ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হার বছরের শুরুতেই তৈরি হোক সুসংবাদ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলোতে ঋণের সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হার কার্যকর করা হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, শিল্প ঋণের উচ্চ সুদ হার নিয়ে অর্থমন্ত্রী বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ব্যাপারে খোদ প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা ছিল।

বস্তুত বাংলাদেশের মতো ব্যাংক ঋণের সুদ হার পৃথিবীর কম দেশেই আছে। এত বেশি সুদ দিয়ে শিল্প-কারখানা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

ঋণের উচ্চ সুদ হারের কারণে অনেক উদ্যোক্তা সময়মতো ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। সুদ হার কমানোর কথা বলে বেশ কয়েক দফা সুবিধা নেয়ার পরও ব্যাংকগুলো সুদ হার কমানোর ক্ষেত্রে গড়িমসি করছিল।

বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী মহল দাবি জানিয়ে আসছে। গত আগস্টে ঋণ ও আমানতের সুদ হার যথাক্রমে ৯ ও ৬ শতাংশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে তাগাদা দেয়া হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছিল না।

প্রায় দেড় বছরে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে সরকারি-বেসরকারি মিলে মাত্র ১১টি ব্যাংক। এখনও বেসরকারি খাতের ৩৭ ব্যাংকের ঋণের সুদ হার ১২-২০ শতাংশের ঘরে। এ প্রেক্ষাপটে ১ জানুয়ারি থেকে সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর যে কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী, তার ব্যত্যয় হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

দেশে বেকারত্ব দূরীকরণে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া জরুরি। কিন্তু শিল্পায়নের গতি মন্থর থাকায় তা হচ্ছে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটসহ অবকাঠামোগত সমস্যার কারণেও নতুন বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন না। এসব সমস্যা ও ব্যাংকের উচ্চ সুদ হারের কারণে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পথে।

অথচ সবাই দেশের টেকসই উন্নয়নপ্রত্যাশী। এ অবস্থায় কোনো ধরনের সমস্যার কারণে আর যাতে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমে আসবে এবং শিল্প খাতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন, ঋণের সুদ হার উচ্চ থাকলে শিল্পায়নে গতি আসবে না। দেশের শিল্প খাতকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে চাইলেও সুদ হারে সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর করা দরকার।

ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেও উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুশ্চিন্তার বিষয় হল, ব্যাংকগুলো অধিক হারে সুদ আরোপ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, পদে পদে সার্ভিস চার্জ আরোপের মাধ্যমে আগ্রাসী আচরণও অব্যাহত রেখেছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এ জায়গাটিতেও দৃষ্টি দেয়া। আমরা আশা করব, ১ জানুয়ারি থেকে শুধু ব্যাংক ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনাই হবে না, একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতি রোধেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা ব্যাংক ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে চাই।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হার বছরের শুরুতেই তৈরি হোক সুসংবাদ

আপডেট টাইম : ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলোতে ঋণের সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হার কার্যকর করা হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, শিল্প ঋণের উচ্চ সুদ হার নিয়ে অর্থমন্ত্রী বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ব্যাপারে খোদ প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা ছিল।

বস্তুত বাংলাদেশের মতো ব্যাংক ঋণের সুদ হার পৃথিবীর কম দেশেই আছে। এত বেশি সুদ দিয়ে শিল্প-কারখানা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

ঋণের উচ্চ সুদ হারের কারণে অনেক উদ্যোক্তা সময়মতো ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। সুদ হার কমানোর কথা বলে বেশ কয়েক দফা সুবিধা নেয়ার পরও ব্যাংকগুলো সুদ হার কমানোর ক্ষেত্রে গড়িমসি করছিল।

বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী মহল দাবি জানিয়ে আসছে। গত আগস্টে ঋণ ও আমানতের সুদ হার যথাক্রমে ৯ ও ৬ শতাংশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে তাগাদা দেয়া হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছিল না।

প্রায় দেড় বছরে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে সরকারি-বেসরকারি মিলে মাত্র ১১টি ব্যাংক। এখনও বেসরকারি খাতের ৩৭ ব্যাংকের ঋণের সুদ হার ১২-২০ শতাংশের ঘরে। এ প্রেক্ষাপটে ১ জানুয়ারি থেকে সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর যে কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী, তার ব্যত্যয় হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

দেশে বেকারত্ব দূরীকরণে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া জরুরি। কিন্তু শিল্পায়নের গতি মন্থর থাকায় তা হচ্ছে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটসহ অবকাঠামোগত সমস্যার কারণেও নতুন বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন না। এসব সমস্যা ও ব্যাংকের উচ্চ সুদ হারের কারণে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পথে।

অথচ সবাই দেশের টেকসই উন্নয়নপ্রত্যাশী। এ অবস্থায় কোনো ধরনের সমস্যার কারণে আর যাতে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমে আসবে এবং শিল্প খাতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন, ঋণের সুদ হার উচ্চ থাকলে শিল্পায়নে গতি আসবে না। দেশের শিল্প খাতকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে চাইলেও সুদ হারে সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর করা দরকার।

ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেও উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুশ্চিন্তার বিষয় হল, ব্যাংকগুলো অধিক হারে সুদ আরোপ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, পদে পদে সার্ভিস চার্জ আরোপের মাধ্যমে আগ্রাসী আচরণও অব্যাহত রেখেছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এ জায়গাটিতেও দৃষ্টি দেয়া। আমরা আশা করব, ১ জানুয়ারি থেকে শুধু ব্যাংক ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনাই হবে না, একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতি রোধেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা ব্যাংক ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে চাই।