কৃষি শ্রমিক, গৃহ শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ভাসমান বিক্রেতা ইত্যাদি। যাদের কোনো স্বীকৃতি নেই।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ১৯৯৯-২০০০ সালের তুলনায় ২০০৯-১০ সময়ে দেশে কৃষি, বন ও মৎস্য, পশুপালন, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ, কৃষিকাজে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা কমে ছিল ২.৩ শতাংশ। আবার ২০০২-০৩ সময়ের তুলনায় বর্তমানে কৃষি, বন ও মৎস্য খাতে পুরুষ শ্রমিক কমেছে ১০.৪ শতাংশ। যদিও ওই সময়ের মধ্যে এ খাতে নারী শ্রমিকের হার বেড়েছে ১১৬ শতাংশ। বিশেষ করে বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে কৃষিকাজে যুক্ত ৭১.৫ শতাংশ আর পুরুষের মধ্যে ৬০.৩ শতাংশ। অনেক পুরুষই কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় যাচ্ছে, আর সেই কাজে যুক্ত হতে হচ্ছে নারীদের। তবে শুধু পুরুষরাই নয়, গ্রাম ছেড়ে কাজের খোঁজে শহরে আসা নারীদের সংখ্যাও অনেক। আবার শহরে বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া মোট জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই গ্রাম থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছে মূলত কাজের খোঁজে।

বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ মতে, দেশের মোট বস্তিবাসীর মধ্যে ৫১ শতাংশই কাজের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে শহরের বস্তিতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বাকিদের মধ্যে ২৯ শতাংশ এসেছে দারিদ্র্যের কারণে, ৭ শতাংশ নদীভাঙনের শিকার হয়ে, ২ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে, ১ শতাংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে এবং ১০ শতাংশ অন্যান্য কারণে। বস্তির মানুষের প্রধান আয়ের উেসর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩.১৮ শতাংশ পোশাক শ্রমিক, ৬.৯২ শতাংশ রিকশা-ভ্যান শ্রমিক, ৬.৭১ শতাংশ ছোট ব্যবসায়, ৬.৪১ শতাংশ গৃহকর্মী, ৫.০৮ শতাংশ দিনমজুর বা কুলি, ৩.৪৫ শতাংশ নির্মাণ শ্রমিক, ৩.০২ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক, বাকিরা অন্যান্য কাজে নিয়োজিত। এর মধ্যে ঢাকার বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭.১২ শতাংশই পোশাক শ্রমিক। অন্যদিকে বস্তিতে থাকা মানুষদের ৮৪.০৭ শতাংশ ভূমিহীন, ১৫.৯৩ শতাংশের কৃষিজমি রয়েছে। তবে এর পাশাপাশি অনেকেই অন্য পেশায়ও কাজ করে।

সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজে নিয়োজিত। দেশের পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে আঞ্চলিক বৈষম্যের কারণে পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে ১৪ শতাংশ বেশি দারিদ্র্য বিরাজমান। দারিদ্র্যের হার পূর্বাঞ্চলে ৩৬-৩৯ শতাংশ ও পশ্চিমাঞ্চলে ৪৭-৫৪ শতাংশ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তি প্রসারের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং গ্রামীণ যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র চাষিদের জন্য কৃষি সহায়ক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারই নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় জেলায় জেলায় কৃষকদের জন্য প্রদর্শনী স্থাপন, প্রশিক্ষণ, কৃষি মেলা, কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে। অনেক এলাকায় ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি, দারিদ্র্যতা হ্রাস, ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে পতিত জমি ব্যবহারের মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধির কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নানামুখী প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান  বলেন, কৃষি জনশক্তি দ্রুত কমে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এই জনশক্তির সব যে ঢাকায় চলে আসছে তেমনটা ভাবা ঠিক নয়। বরং অনেকেই গ্রামে থেকে কৃষি থেকে অকৃষিকাজে যুক্ত হচ্ছে। গ্রামপর্যায়েও এখন বহুমুখী কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। ফলে অনেকেই চাষাবাদের কাজ ফেলে পেশা পরিবর্তন করে কৃষির তুলনায় কম সময়ে ও সহজে উপার্জনশীল শিল্প-বাণিজ্য বা অন্য খাতের উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে নিজেদের নিয়োজিত করছে। আর যারা স্থানীয়ভাবে অকৃষি খাতে উপার্জনে সক্ষম নয়, তারাই মূলত গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় বা অন্যান্য বড় শহরে পাড়ি জমাচ্ছে।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান পরামর্শ দিয়ে বলেন, কৃষি থেকে মানুষ যখন শিল্পমুখী হয়ে উঠছে তখন কৃষি খাতকেও শিল্পনির্ভর হয়ে উঠতে হবে। নয় তো সমস্যা কাটানো যাবে না। এ জন্য কৃষি খাতে আরো বেশি বেশি প্রযুক্তির প্রয়োজন ঘটাতে হবে। পাশাপাশি তরুণ সমাজকে কৃষিসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া কৃষি খাতকে আরো আয় বাড়ানোর পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।