মার্চ মাস দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে শপথ নিলাম যে কোনো মূল্যে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করব। প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘আঘাত হেনেই পালিয়ে যাও’ পদ্ধতিতে গেরিলা যুদ্ধ করেছি। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা, অন্যদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধের প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা ছিল। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে গেরিলা পদ্ধতিতে মুক্তিযুদ্ধের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। একাত্তরের ১ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে এক দফার দিকে অর্থাৎ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনার জন্য প্রতিদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে যেতাম। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতাম। সভা-সমাবেশ করে মানুষকে সংঘবদ্ধ করার পাশাপাশি প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু করে গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। গ্রেফতার হবেন আঁচ করতে পেরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ২৬ মার্চ সারা দিন কারফিউ থাকে। ২৭ মার্চ ২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। ঘর থেকে বের হয়ে দেখি রাজারবাগ, পিলখানা, সদরঘাট, স্টেডিয়াম, কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের লাশ আর লাশ। এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সূত্রাপুরে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। সাংবাদিক আবেদ খান আহ্বায়ক এবং আমি পরিষদের সদস্যসচিব হই। পরে ঢাকার সেগুনবাগিচায় আরেকটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এতে সাবেক মন্ত্রী আবদুস সাত্তার আহ্বায়ক এবং আমি সদস্যসচিব ছিলাম। ২৮ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মী নিয়ে সংঘবদ্ধ হই। ১ এপ্রিল বুড়িগঙ্গার ওপারে জিনজিরায় পৌঁছাই। হানাদার বাহিনী জিনজিরায় আমাদের ওপর হামলা চালায়। ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। ২ এপ্রিল ঢাকায় ফিরে আসি। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দলীয় লোক নিয়ে ঢাকায় সংঘবদ্ধ হই। ৬ এপ্রিল আগরতলা পৌঁছাই। এরপর মুজিবনগর সরকারের অধীন ট্রেনিং নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি। ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় আমাদের গেরিলা যুদ্ধ। তখন আমরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতিতে অর্থাৎ ‘আঘাত হেনেই পালিয়ে যাও’ কায়দায় শত্রুর ওপর হামলা করতে থাকলাম। গেরিলা যুদ্ধের নিয়মই তাই— শত্রুকে আক্রমণ কর এবং নিজে পালিয়ে যাও। তাই আমরা একে অন্যের কাছে নিজেদের অবস্থানের কথা গোপন রাখতাম। এইভাবে গেরিলা যুদ্ধ করে আমরা ঢাকা শত্রুমুক্ত করি। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সময় আমরা খালেদ মোশাররফ, হামিদুল্লাহ, মতিনসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া বাঙালি সামরিক অফিসারদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে আগরতলা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করি। ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টায় মতিঝিল অগ্রণী ব্যাংক ভবনে অবস্থান করি। সেখানে আমি প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলাম। অনুলিখন : বাদল নূর
সংবাদ শিরোনাম :
নারী ক্রিকেটারদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়লো
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার হুমকি দিলেন ট্রাম্প
পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: পরিবেশ উপদেষ্টা
উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
দুধে কাজু ভিজিয়ে খেলে মিলবে যেসব উপকারিতা
দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত
ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের
হিলিতে কমেছে আলু ও পেঁয়াজের দাম
দুই চুক্তিতে ১১ হাজার কোটি টাকা দিল বিশ্বব্যাংক
মাতৃত্বকালীন ডিপ্রেশন নিয়ে কথা বলে সমালোচনার মুখে সানা খান
আগুনঝরা মার্চ গেরিলা যুদ্ধ ‘আঘাত হেনেই পালিয়ে যাও’ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া
- বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্ক
- আপডেট টাইম : ০৫:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০১৭
- 741
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ