বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৮ ভাগ। বলা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের বাজারে অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। মূলত পেঁয়াজসহ মসলাজাতীয় পণ্য এবং শাকসবজির দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতির এই উল্লম্ফন ঘটেছে।
উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসে দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশে। এটি আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর বাইরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী মাসে ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
বিবিএসের সিপিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং অক্টোবরে ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
উদার বাণিজ্য ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত থাকে। শুধু এবারের ‘পেঁয়াজকাণ্ড’ নয়; অতীতেও অনেকেই সময় ও সুযোগ বুঝে বাজার অস্থিতিশীল করার নানা অপপ্রয়াস চালিয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে।
যোগসাজশের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি যদি বাধাগ্রস্ত করা হয়, তবে একদিকে যেমন ভোক্তাস্বার্থের হানি ঘটে, অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিগত কয়েক বছরে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা যায়নি, যা মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ।
পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে প্রায় প্রতিটি পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি হিসাবেই গত এক বছরে চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ ও শিশু খাদ্যের দাম ৫ শতাংশ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষত নিুআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায় বোধ করেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন উচ্চবাচ্য হয় না বললেই চলে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই- এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
মূল্যস্ফীতির থাবা থেকে দেশের মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্রদের সুরক্ষা দিতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের আর্থিক প্রণোদনামূলক কর্মসূচিগুলো আরও উৎপাদনমুখী ও মানবসম্পদ উন্নয়নমুখী করা প্রয়োজন।
এর ফলে একসময় হয়তো দেখা যাবে, প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান দ্বারা তারা নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। স্বস্তির বিষয় হল, এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামবৃদ্ধির চাপ তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম কম।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি ও জিও পলিটিক্যাল কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে আমাদের দেশীয় বাজারে মূল্যস্ফীতির অভিঘাত পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া বন্যার কারণে শাকসবজির উৎপাদন হ্রাস, ধানের আবাদ ও পণ্য সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ পরিস্থিতি যাতে স্থায়ী না হয় সরকার সে ব্যাপারে যত্নবান হবে, এটাই প্রত্যাশা।