ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্ধিত চাঁদা প্রসঙ্গে অবসর ও কল্যাণ সচিবদ্বয়ের বক্তব্য

বাঙালি কন্ঠ নিউজঃ বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর তহবিলে ৪ শতাংশ ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলে ২ শতাংশ মোট ৬ শতাংশ টাকা তাঁদের বেতন থেকে জমা রাখা হতো। জুলাই ২০১৭ থেকে ১০ শতাংশ টাকা জমা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পর আমরা শিক্ষক সমাজের একটি অংশের কিছু প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছি। এ সিদ্ধান্তের ওপর ভর করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এমনভাবে করা হচ্ছে যেন মনে হয় সরকার শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এটি শিক্ষক-কর্মচারীগণকে উত্তেজিত করা ছাড়া অন্য কিছু নয়, কারণ এ টাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ তহবিলেই জমা হচ্ছে। বোর্ড ও ট্রাস্টের সদস্য পদে রয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তাদের উপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে অবসর তহবিলে ৪ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ তহবিলে ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ, এই মোট ১০ শতাংশ টাকা জমা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আলোচনায় সরব অংশগ্রহণ করেছেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বেতন থেকে আরো ৪ শতাংশ টাকা জমা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিস্ময়কর যে, আজ যেভাবে তারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন যেন কিছুই জানতেন না! সিদ্ধান্তটি হয়েছে আজ থেকে ১ বছর ৩ মাস আগে, তখনও আমরা নতুন বেতন স্কেল পাইনি। সেদিন অবস্থাটি এমন ছিল যে, নতুন বেতন স্কেল পেলে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ  টাকা কেটে রাখলেও কারোর কোন আপত্তি নেই। তখন কেন এবং কোন্ পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্তের সাথে আমরা সকলেই (বোর্ডের সদস্য বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ) একমত হয়েছিলাম?
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সমস্যা-সংকটটি এতই তীব্র যে, অবসরে গিয়ে আবেদন করার ৪ বছর পরে একজন শিক্ষক তার প্রাপ্য এককালীন অবসর ও কল্যাণ ভাতার টাকা নিতে পারেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রত্যেক বছরে ৬ মাস সময় প্রলম্বিত হবে। আজ যারা চাকুরিতে আছেন, তাদের মধ্যে যিনি ২০২০ খ্রিস্টাব্দে অবসরে যাবেন, অবসর ভাতা পেতে তাঁকে সাড়ে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে যিনি অবসরে যাবেন তিনি ৮ বছর পর অবসর ভাতা পাবেন এবং যিনি ২০৩০ খ্রিস্টাব্দে অবসরে যাবেন তাকে ১১ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এমন একটি দুঃসহ দুর্যোগ থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে মুক্তি দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা সচিব ও নীতি-নির্ধারকগণকে আমরা বলেছি, এই মুহূর্তে অপেক্ষমান ৪০ হাজার অবসর ভাতার আবেদন এবং ২৮ হাজার কল্যাণ ভাতার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। সরকারের নীতি-নির্ধারকগণ বলেছেন ৩ হাজার কোটি টাকা সরকারের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয় বরং বাজেট থেকে সরকার কিছু বরাদ্দ দিতে পারে, পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীগণের বেতন থেকেও কিছু বর্ধিত অংশগ্রহণ থাকা বাঞ্ছনীয়। সেভাবে আলাপ-আলোচনা করে আজকের এই বর্ধিত ৪ শতাংশ টাকা জমার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক সরকারের নীতি-নির্ধারক পর্যায় থেকে তারা এগিয়ে এসেছেন। সাড়ে ৩ শত কোটি টাকা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য থোক বরাদ্দ দিয়েছেন এবং ৫০০ কোটি টাকা এনডাউমেন্ট ফান্ড হিসেবে দিয়েছেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক এই যে, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা চালিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা নিতে, শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেপিয়ে তুলতে কেউ কেউ বলছেন, একজন শিক্ষকের কাছ থেকে নাকি ৯ লাখ টাকা কেটে রাখা হবে এবং অবসরে গেলে তাঁকে ৭ লাখ টাকা অবসর ও কল্যাণ থেকে দেয়া হবে। এ ধরণের সর্বৈব মিথ্যা কল্পনাপ্রসূত বিকৃত তথ্য সত্যিকারের কোন শিক্ষক দিতে পারেন না।
২০১৭ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে অবসরে যাওয়া একজন অধ্যক্ষ ২৫ বছরে অবসর তহবিলে জমা করেছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, কল্যাণ তহবিলে জমা করেছেন ৯৪ হাজার টাকা, তিনি অবসর থেকে পাবেন ৩১ লাখ টাকা এবং কল্যাণ থেকে পাবেন ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। একজন প্রধান শিক্ষক/সুপার ২৫ বছরে অবসর তহবিলে জমা করেছেন ৮৯ হাজার টাকা, কল্যাণ তহবিলে জমা করেছেন ৫৫ হাজার টাকা, তিনি অবসর থেকে পাবেন ১৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং কল্যাণ থেকে পাবেন ৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। একজন সিনিয়র শিক্ষক ২৫ বছরে অবসরে জমা করেছেন ৬৬ হাজার টাকা, কল্যাণে ৪০ হাজার টাকা, তিনি অবসর থেকে পাবেন ১৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং কল্যাণ থেকে পাবেন ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হিসাবকে পাশ কাটিয়ে অস্বচ্ছ হিসাবের ধোঁয়াশায় ফেলে শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে কেউ কেউ বিভ্রান্ত করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন। অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, উগ্র-ধর্মান্ধ মতাদর্শে বিশ্বাসী ‘ভুল অংক বিশারদদের’ খপ্পরে পতিত হয়ে সহজ সরলপ্রাণ শিক্ষকবৃন্দ নিশ্চয়ই ভুল ফলাফল গ্রহণ করবেন না।
ভবিষ্যতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণের প্রাপ্য অবসর ও কল্যাণের টাকা পাওয়ার অসহনীয় যন্ত্রণাদায়ক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে তাদের টাকা অনলাইন প্রক্রিয়ায় হাতে-হাতে (মোবাইলে) পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে আমরা বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
‘চাঁদে মানুষের ছবি’ দেখানোর মতোই ইউটোপিয় হিসাবের চিত্র দেখিয়ে ভবিষ্যতের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণকে যারা উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের কথা হলো, মিথ্যা সংবাদ ও বিকৃত তথ্য পরিবেশন করে শিক্ষাঙ্গণে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা কেউ করবেন না।
২০১৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই থেকে বর্ধিত হারে টাকা জমা করার পর ২০২০ খ্রিস্টাব্দের জুন পর্যন্ত অবসর সুবিধা বোর্ডে একজন অধ্যক্ষ ৬ শতাংশ হারে ২৫ বছরে জমা করবেন ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা, তিনি অবসর ভাতা পাবেন (কমপক্ষে ১টি ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টসহ) ৩৪ লাখ ১২ হাজার টাকা। কল্যাণ ট্রাস্টে তিনি ৪শতাংশ হারে ২৫ বছরে জমা করবেন ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, তিনি কল্যাণ ভাতা পাবেন ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। একজন সিনিয়র শিক্ষক ২৫ বছরে অবসরে জমা করবেন ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা, কল্যাণে ৭১ হাজার টাকা, তিনি অবসর থেকে পাবেন ১৫ লাখ টাকা এবং কল্যাণ থেকে পাবেন ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। যে উদভ্রান্ত কতিপয় ব্যক্তি ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের কল্পিত হিসাব দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভ্রান্ত করছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের একটিই কথা, তাদের ‘ভিশন ২০৩০’ অবাস্তব। কারণ, বর্তমান বেতন স্কেল ২০৩০/৩৫ খ্রিস্টাব্দে স্থির জায়গায় থাকবে না। সেই সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, তাদের বেতন কাঠামো, গোটা শিক্ষাব্যবস্থা একটি উন্নততর পর্যায়ে উপনীত হবেই হবে।
আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত শিক্ষক-কর্মচারী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা জাতীয়করণের মৌল দাবী থেকে এক চুল সরে আসিনি। ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতাসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অংশ হিসাবে বিশ্বমান উপযোগী শিক্ষা বাস্তবায়নের অন্যান্য ন্যায়সঙ্গত দাবী আমরাই আদায় করবো। জাতীয় নির্বাচনের হুমকি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বর্তমান সরকারকে ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে দাবী আদায় করার কৌশল কেবল একটি অপকৌশল ছাড়া কিছুই নয়। এ অপকৌশল থেকে নিবৃত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহবান জানাচ্ছি। আসুন আলাপ-আলোচনা করে বর্তমানে যারা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী অপেক্ষার দুর্বিসহ যন্ত্রণা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন তাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান করি এবং নিকট ভবিষ্যতে যারা অবসরে যাবেন তারা যেন বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে করতে দুঃখ কষ্টের অতল অন্ধকারে নিমজ্জিত না হন তার জন্য সচেষ্ট হই।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্ধিত চাঁদা প্রসঙ্গে অবসর ও কল্যাণ সচিবদ্বয়ের বক্তব্য

আপডেট টাইম : ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০১৭

বাঙালি কন্ঠ নিউজঃ বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর তহবিলে ৪ শতাংশ ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলে ২ শতাংশ মোট ৬ শতাংশ টাকা তাঁদের বেতন থেকে জমা রাখা হতো। জুলাই ২০১৭ থেকে ১০ শতাংশ টাকা জমা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পর আমরা শিক্ষক সমাজের একটি অংশের কিছু প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছি। এ সিদ্ধান্তের ওপর ভর করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এমনভাবে করা হচ্ছে যেন মনে হয় সরকার শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এটি শিক্ষক-কর্মচারীগণকে উত্তেজিত করা ছাড়া অন্য কিছু নয়, কারণ এ টাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ তহবিলেই জমা হচ্ছে। বোর্ড ও ট্রাস্টের সদস্য পদে রয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তাদের উপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে অবসর তহবিলে ৪ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ তহবিলে ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ, এই মোট ১০ শতাংশ টাকা জমা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আলোচনায় সরব অংশগ্রহণ করেছেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বেতন থেকে আরো ৪ শতাংশ টাকা জমা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিস্ময়কর যে, আজ যেভাবে তারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন যেন কিছুই জানতেন না! সিদ্ধান্তটি হয়েছে আজ থেকে ১ বছর ৩ মাস আগে, তখনও আমরা নতুন বেতন স্কেল পাইনি। সেদিন অবস্থাটি এমন ছিল যে, নতুন বেতন স্কেল পেলে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ  টাকা কেটে রাখলেও কারোর কোন আপত্তি নেই। তখন কেন এবং কোন্ পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্তের সাথে আমরা সকলেই (বোর্ডের সদস্য বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ) একমত হয়েছিলাম?
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সমস্যা-সংকটটি এতই তীব্র যে, অবসরে গিয়ে আবেদন করার ৪ বছর পরে একজন শিক্ষক তার প্রাপ্য এককালীন অবসর ও কল্যাণ ভাতার টাকা নিতে পারেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রত্যেক বছরে ৬ মাস সময় প্রলম্বিত হবে। আজ যারা চাকুরিতে আছেন, তাদের মধ্যে যিনি ২০২০ খ্রিস্টাব্দে অবসরে যাবেন, অবসর ভাতা পেতে তাঁকে সাড়ে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে যিনি অবসরে যাবেন তিনি ৮ বছর পর অবসর ভাতা পাবেন এবং যিনি ২০৩০ খ্রিস্টাব্দে অবসরে যাবেন তাকে ১১ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এমন একটি দুঃসহ দুর্যোগ থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে মুক্তি দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা সচিব ও নীতি-নির্ধারকগণকে আমরা বলেছি, এই মুহূর্তে অপেক্ষমান ৪০ হাজার অবসর ভাতার আবেদন এবং ২৮ হাজার কল্যাণ ভাতার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। সরকারের নীতি-নির্ধারকগণ বলেছেন ৩ হাজার কোটি টাকা সরকারের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয় বরং বাজেট থেকে সরকার কিছু বরাদ্দ দিতে পারে, পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীগণের বেতন থেকেও কিছু বর্ধিত অংশগ্রহণ থাকা বাঞ্ছনীয়। সেভাবে আলাপ-আলোচনা করে আজকের এই বর্ধিত ৪ শতাংশ টাকা জমার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক সরকারের নীতি-নির্ধারক পর্যায় থেকে তারা এগিয়ে এসেছেন। সাড়ে ৩ শত কোটি টাকা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য থোক বরাদ্দ দিয়েছেন এবং ৫০০ কোটি টাকা এনডাউমেন্ট ফান্ড হিসেবে দিয়েছেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক এই যে, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা চালিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা নিতে, শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেপিয়ে তুলতে কেউ কেউ বলছেন, একজন শিক্ষকের কাছ থেকে নাকি ৯ লাখ টাকা কেটে রাখা হবে এবং অবসরে গেলে তাঁকে ৭ লাখ টাকা অবসর ও কল্যাণ থেকে দেয়া হবে। এ ধরণের সর্বৈব মিথ্যা কল্পনাপ্রসূত বিকৃত তথ্য সত্যিকারের কোন শিক্ষক দিতে পারেন না।
২০১৭ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে অবসরে যাওয়া একজন অধ্যক্ষ ২৫ বছরে অবসর তহবিলে জমা করেছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, কল্যাণ তহবিলে জমা করেছেন ৯৪ হাজার টাকা, তিনি অবসর থেকে পাবেন ৩১ লাখ টাকা এবং কল্যাণ থেকে পাবেন ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। একজন প্রধান শিক্ষক/সুপার ২৫ বছরে অবসর তহবিলে জমা করেছেন ৮৯ হাজার টাকা, কল্যাণ তহবিলে জমা করেছেন ৫৫ হাজার টাকা, তিনি অবসর থেকে পাবেন ১৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং কল্যাণ থেকে পাবেন ৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। একজন সিনিয়র শিক্ষক ২৫ বছরে অবসরে জমা করেছেন ৬৬ হাজার টাকা, কল্যাণে ৪০ হাজার টাকা, তিনি অবসর থেকে পাবেন ১৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং কল্যাণ থেকে পাবেন ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হিসাবকে পাশ কাটিয়ে অস্বচ্ছ হিসাবের ধোঁয়াশায় ফেলে শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে কেউ কেউ বিভ্রান্ত করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন। অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, উগ্র-ধর্মান্ধ মতাদর্শে বিশ্বাসী ‘ভুল অংক বিশারদদের’ খপ্পরে পতিত হয়ে সহজ সরলপ্রাণ শিক্ষকবৃন্দ নিশ্চয়ই ভুল ফলাফল গ্রহণ করবেন না।
ভবিষ্যতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণের প্রাপ্য অবসর ও কল্যাণের টাকা পাওয়ার অসহনীয় যন্ত্রণাদায়ক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে তাদের টাকা অনলাইন প্রক্রিয়ায় হাতে-হাতে (মোবাইলে) পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে আমরা বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
‘চাঁদে মানুষের ছবি’ দেখানোর মতোই ইউটোপিয় হিসাবের চিত্র দেখিয়ে ভবিষ্যতের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণকে যারা উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের কথা হলো, মিথ্যা সংবাদ ও বিকৃত তথ্য পরিবেশন করে শিক্ষাঙ্গণে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা কেউ করবেন না।
২০১৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই থেকে বর্ধিত হারে টাকা জমা করার পর ২০২০ খ্রিস্টাব্দের জুন পর্যন্ত অবসর সুবিধা বোর্ডে একজন অধ্যক্ষ ৬ শতাংশ হারে ২৫ বছরে জমা করবেন ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা, তিনি অবসর ভাতা পাবেন (কমপক্ষে ১টি ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টসহ) ৩৪ লাখ ১২ হাজার টাকা। কল্যাণ ট্রাস্টে তিনি ৪শতাংশ হারে ২৫ বছরে জমা করবেন ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, তিনি কল্যাণ ভাতা পাবেন ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। একজন সিনিয়র শিক্ষক ২৫ বছরে অবসরে জমা করবেন ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা, কল্যাণে ৭১ হাজার টাকা, তিনি অবসর থেকে পাবেন ১৫ লাখ টাকা এবং কল্যাণ থেকে পাবেন ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। যে উদভ্রান্ত কতিপয় ব্যক্তি ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের কল্পিত হিসাব দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভ্রান্ত করছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের একটিই কথা, তাদের ‘ভিশন ২০৩০’ অবাস্তব। কারণ, বর্তমান বেতন স্কেল ২০৩০/৩৫ খ্রিস্টাব্দে স্থির জায়গায় থাকবে না। সেই সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, তাদের বেতন কাঠামো, গোটা শিক্ষাব্যবস্থা একটি উন্নততর পর্যায়ে উপনীত হবেই হবে।
আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত শিক্ষক-কর্মচারী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা জাতীয়করণের মৌল দাবী থেকে এক চুল সরে আসিনি। ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতাসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অংশ হিসাবে বিশ্বমান উপযোগী শিক্ষা বাস্তবায়নের অন্যান্য ন্যায়সঙ্গত দাবী আমরাই আদায় করবো। জাতীয় নির্বাচনের হুমকি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বর্তমান সরকারকে ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে দাবী আদায় করার কৌশল কেবল একটি অপকৌশল ছাড়া কিছুই নয়। এ অপকৌশল থেকে নিবৃত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহবান জানাচ্ছি। আসুন আলাপ-আলোচনা করে বর্তমানে যারা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী অপেক্ষার দুর্বিসহ যন্ত্রণা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন তাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান করি এবং নিকট ভবিষ্যতে যারা অবসরে যাবেন তারা যেন বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে করতে দুঃখ কষ্টের অতল অন্ধকারে নিমজ্জিত না হন তার জন্য সচেষ্ট হই।