বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার তৃতীয় টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণকাজ উদ্বোধনের পাশাপাশি ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’ নামে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি নতুন ড্রিম লাইনার্স এয়ারক্রাফট এবং বিমানের টিকিট বুকিংয়ের একটি মোবাইল অ্যাপও উদ্বোধন করেন তিনি।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ এবং নতুন এয়ারক্রাফট ও মোবাইল অ্যাপ বিমানের সার্বিক সেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। বিমানের এয়ারক্রাফট সংকটের কারণে প্রতি বছর হজের সময় হজযাত্রী পরিবহনে সমস্যা দেখা দেয়। এখন এ সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি টিকিট বুকিং নিয়ে সৃষ্ট সমস্যারও সমাধান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
জানা যায়, বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২-এর মোট স্পেস যেখানে ১০ লাখ বর্গফুট, সেখানে তৃতীয় টার্মিনালের স্পেস হবে ২২ লাখ বর্গফুটের বেশি। ফলে দুটি টার্মিনালের যেখানে বছরে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮০ লাখ, সেখানে টার্মিনাল-৩-এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে বছরে ১ কোটি ২০ লাখ এবং পরবর্তী সময়ে সম্প্রসারিত পর্যায়ে ১ কোটি ৬০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া যাবে। এছাড়া কার্গো ধারণক্ষমতা বর্তমান দুটি টার্মিনালের ২ লাখ টনের জায়গায় নতুনটির হবে প্রায় ৫ লাখ টন। এতে করে বিদেশে আসা-যাওয়া করা যাত্রীদের উন্নত সেবা প্রদানের পাশাপাশি সবকিছু সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে করা যাবে। বস্তুত, কেবল দেশের মানুষের বিদেশ যাত্রার হার যে বেড়েছে তাই নয়, আমাদের অর্থনীতি বর্ধিত আকার ধারণ করায় বিদেশিদেরও এ দেশে আসার হার বাড়ছে। ফলে অধিক যাত্রী ও কার্গো ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বিমানবন্দরের চাহিদা ও দাবি পুরনো।
সেটি পূরণে বিদ্যমান প্রধান বিমানবন্দর সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগও সরকার নিয়েছে, যা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, নতুন টার্মিনাল এবং নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের পাশাপাশি বিমানের সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সেবাদানের মানসিকতাও উন্নত করার দিকে নজর দিতে হবে। কারণ, বিদেশ থেকে মূল্যবান রেমিটেন্স পাঠানো যাত্রীরা প্রায়ই হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করে থাকেন। সেবাদাতাদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে কেবল অবকাঠামো দিয়ে যে মানসম্মত বিমানবন্দর তৈরি সম্ভব হবে না, তা বলাই বাহুল্য।
আশার কথা, অর্থনীতির আকার, যাত্রী আসা-যাওয়া এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত অনেক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে শাহজালাল বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে।
এর মধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হবে ৫ হাজার কোটি টাকা, বাকি টাকা আসবে জাইকার ফান্ড থেকে। আমরা আশা করব, চার বছর মেয়াদের নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট ব্যয়ে যথাসময়ে টার্মিনালটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্ধারিত ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারার বদনাম আমাদের রয়েছে। প্রকল্পের গুরুত্ব ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে বহির্গমনাগমন যাত্রী সেবায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে, এটাই প্রত্যাশা।