বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা খাতে নৈরাজ্য দীর্ঘদিনের। অটোরিকশার ভাড়ার হার ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয় প্রথম দুই কিলোমিটার ৪০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা, প্রতি মিনিট অপেক্ষার জন্য দুই টাকা।
এছাড়া মালিকদের জমা নির্ধারণ করা হয় ৯০০ টাকা। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা চালক, মালিক কেউই এসব নিয়ম মানছেন না। মালিকরা জমা নেন ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা। আর এর দোহাই দিয়ে মিটারে যেতে চান না চালকরা, এমনকি কেউ কেউ যেতে রাজি হলেও মিটারের চেয়ে অনেক বেশি টাকা দাবি করেন।
চুক্তিতে গেলেও চালকরা মিটার চালু রাখেন এবং ট্রাফিক পুলিশ ধরলে ‘মিটারে যাচ্ছি’ বলার জন্য যাত্রীদের চাপ দেন। এছাড়া যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতেও রাজি হন না বেশিরভাগ চালক। এসব কারণে সিএনজি অটোরিকশা চালুর দুই দশক হতে চললেও মিলছে না প্রত্যাশিত যাত্রীসেবা। এ অবস্থায় এ খাতের মালিক-চালকদের নৈরাজ্য রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতনতার বিকল্প নেই।
অটোরিকশা খাতে নৈরাজ্য কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা আঁচ করা যায় বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণ থেকে। এতে বলা হয়, সিএনজিচালিত অটোরিকশার ৯৮ শতাংশই চুক্তিতে চলে।
এছাড়া যেসব সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলে সেগুলোর ৯২ শতাংশই মিটারের বাইরে ২০ থেকে ৫০ টাকা বকশিশ দাবি করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সরকারি ছুটি অথবা যে কোনো কারণে পরিবহন সংকট হলে এ বকশিশের অঙ্ক ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
আর যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে রাজি হন না ৮৮ শতাংশ চালক। অথচ সিএনজি অটোরিকশা চালুই করা হয়েছিল যাত্রী হয়রানি রোধ, নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশে গন্তব্যে পৌঁছানো এবং আরামদায়ক নগর ট্রান্সপোর্ট নিশ্চিত করার জন্য। এটি সত্য, দীর্ঘ দুই দশকেও সেটি নিশ্চিত না করার পেছনে হয়তো যাত্রীদের কিছুটা দায় আছে। তবে সিএনজি অটোরিকশা নৈরাজ্যের মূল কারণ এটি নয়।
মালিক-চালকের বাড়তি লোভ, ট্রাফিক পুলিশের অসাধু সদস্যদের অনৈতিক সুবিধা আদায়, সর্বোপরি সদিচ্ছার অভাবের কারণে সিএনজি অটোরিকশা চালুর মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যায়নি। বাসেও সিটিংয়ের নামে বাড়তি ভাড়া নিয়ে গাদাগাদি করে লোক তোলা এবং যখন-তখন যাত্রীদের জিম্মি করার সংস্কৃতি চালু রয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এ মেগাসিটির এমন পরিবহন নৈরাজ্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে এবং সিএনজি অটোরিকশা ও বাসসহ গণপরিবহনের নৈরাজ্য দূর করে মানসম্মত গণপরিবহন নিশ্চিত করা হবে- এটাই কাম্য।