ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্রসবাঁধের কারণে হাওরে এমন বন্যা : মেজর অব. মো. আখতারুজ্জামান

কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, জামালপুর ও নেত্রকোণা এই চারটি জেলা নিয়ে গঠিত হাওরাঞ্চল এলাকা। এসব হাওরাঞ্চল মূলত নিম্নাঞ্চল এলাকা। এসব এলাকা থেকে ভারতের মেঘালয় পাহাড় খুব দূরে না হওয়ায় বৈশাখে খুব সহজেই পানির ঢল নেমে আসে। এতে ডুবে যায় হাওরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলো। পাহাড়ি ঢল প্রথমে আসে পাহাড়ের আশপাশের নদীতে। তারপর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পানি চলে আসে হাওর এলাকায়। এতে করে প্লাবিত হয় হাওরের নিচের এলাকা।

হাওর আগে ছিল মৎস্যচাষীদের জন্য। পাকিস্তান আমলের পর থেকে মৎস্যচাষ বাদ দিয়ে মানুষ সেখানে চাষাবাদ শুরু করে। কিন্তু হাওরের এই এলাকাগুলো চাষাবাদের জন্য নয়। এই নিম্নাঞ্চল থাকবে পানিতে ভরপুর। সেখানে করতে হবে মাছ চাষ। আর উপরের অঞ্চলগুলোতে হওয়ার কথা ধান চাষ। এখন এই পরিস্থিতি পুরোটাই উল্টো। যেখানে হওয়ার কথা ছিল চাষাবাদ সেখানে হচ্ছে মৎস্য চাষ। এর জন্য সবচেয়ে ভালো হত একমাস আগেই চাষাবাদ করা। এই নিয়ম ফলো করলে চাষীরা এত ক্ষতির সম্মুখীন হত না। কিন্তু এই পরিস্থিতি চাইলেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

তবে এই বৃষ্টি আল্লাহর একটি অশেষ নিয়ামত। যারা উপরিঞ্চলে বসবাস করে তাদের জন্য এই বৃষ্টি অনেক মঙ্গলের। যাদের মৎস্য চাষের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল। তাঁরা তাদের প্রয়োজনীয় পানি পেয়েছে। এখন ফসলের পাশাপাশি আরেকটি কথা বেশি শোনা যাচ্ছে, তা হল মাছের অকাল মরণ। পাহাড়ি ঢলে যে পানি আসে তা অত্যন্ত স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। এই পানি এত ভালো যে তা ফুটিয়ে পান করা যায়। তবে আমাদের দেশের মানুষ চাষের জমিতে কীটনাশক মিশিয়ে রাখে। ফলে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে পানির সঙ্গে এই কীটনাশক মিশে গিয়ে পানিকে বিষাক্ত করে ফেলে। এই কারণে পানির ঢলে ভেসে আসা মাছগুলো অকালে মারা যায়।

এজন্য পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। এর আগেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এই এলাকাগুলোতে বাঁধ নির্মাণ করেছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে ব্যাপক ত্রুটিপূর্ণ ছিল। খাল সংস্কারের নামে প্রচুর লুটপাট হয়। সেই সময়ে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির আখড়া বসিয়েছিল। তবে এখন যে দুর্নীতি হচ্ছে না তা নয়। এখনো হচ্ছে। পাউবো খাল খননের সময় ভালো মত খাল করেনি। ফলে ব্যাপক ঢলের কারণে হাওর ভরে যায়।

আমাদের হাওর ডুবে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল ক্রস আকারের বাঁধ নির্মাণ। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি তার সঠিক গতিপথ ফিরে পায় না। এর ফলে পানি সহজেই খাল বিল হয়ে হাওরে এসে পড়ে। এর জন্য নদীর অতিবাহিকায় গতিপথ ঠিক রেখে বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। পানি চলাচল করতে বাঁধে বেশ কিছু ফুটো রাখতে হবে। এর ফলে পানিতে হাওরাঞ্চল তলিয়ে যাবে না। হাওর এলাকায় ইঁদুরের উৎপাত বেশি হওয়ায় সেগুলো বাঁধে গর্ত করতো। এর কারণে বাঁধগুলো দীর্ঘস্থায়ী হত না। বেশ কয়েক বছরের মধ্য সেগুলো নষ্ট হয়ে যেত। নদীর অববাহিকা ঠিক রেখে বাঁধ নির্মাণ করলে তা অনেক বছর টিকে থাকবে। এভাবে বাঁধ নির্মাণ হলে চাষীরা সহজেই ফসল আবাদ করতে পারবে। তাঁদের কষ্টের ফসল ডুবে যাওয়ার চিন্তা থাকবে না। অপরদিকে মাছ চাষীরাও সহজেই মাছ চাষ করতে পারবে।

মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ক্রসবাঁধের কারণে হাওরে এমন বন্যা : মেজর অব. মো. আখতারুজ্জামান

আপডেট টাইম : ০৪:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭

কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, জামালপুর ও নেত্রকোণা এই চারটি জেলা নিয়ে গঠিত হাওরাঞ্চল এলাকা। এসব হাওরাঞ্চল মূলত নিম্নাঞ্চল এলাকা। এসব এলাকা থেকে ভারতের মেঘালয় পাহাড় খুব দূরে না হওয়ায় বৈশাখে খুব সহজেই পানির ঢল নেমে আসে। এতে ডুবে যায় হাওরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলো। পাহাড়ি ঢল প্রথমে আসে পাহাড়ের আশপাশের নদীতে। তারপর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পানি চলে আসে হাওর এলাকায়। এতে করে প্লাবিত হয় হাওরের নিচের এলাকা।

হাওর আগে ছিল মৎস্যচাষীদের জন্য। পাকিস্তান আমলের পর থেকে মৎস্যচাষ বাদ দিয়ে মানুষ সেখানে চাষাবাদ শুরু করে। কিন্তু হাওরের এই এলাকাগুলো চাষাবাদের জন্য নয়। এই নিম্নাঞ্চল থাকবে পানিতে ভরপুর। সেখানে করতে হবে মাছ চাষ। আর উপরের অঞ্চলগুলোতে হওয়ার কথা ধান চাষ। এখন এই পরিস্থিতি পুরোটাই উল্টো। যেখানে হওয়ার কথা ছিল চাষাবাদ সেখানে হচ্ছে মৎস্য চাষ। এর জন্য সবচেয়ে ভালো হত একমাস আগেই চাষাবাদ করা। এই নিয়ম ফলো করলে চাষীরা এত ক্ষতির সম্মুখীন হত না। কিন্তু এই পরিস্থিতি চাইলেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

তবে এই বৃষ্টি আল্লাহর একটি অশেষ নিয়ামত। যারা উপরিঞ্চলে বসবাস করে তাদের জন্য এই বৃষ্টি অনেক মঙ্গলের। যাদের মৎস্য চাষের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল। তাঁরা তাদের প্রয়োজনীয় পানি পেয়েছে। এখন ফসলের পাশাপাশি আরেকটি কথা বেশি শোনা যাচ্ছে, তা হল মাছের অকাল মরণ। পাহাড়ি ঢলে যে পানি আসে তা অত্যন্ত স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। এই পানি এত ভালো যে তা ফুটিয়ে পান করা যায়। তবে আমাদের দেশের মানুষ চাষের জমিতে কীটনাশক মিশিয়ে রাখে। ফলে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে পানির সঙ্গে এই কীটনাশক মিশে গিয়ে পানিকে বিষাক্ত করে ফেলে। এই কারণে পানির ঢলে ভেসে আসা মাছগুলো অকালে মারা যায়।

এজন্য পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। এর আগেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এই এলাকাগুলোতে বাঁধ নির্মাণ করেছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে ব্যাপক ত্রুটিপূর্ণ ছিল। খাল সংস্কারের নামে প্রচুর লুটপাট হয়। সেই সময়ে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির আখড়া বসিয়েছিল। তবে এখন যে দুর্নীতি হচ্ছে না তা নয়। এখনো হচ্ছে। পাউবো খাল খননের সময় ভালো মত খাল করেনি। ফলে ব্যাপক ঢলের কারণে হাওর ভরে যায়।

আমাদের হাওর ডুবে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল ক্রস আকারের বাঁধ নির্মাণ। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি তার সঠিক গতিপথ ফিরে পায় না। এর ফলে পানি সহজেই খাল বিল হয়ে হাওরে এসে পড়ে। এর জন্য নদীর অতিবাহিকায় গতিপথ ঠিক রেখে বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। পানি চলাচল করতে বাঁধে বেশ কিছু ফুটো রাখতে হবে। এর ফলে পানিতে হাওরাঞ্চল তলিয়ে যাবে না। হাওর এলাকায় ইঁদুরের উৎপাত বেশি হওয়ায় সেগুলো বাঁধে গর্ত করতো। এর কারণে বাঁধগুলো দীর্ঘস্থায়ী হত না। বেশ কয়েক বছরের মধ্য সেগুলো নষ্ট হয়ে যেত। নদীর অববাহিকা ঠিক রেখে বাঁধ নির্মাণ করলে তা অনেক বছর টিকে থাকবে। এভাবে বাঁধ নির্মাণ হলে চাষীরা সহজেই ফসল আবাদ করতে পারবে। তাঁদের কষ্টের ফসল ডুবে যাওয়ার চিন্তা থাকবে না। অপরদিকে মাছ চাষীরাও সহজেই মাছ চাষ করতে পারবে।

মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য।