বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এবার তলিয়ে গেছে হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উঁচু এলাকার ফসল। করাঙ্গী এবং সুতাং নদীর পানি দু’কূল বেয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত কয়েক দিনের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলে সুতাং এবং করাঙ্গী নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করে পাকা ফসল তলিয়ে গেছে। এতে জেলার সদর, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট ও বাহুবলের উঁচু জমিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরেজমিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নূরপুর লোকায় দেখা যায়, সুতাং নদীর দুই কূল পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকার চাইল্যার হাওরে পানি প্রবেশ করে
তলিয়ে গেছে পাকা ধান। হাওর এলাকায় বোরো ধান অনেক আগে থেকে কাটা শুরু হলেও উঁচু এলাকায় কাটা শুরু হয় দেরিতে। যে কারণে আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে কৃষকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তলিয়ে যাচ্ছে পাকা ধান।
নূরপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ঝন্টু জানান, চাইল্যার হাওরে নূরপুরসহ আশপাশের আটটি গ্রামের কৃষকরা ধান আবাদ করেন। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে হাওর তলিয়ে গেছে। কৃষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। ৭৫ শতাংশ ধান পানির নিচে। নূরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুখলিছ মিয়া জানান, আমার নিজের জমির মাত্র ১০ শতাংশ ধান কাটতে পেরেছি। বাকি সব ধান তলিয়ে গেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে শ্রীরামপুর, মদনপুর, নোয়াগাঁওসহ আশপাশের এলাকার সকল জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
চুনারুঘাট উপজেলার সাটিয়াজুরী এলাকার কাজী মাহমুদুল হক সুজন জানান, চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলা পাহাড়ি এলাকা হলেও পাহাড়ের ঢালে নিচু জমিগুলোতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে করাঙ্গী নদীর বাঁধ উপচে দুই উপজেলার সাটিয়াজুরী, রানীগাঁও, মিরাশী এবং ভাদেশ্বর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে কাজিরখিল, কৃষ্ণপুর, দৌলতপুর, দাড়াগাও, কুনাউড়া, চিলামি, শাহপুর, চান্দেরটিলা, হিমারগাও, চিচিরকোট, ওলিপুর এবং পাইকপাড়াসহ বেশ কিছু গ্রামের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এখন পানির নিচে। ফলে সেখানে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। অনেক কৃষকের পাকা ধান এখন শুকাতে পারছেন না।
চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে উপজেলাবাসী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করা যায় কী না সে ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছে উপজেলা পরিষদ। হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল খান জানান, এখনও কোনো ক্ষতির তালিকা পাওয়া যায়নি। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী এমএল সৌকত জানান, করাঙ্গী এবং সুতাং নদীর কোনো রিডিং নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে নদী দু’টিতে পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর পানিও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এই বিপদসীমা শুধু বোরো মৌসুমের জন্য। বর্ষাকালে আরো উঁচুতে বিপদসীমা নির্ধারণ করা হয়। তিনি আরো জানান, খোয়াই নদীতে পানির প্রবাহ বেশি থাকলেও তা এখন বিপদসীমার নিচে।