ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামে কচু চাষে ঝুঁকে পড়েছে কৃষকরা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শাহজাদপুর উপজেলার বড়মহারাজপুর গ্রামে কচু চাষে ঝুঁকে পড়েছে কৃষকরা। কচু এমন একটি সবজি যার লতি, ডাটা ও কচি পাতা সমাজের প্রতিটি মানুষের নিকট সুষম পুষ্টিকর সবজি বলে পরিচিতি এর পুষ্টি গুনে ভরা। সম্প্রতি উপজেলার বড় মহারাজপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের আবু হায়াত নামে এক কৃষক ৪ বিঘা জমিতে কচুর আবাদ করেছে। আর কয়েক দিন পরেই তা মাঠ থেকে তোলা যাবে।

কৃষক আবু হালিম বলেন, কৃষিতে বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে প্রতি বছর কৃষিতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়। এই ক্ষতি পোষাতে আমি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আমাদের গ্রামে কৃষক মাঠ স্কুলে কৃষির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমি গত বছর ১৬ শতাংশ জমিতে ২ মণ কচুর বীজ কিনে কচু্র চাষ করে ১৬ হাজার টাকা পাই। যার ভেতর ১৩ হাজার টাকা ‍আমার লাভ বাকি মাত্র ৩ হাজার খরচ হয়। অল্প খরচে অধিক লাভ। কচু ঝড়, বৃষ্টি ও অতি ক্ষরাতেও নষ্ট হয় না।

এতে কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় না। তাই আমি এ বছর জমি থেকে আলু তোলার পর ৪ বিঘা জমিতে দেশী কচুর আবাদ করেছি আর মাত্র ১০-১৫ দিনের মধ্যে তুলতে পারবো। ৪ বিঘা কচু আবাদ করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা। গত বারের চেয়ে এবার ফলন বেশি হবে। বর্তমানে বাজারে দেশী কচু বের হতে শুরু করেছে দামও ভাল ২৫-৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আশা করি এই ৪ বিঘা কচুতে আমি প্রায় ২ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবো।

শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, এই উপজেলার কিছু কিছু এলাকার মাটি কচু চাষের জন্য উপযোগী। আমরা সেসব এলাকার কৃষককে কচু চাষের জন্য পরামর্শ দিয়েছি। এ বছর উপজেলায় ১৬০ হেক্টর জমিতে কচু আবাদ হয়েছে। কচুতে রোগ বালাই কম ও কীটনাশক ছাড়াই আবাদ করা যায়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে আবাদে খরচ কম ও পঁচনশীল নয়। তাই এই চাষে ক্ষতি কম হওয়ার কারণে কৃষক কচু চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। শাহজাদপুরে এবার ব্যাপক ভাবে কচুর আবাদ হয়েছে।

ফলন ভাল হওয়ায় প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা নীট মুনাফা অর্জিত হবে বলে ধারণা করছেন কচুচাষীরা। ধানের চেয়ে লাভজনক হওয়া কচু আবাদের প্রতি কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছে। জেলায় শাহজাদপুর উপজেলায় পোরজনা ইউনিয়নের কৃষকরা এবার ধানের পাশাপাশি ব্যাপক ভাবে লতিরাজ ও পানি কচুর আবাদ করেছে। বিগত সময়ে ওই এলাকার গুটিকয়েক কৃষক কচুর আবাদ শুরু করলেও এবার অন্তত ৪০ জন কৃষক কচু আবাদে প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

কৃষকরা জানিয়েছে, ধানসহ অন্যান্য আবাদের চেয়ে কচু লাভ জনক হওয়ায় তারা কচু আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে। শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের বড় মহারাজপুর, ছোট মহারাজপুর, হরিনাথপুর ও গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ গ্রামসহ প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে এবার কচুর আবাদ করা হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে তারা আরো বেশি লাভবান হতে পারবে বলে চাষীরা জানিয়েছে।

তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ধানের পাশাপাশি কৃষকদের বিভিন্ন শাক সবজি ও কচুর আবাদ করার পরার্মশ দিচ্ছেন তারা। আর কৃষকের অভিযোগ,‘ওইসব এলাকায় কর্মরত ব্লক সুপারভাইজারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা তারা পাচ্ছেন না’।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

গ্রামে কচু চাষে ঝুঁকে পড়েছে কৃষকরা

আপডেট টাইম : ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ মে ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শাহজাদপুর উপজেলার বড়মহারাজপুর গ্রামে কচু চাষে ঝুঁকে পড়েছে কৃষকরা। কচু এমন একটি সবজি যার লতি, ডাটা ও কচি পাতা সমাজের প্রতিটি মানুষের নিকট সুষম পুষ্টিকর সবজি বলে পরিচিতি এর পুষ্টি গুনে ভরা। সম্প্রতি উপজেলার বড় মহারাজপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের আবু হায়াত নামে এক কৃষক ৪ বিঘা জমিতে কচুর আবাদ করেছে। আর কয়েক দিন পরেই তা মাঠ থেকে তোলা যাবে।

কৃষক আবু হালিম বলেন, কৃষিতে বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে প্রতি বছর কৃষিতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়। এই ক্ষতি পোষাতে আমি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আমাদের গ্রামে কৃষক মাঠ স্কুলে কৃষির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমি গত বছর ১৬ শতাংশ জমিতে ২ মণ কচুর বীজ কিনে কচু্র চাষ করে ১৬ হাজার টাকা পাই। যার ভেতর ১৩ হাজার টাকা ‍আমার লাভ বাকি মাত্র ৩ হাজার খরচ হয়। অল্প খরচে অধিক লাভ। কচু ঝড়, বৃষ্টি ও অতি ক্ষরাতেও নষ্ট হয় না।

এতে কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় না। তাই আমি এ বছর জমি থেকে আলু তোলার পর ৪ বিঘা জমিতে দেশী কচুর আবাদ করেছি আর মাত্র ১০-১৫ দিনের মধ্যে তুলতে পারবো। ৪ বিঘা কচু আবাদ করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা। গত বারের চেয়ে এবার ফলন বেশি হবে। বর্তমানে বাজারে দেশী কচু বের হতে শুরু করেছে দামও ভাল ২৫-৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আশা করি এই ৪ বিঘা কচুতে আমি প্রায় ২ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবো।

শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, এই উপজেলার কিছু কিছু এলাকার মাটি কচু চাষের জন্য উপযোগী। আমরা সেসব এলাকার কৃষককে কচু চাষের জন্য পরামর্শ দিয়েছি। এ বছর উপজেলায় ১৬০ হেক্টর জমিতে কচু আবাদ হয়েছে। কচুতে রোগ বালাই কম ও কীটনাশক ছাড়াই আবাদ করা যায়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে আবাদে খরচ কম ও পঁচনশীল নয়। তাই এই চাষে ক্ষতি কম হওয়ার কারণে কৃষক কচু চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। শাহজাদপুরে এবার ব্যাপক ভাবে কচুর আবাদ হয়েছে।

ফলন ভাল হওয়ায় প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা নীট মুনাফা অর্জিত হবে বলে ধারণা করছেন কচুচাষীরা। ধানের চেয়ে লাভজনক হওয়া কচু আবাদের প্রতি কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছে। জেলায় শাহজাদপুর উপজেলায় পোরজনা ইউনিয়নের কৃষকরা এবার ধানের পাশাপাশি ব্যাপক ভাবে লতিরাজ ও পানি কচুর আবাদ করেছে। বিগত সময়ে ওই এলাকার গুটিকয়েক কৃষক কচুর আবাদ শুরু করলেও এবার অন্তত ৪০ জন কৃষক কচু আবাদে প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

কৃষকরা জানিয়েছে, ধানসহ অন্যান্য আবাদের চেয়ে কচু লাভ জনক হওয়ায় তারা কচু আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে। শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের বড় মহারাজপুর, ছোট মহারাজপুর, হরিনাথপুর ও গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ গ্রামসহ প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে এবার কচুর আবাদ করা হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে তারা আরো বেশি লাভবান হতে পারবে বলে চাষীরা জানিয়েছে।

তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ধানের পাশাপাশি কৃষকদের বিভিন্ন শাক সবজি ও কচুর আবাদ করার পরার্মশ দিচ্ছেন তারা। আর কৃষকের অভিযোগ,‘ওইসব এলাকায় কর্মরত ব্লক সুপারভাইজারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা তারা পাচ্ছেন না’।