ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি পাটকল, লোকসানের বোঝা আর কতকাল টানতে হবে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সরকারি পাটকলগুলোর অবস্থা একেবারেই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। প্রথমত, বর্তমান সরকার পাটশিল্পের নতুন রূপ দেয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ নিলেও লোকসানের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে এই পাটকলগুলো। এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত আট বছরে অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে সরকারি পাটকলগুলো লোকসান গুনেছে ৪ হাজার কোটি টাকা। এই লোকসানের প্রেক্ষাপটে বকেয়া পড়েছে শ্রমিকদের বেতন।

সারা দেশে ২৫টি সরকারি পাটকলের ২৫ হাজার ৬১৯ জন স্থায়ী শ্রমিকের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়েছে কয়েকশ’ কোটি টাকা। বকেয়া বেতনের দাবিতে মাঝে মাঝেই শ্রমিকদের স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে জনপদ। নভেম্বর থেকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ব্যবস্থা বাতিলসহ ১১ দফা দাবিতে এখন মাঠে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম ঐক্য পরিষদ।

উৎপাদন বন্ধ রেখে নানা কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেতন-ভাতা প্রদানসহ কাঁচাপাট ক্রয়ে এক হাজার ৭৪০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বিপরীতে মাত্র ১০০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। এই অর্থ দিয়ে গত অক্টোবর পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে।

সরকারি পাটকলগুলোর কেন এ দুরবস্থা? পাটকলগুলো যে লোকসান দিচ্ছে, তার দায় তো শ্রমিকদের নয়। সামগ্রিক অব্যবস্থাপনাই দায়ী এজন্য। অব্যবস্থাপনার দায় শ্রমিকরা নিতে যাবে কেন? কথা হচ্ছে, শ্রমিকরা তো আর এমনি এমনি বেতন-ভাতা চাচ্ছে না। তারা শ্রম দিয়েছে, সেই শ্রমের মজুরি তাদের প্রাপ্য।

দ্বিতীয় কথা, লোকসানের বোঝা আর কতকাল বহন করবে সরকারি পাটকলগুলো। সরকার পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবনের কথা বলছে, অথচ এ খাতে অব্যবস্থাপনা ও অরাজকতার শেষ নেই। সরকার ঘোষিত মজুরি কমিশন বাস্তবায়িত হয়নি এখনও। সত্য কথা, শ্রমিকরা যেসব দাবিতে আন্দোলন করছে, সেসব দাবি পূরণ করা না হলে পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়। শ্রমিকের সন্তুষ্টি এবং অব্যবস্থাপনার অবসান- এ দুই শর্তই পারে পাটশিল্পের বর্তমান অবস্থা পরিবর্তন করতে।

শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে- বকেয়া মজুরি পরিশোধ, ঘণ্টা অনুযায়ী মজুরি দেয়া, বকেয়া থাকা অবসর ভাতা ও মৃত্যু বীমার টাকা পরিশোধ, বরখাস্তকৃত সব শ্রমিককে পুনর্বহাল করা, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ী করা, চাহিদা অনুযায়ী পাটের মৌসুমে পাট কেনার জন্য মিলগুলোকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া, পাটশিল্পকে কৃষিশিল্পে রূপান্তর করা, মিলগুলোর আধুনিকায়ন করা ইত্যাদি।

আমরা মনে করি, এ দাবিগুলোর অধিকাংশই যৌক্তিক। যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার অচিরেই সহৃদয়তার সঙ্গে বিবেচনা করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তা না হলে পাটকলগুলোর দুরবস্থা চলতেই থাকবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

সরকারি পাটকল, লোকসানের বোঝা আর কতকাল টানতে হবে

আপডেট টাইম : ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সরকারি পাটকলগুলোর অবস্থা একেবারেই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। প্রথমত, বর্তমান সরকার পাটশিল্পের নতুন রূপ দেয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ নিলেও লোকসানের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে এই পাটকলগুলো। এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত আট বছরে অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে সরকারি পাটকলগুলো লোকসান গুনেছে ৪ হাজার কোটি টাকা। এই লোকসানের প্রেক্ষাপটে বকেয়া পড়েছে শ্রমিকদের বেতন।

সারা দেশে ২৫টি সরকারি পাটকলের ২৫ হাজার ৬১৯ জন স্থায়ী শ্রমিকের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়েছে কয়েকশ’ কোটি টাকা। বকেয়া বেতনের দাবিতে মাঝে মাঝেই শ্রমিকদের স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে জনপদ। নভেম্বর থেকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ব্যবস্থা বাতিলসহ ১১ দফা দাবিতে এখন মাঠে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম ঐক্য পরিষদ।

উৎপাদন বন্ধ রেখে নানা কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেতন-ভাতা প্রদানসহ কাঁচাপাট ক্রয়ে এক হাজার ৭৪০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বিপরীতে মাত্র ১০০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। এই অর্থ দিয়ে গত অক্টোবর পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে।

সরকারি পাটকলগুলোর কেন এ দুরবস্থা? পাটকলগুলো যে লোকসান দিচ্ছে, তার দায় তো শ্রমিকদের নয়। সামগ্রিক অব্যবস্থাপনাই দায়ী এজন্য। অব্যবস্থাপনার দায় শ্রমিকরা নিতে যাবে কেন? কথা হচ্ছে, শ্রমিকরা তো আর এমনি এমনি বেতন-ভাতা চাচ্ছে না। তারা শ্রম দিয়েছে, সেই শ্রমের মজুরি তাদের প্রাপ্য।

দ্বিতীয় কথা, লোকসানের বোঝা আর কতকাল বহন করবে সরকারি পাটকলগুলো। সরকার পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবনের কথা বলছে, অথচ এ খাতে অব্যবস্থাপনা ও অরাজকতার শেষ নেই। সরকার ঘোষিত মজুরি কমিশন বাস্তবায়িত হয়নি এখনও। সত্য কথা, শ্রমিকরা যেসব দাবিতে আন্দোলন করছে, সেসব দাবি পূরণ করা না হলে পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়। শ্রমিকের সন্তুষ্টি এবং অব্যবস্থাপনার অবসান- এ দুই শর্তই পারে পাটশিল্পের বর্তমান অবস্থা পরিবর্তন করতে।

শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে- বকেয়া মজুরি পরিশোধ, ঘণ্টা অনুযায়ী মজুরি দেয়া, বকেয়া থাকা অবসর ভাতা ও মৃত্যু বীমার টাকা পরিশোধ, বরখাস্তকৃত সব শ্রমিককে পুনর্বহাল করা, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ী করা, চাহিদা অনুযায়ী পাটের মৌসুমে পাট কেনার জন্য মিলগুলোকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া, পাটশিল্পকে কৃষিশিল্পে রূপান্তর করা, মিলগুলোর আধুনিকায়ন করা ইত্যাদি।

আমরা মনে করি, এ দাবিগুলোর অধিকাংশই যৌক্তিক। যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার অচিরেই সহৃদয়তার সঙ্গে বিবেচনা করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তা না হলে পাটকলগুলোর দুরবস্থা চলতেই থাকবে।