বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা গণহত্যা রোধে মিয়ানমারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মিয়ানমারের করা আপত্তি খারিজ করে দিয়ে আইসিজে চার দফা আদেশ দিয়েছেন।
এগুলো হল- রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে হবে, দোষী সেনাসদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, গণহত্যার আলামত নষ্ট করা যাবে না এবং চার মাসের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতকে জানাতে হবে।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশে বলা হয়, রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার চলবে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কিংবা অন্য যে কোনো নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেন কোনো গণহত্যায় না জড়ায়, সে বিষয়ে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, এ মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ছয় মাস পরপর আদালতকে অগ্রগতি জানাতে হবে। রাখাইনে এখনও ছয় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে, আদেশে তাদেরও সুরক্ষা দিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, আইসিজের বিচারিক প্যানেলের ১৭ সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে এসব আদেশ দিয়েছেন।
আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুটি এক নতুন মাত্রা পেল। বলা যেতে পারে, এ রায়ের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের এক বড় নৈতিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। এক অর্থে এ নৈতিক বিজয় বাংলাদেশেরও। বাংলাদেশ গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রোহিঙ্গা সংকটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আসছে। বিধিবদ্ধ আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের নির্দেশনার মধ্যে সেসবই প্রতিফলিত হয়েছে।
আমরা আশা করব, আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশের পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বোধোদয় ঘটবে এবং প্রদত্ত চার নির্দেশনার প্রতিটিই তারা পালন করতে উদ্যোগী হবে। মিয়ানমার যতই অস্বীকার করুক না কেন রাখাইন রাজ্যে কোনো গণহত্যা হয়নি, বিশ্ব সম্প্রদায় এখন আর তা আমলে নেবে না।
আমরা মনে করি, চীন ও রাশিয়ার মতো যেসব দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বন করে আসছে, তাদেরও বোধোদয় ঘটবে এবং তারা রোহিঙ্গা সংকট দূরীকরণে বাংলাদেশের পক্ষে এসে দাঁড়াবে।
রোহিঙ্গা সংকটটি আইসিজের নজরে আনায় আমরা গাম্বিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। প্রকৃতপক্ষে গাম্বিয়া বিশ্ব মানবতার পক্ষেই দাঁড়িয়ে মামলাটি দায়ের করেছিল। গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবু বকর মারি তামদাদু আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশকে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ নিপীড়ন ও বঞ্চনা অবসানের পথে একটি ছোট্ট পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। আমরা এটাকে ছোট্ট পদক্ষেপ বলতে চাই না।
এটা ঠিক, আইসিজের বর্তমান আদেশের ফলে একদিনেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হয়ে যাবে না; তবে একটি প্রক্রিয়ার সূচনা তো হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার শেষটা নিশ্চয়ই ভালো হবে। অন্তর্বর্তী আদেশের পর মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে নিঃসন্দেহে।
আমাদের কথা হল, এই চাপ আরও বাড়াতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে চীন, রাশিয়াসহ যেসব দেশ মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বন করছে, তাদেরও আইসিজের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। আমরা রোহিঙ্গা সংকটের আশু ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দেখার প্রত্যাশায় রইলাম।