ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দখলদারদের দ্বিতীয় তালিকা: নদী দখল রোধে কার্যকর ভূমিকা কাম্য

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজধানীতে নদী রক্ষা কমিশনের কার্যালয়ে ২০১৮ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে নদ-নদী ও খাল দখলদারদের দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ এবং প্রয়োজনে তৃতীয় তালিকা তৈরির কথা বলা হয়েছে।

সংকল্পটি মহৎ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কেবল ‘তালিকা প্রকাশ ও তৈরির’ বৃত্তবলয়ে সবকিছু যেন ‘বন্দি’ না থাকে; সেদিকে মনোযোগ দেয়া জরুরি। ইতিপূর্বে আমরা জাতীয় সংসদে ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ হতে দেখেছি। অথচ এর পরের অধ্যায়টি বেদনাবিধুর।

তালিকায় নাম থাকা ঋণখেলাপিরা কী শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন কিংবা ঋণের কত শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছেন, সেই তথ্য আজ অবধি দেশবাসী জানতে পারেনি। সমস্যা হল, আমরা যতটা কাজ করি; বাদ্য বাজাই তারচেয়ে ঢের বেশি। নদী রক্ষা কমিশনের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

আশার কথা, নদী রক্ষা কমিশন এই প্রথম একটি প্রতিবেদন তৈরি ও তা প্রকাশেই সমর্থ হয়নি শুধু, ইতিমধ্যে সারা দেশের ৪৯ হাজার ১৬২ জন নদী ও খাল দখলদারের তালিকা ওয়েবাসাইটে প্রকাশ করে ১ বছরের মধ্যে তাদের উচ্ছেদ করার কথা বলা হয়েছে।

নদী রক্ষা কমিশন যদি এ কাজে সফল হয়, তাহলে অনেক বড় একটি কাজ সম্পন্ন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অভিজ্ঞতা বলে, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও তা দখল হওয়ার ঘটনা ঘটে।

সরকার অবশ্য এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উচ্ছেদের পর ফের দখল ঠেকাতে নদীতীরে বনায়নসহ অন্যান্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে এর পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা উচিত। যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন; আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা হলে ভবিষ্যতে নদী দখল ও দূষণ রোধসহ পরিবেশ রক্ষায় তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। একসময় জালের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য খরস্রোতা নদ-নদী ও খাল-বিল আমাদের জীবন-জীবিকা, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করলেও আজ সেগুলো জীর্ণশীর্ণ অথবা মরণাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। অনেক নদী ও খাল-বিল ইতিমধ্যে মানচিত্র থেকে হারিয়েও গেছে।

এজন্য দায়ী আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড ও অদূরদর্শিতা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়াও এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত দেশের নদ-নদীগুলো দখল করে বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আবাসিক প্লট, ইটভাটা ইত্যাদি গড়ে তোলার পাশাপাশি নানা ধরনের দূষণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ কাজে দুর্র্বৃত্তরা ক্ষমতাসীন দলের নাম-পরিচয় ব্যবহার করছে এবং তারা প্রচলিত আইন ও নিয়ম-কানুনের খুব একটা তোয়াক্কা করছে না।

দেশের নদ-নদীগুলোকে দখল, দূষণ ও ভরাট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হওয়া দরকার। ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের উল্লেখযোগ্য নদ-নদীগুলোর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে।

অভিন্ন নদ-নদীগুলোর গতি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারত ও নেপালের সঙ্গে গঠনমূলক উদ্যোগ নেয়া উচিত, যাতে তা কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়।

আন্তর্জাতিক নদ-নদীগুলোর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ও দাবি আরও জোরালো করার লক্ষ্যে শক্ত কূটনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করা জরুরি। সরকার এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি শক্ত হাতে নদী দখল ও দূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

দখলদারদের দ্বিতীয় তালিকা: নদী দখল রোধে কার্যকর ভূমিকা কাম্য

আপডেট টাইম : ০২:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজধানীতে নদী রক্ষা কমিশনের কার্যালয়ে ২০১৮ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে নদ-নদী ও খাল দখলদারদের দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ এবং প্রয়োজনে তৃতীয় তালিকা তৈরির কথা বলা হয়েছে।

সংকল্পটি মহৎ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কেবল ‘তালিকা প্রকাশ ও তৈরির’ বৃত্তবলয়ে সবকিছু যেন ‘বন্দি’ না থাকে; সেদিকে মনোযোগ দেয়া জরুরি। ইতিপূর্বে আমরা জাতীয় সংসদে ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ হতে দেখেছি। অথচ এর পরের অধ্যায়টি বেদনাবিধুর।

তালিকায় নাম থাকা ঋণখেলাপিরা কী শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন কিংবা ঋণের কত শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছেন, সেই তথ্য আজ অবধি দেশবাসী জানতে পারেনি। সমস্যা হল, আমরা যতটা কাজ করি; বাদ্য বাজাই তারচেয়ে ঢের বেশি। নদী রক্ষা কমিশনের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

আশার কথা, নদী রক্ষা কমিশন এই প্রথম একটি প্রতিবেদন তৈরি ও তা প্রকাশেই সমর্থ হয়নি শুধু, ইতিমধ্যে সারা দেশের ৪৯ হাজার ১৬২ জন নদী ও খাল দখলদারের তালিকা ওয়েবাসাইটে প্রকাশ করে ১ বছরের মধ্যে তাদের উচ্ছেদ করার কথা বলা হয়েছে।

নদী রক্ষা কমিশন যদি এ কাজে সফল হয়, তাহলে অনেক বড় একটি কাজ সম্পন্ন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অভিজ্ঞতা বলে, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও তা দখল হওয়ার ঘটনা ঘটে।

সরকার অবশ্য এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উচ্ছেদের পর ফের দখল ঠেকাতে নদীতীরে বনায়নসহ অন্যান্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে এর পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা উচিত। যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন; আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা হলে ভবিষ্যতে নদী দখল ও দূষণ রোধসহ পরিবেশ রক্ষায় তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। একসময় জালের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য খরস্রোতা নদ-নদী ও খাল-বিল আমাদের জীবন-জীবিকা, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করলেও আজ সেগুলো জীর্ণশীর্ণ অথবা মরণাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। অনেক নদী ও খাল-বিল ইতিমধ্যে মানচিত্র থেকে হারিয়েও গেছে।

এজন্য দায়ী আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড ও অদূরদর্শিতা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়াও এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত দেশের নদ-নদীগুলো দখল করে বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আবাসিক প্লট, ইটভাটা ইত্যাদি গড়ে তোলার পাশাপাশি নানা ধরনের দূষণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ কাজে দুর্র্বৃত্তরা ক্ষমতাসীন দলের নাম-পরিচয় ব্যবহার করছে এবং তারা প্রচলিত আইন ও নিয়ম-কানুনের খুব একটা তোয়াক্কা করছে না।

দেশের নদ-নদীগুলোকে দখল, দূষণ ও ভরাট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হওয়া দরকার। ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের উল্লেখযোগ্য নদ-নদীগুলোর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে।

অভিন্ন নদ-নদীগুলোর গতি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারত ও নেপালের সঙ্গে গঠনমূলক উদ্যোগ নেয়া উচিত, যাতে তা কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়।

আন্তর্জাতিক নদ-নদীগুলোর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ও দাবি আরও জোরালো করার লক্ষ্যে শক্ত কূটনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করা জরুরি। সরকার এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি শক্ত হাতে নদী দখল ও দূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।