বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বিদ্যালয়বিহীন ১১টি উপজেলায় আধুনিক হোস্টেল সুবিধাসহ আবাসিক স্কুল করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পের ডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)-কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন পেলে শিগগিরই তা একনেকের সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে পার্বত্য অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। তারই আলোকে তিন পার্বত্য জেলায় উন্নতমানের আবাসিক সুবিধাসহ ১১টি সরকারি স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত বছর থেকে এ নিয়ে বেশ কয়েক দফায় সভা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রকল্প এলাকার প্রকৃত চাহিদা যাছাই করতে শেষ দফায় একটি সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যে ব্যানবেইস সমীক্ষা প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের কাছে দাখিল করবে। তিনি বলেন, এর বাইরে ওই অঞ্চলের বিদ্যমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও প্রকল্পের আওতায় আবাসিক হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বান্দরবান জেলার ৫টি উপজেলা, আর রাঙ্গামাটিতে ২টি এবং খাগড়াছড়ি জেলার ৪টি উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো স্কুল নেই। ‘তিন পার্বত্য জেলায় নতুন আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন ও বিদ্যমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় আবাসিক ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয়, প্রকল্প এলাকা, জমির প্রাপ্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৪ দমমিক ২৬ কোটি টাকা।
পুরো টাকা সরকার বহন করবে। সূত্র জানায়, গত বছরের ৮ই আগস্ট প্রকল্প যাচাই কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মতে, নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচন করতে একাধিকবার সভা করা হয়েছে। সভায় তিন জেলার ১০টি স্থানের সুপারিশ করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মডেলসহ মোট ২৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি সরকারি, ১০টি বেসরকারি মডেল। আরো নতুন করে ১১টি বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবক’টিতেই হোস্টেল সুবিধাসহ ১০টি আধুনিকমানের একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে পুরাতন ২৯টিতে ১৫০ সিটবিশিষ্ট ৭৪টি হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি ছাত্রাবাস ও ৩৮টি ছাত্রীনিবাস রয়েছে।
নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত স্থানগুলো হচ্ছে- বান্দরবানের বান্দরবান সদর উপজেলার হ্লাপাইমুখ, আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়ন, রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা, রোয়াংছড়ি উপজেলার বেতছড়া (তারছা) এবং সর্বশেষ পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ অনুযায়ী থানচি উপজেলার রোমাক্রীতে একটি বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়ন, বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন এবং খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার স্থান এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে রামগড় উপজেলার লামকুপাড়া, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার হাজাছড়ি মাস্টারপাড়া, মাটিরাঙা উপজেলার ধলিয়া কে স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পটি চূড়ান্ত করতে গত ২৩শে অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন সভার সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, হোস্টেল ও হোস্টেলের আসন সংখ্যার প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যানবেইসকে সমীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য হোস্টেল ও আসন সংখ্যার পুনর্নির্ধারণ করে প্রতিবেদনটি নভেম্বর মাসের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া হোস্টেলের সংখ্যা নিরূপণের ক্ষেত্রে চলমান প্রকল্পের সঙ্গে দ্বৈধতা পরিহার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি হোস্টেলে শিক্ষকদের জন্য ডরমেটরি আকারে আবাসন সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি ফ্লোর সংস্থান রাখা হবে।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে ওই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গমন উপযোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা, বিদ্যমান স্কুলগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অবকাঠামো, আবাসিক সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, কেননা পার্বত্য এলাকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আয় তাদেরকে হোস্টেলে রেখে পড়াশুনা করানোর জন্য যথেষ্ট কিনা তা বিবেচনা করতে হবে।
এ কারণে ব্যানবেইসকে সমীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি প্রকল্পের চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের কাজ করছে। পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বলেন, ডিপিপি পুনর্গঠন করে পুনরায় যাচাই কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে। এরপর দ্রুত তা একনেকের সভায় পাঠানো হবে। খুব শিগগিরই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে বলে আশা করা হচ্ছে।