বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ উৎপাদনশীল খাতের ব্যাংক ঋণে এক অঙ্কের (সিঙ্গেল ডিজিট) সুদহার অনুমোদনের বিষয়টি ইতিবাচক। এর ফলে শিল্প খাতের মেয়াদি ও তলবি ঋণের গ্রাহকরা এ সুবিধা পাবেন।
তবে ভোক্তাঋণ এর আওতায় পড়বে না। বিশেষ পর্ষদ সভায় শিল্পঋণে ৯ শতাংশ সুদ অনুমোদনের পর কার্যকরের বিষয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সবকিছু ঠিক থাকলে এটি নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা, অঙ্গীকার ও বাস্তবায়ন নিয়ে বাগাড়ম্বর কম হয়নি। ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) পক্ষ থেকে গত বছরের ১ জুলাই থেকে সব ধরনের ঋণের সুদহার কমিয়ে এক অঙ্কে নিয়ে আসার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
বিভিন্ন ব্যাংক পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এ সংক্রান্ত ঘোষণাও প্রচার করেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ৭ বার এবং বর্তমান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী মিলে মোট ১১ বার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তারপরও সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট হয়নি।
আশ্চর্যজনক হল, নির্দেশনা কার্যকর না করলেও সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য বিএবি’র দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত দেড় বছরে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক দফায় দফায় তাদের ৯ ধরনের সুবিধা দিয়েছে।
ব্যাংকগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে নগদ জমা সংরক্ষণ হার (সিআরআর) কমিয়ে দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ৫.৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ব্যাংকের কর্পোরেট করহার ৪২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ নির্ধারণ, কৃষি খাতে প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে রক্ষিতব্য সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণের হার ২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ এবং গৃহায়ন খাতে রক্ষিতব্য সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণের হার ২ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি তহবিল জমার হার বৃদ্ধি, পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকার মেয়াদ ও একক পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল এবং ঋণশ্রেণিকরণ নীতিমালা শিথিলকরণ সুবিধা দেয়া হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, সুদহার এক অঙ্কে না এলেও ৯টি সুবিধার মাত্র ৪টিতেই ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছে। অথচ এক্ষেত্রে কাজের কাজ কিছুই হয়নি; দেড় বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি এক অঙ্কের সুদহার।
দেশে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেই ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এসব উদ্যোগ কার্যকর না হওয়ায় উদ্যোক্তারা যে বিপাকে পড়েছেন, তা বলাই বাহুল্য। ব্যাংক ঋণের প্রচলিত সুদহার কমানোর ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই।
কেননা, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কারও পক্ষে শিল্প স্থাপন বা ব্যবসায়ে আয় করা সম্ভব নয়; আর আয় না হলে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধও সম্ভব নয়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগ কমে যাবে এবং বিনিয়োগ কমে গেলে অবধারিতভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না।
এ অবস্থায় কোনোরকম গড়িমসি না করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ঋণের সুদহার দ্রুত সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।