ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিনি নিয়ে চলছে তেলেসমাতি

প্রতিবছর রোজার আগে চিনি নিয়ে কারসাজি নিয়মে পরিণত হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। রাজধানীসহ সারাদেশেই শুরু হয়েছে চিনি নিয়ে তেলেসমাতি কারবার। আর এই অবৈধ কারসাজিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে চিনি আমদানিকারক ও মিল মালিকরা। বিশ্ববাজারে যেখানে চিনির দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে, সেখানে বাংলাদেশে বাড়ছে দফায় দফায়। বিশ্ববাজারের প্রতিকেজি অপরিশোধিত ৩৪ টাকার চিনি দেশের ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, রোজার আগ দিয়ে নানা সমস্যার কথা বলে রিফাইনারি মিল মালিকরা তাদের কারখানা বন্ধ করে রাখে। এবারও একই কাজ করেছে মিল মালিকরা। দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মূলত পাঁচটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, দেশবন্ধু, আবদুল মোনেম ও এস আলম গ্রুপ। বছরে চাহিদার ১৬ লাখ টন চিনির প্রায় ৯০ ভাগই আমদানি করে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে পরিশোধনের পর প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করে পাইকারদের কাছে। আর পাইকারদের কাছ থেকে নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে চিনি যাচ্ছে ভোক্তার ঘরে। কিন্তু এই তিন মাধ্যম হয়ে চিনি কিনতে ক্রেতাকে এখন প্রতিকেজিতে বাড়তি গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। চিনি সিন্ডিকেট নিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সকালের খবরকে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে যেকোনো উত্সবে জিনিসপত্রের দাম কমে। আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো চিত্র। ব্যবসায়ীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে কখন রমজান মাস আসবে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট খালি করবে। চিনি ব্যবসায়ীরাও একই কাজ করছে। আসলে অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিশ্ববাজারে যেখানে চিনির দাম কম, সেখানে দেশের বাজারে বাড়ানো সম্পূর্ণ অনৈতিক। সরকার যদি চিনি ব্যবসায়ীদের চাপে রাখত তাহলে তারা এত বেপরোয়া হতে পারত না। অবশ্যই সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। প্রতিবছর চিনি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকে মিল মালিকরা। কারণ তারা রোজার আগে চিনিকল বন্ধ রাখে। গত বছর রোজার আগে যন্ত্রাংশের সমস্যার কথা বলে কারখানা বন্ধ রেখেছিল সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ। এবারও একই কাজ করেছে চিনির মিল মালিকরা। চলতি মাসের শুরু থেকে কারখানা বন্ধ রেখেছে সিটি, মেঘনা ও আবদুল মোনেম সুগার মিল। এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম সকালের খবরকে বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে মেঘনা সুগার মিলের কিছু অংশে উত্পাদন বন্ধ। একই অবস্থা সিটি ও এস আলমের। মিল বন্ধ থাকায় পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আসলে রোজার আগে বাজারে সঙ্কট তৈরির জন্যই মিল বন্ধ রাখা হয়। মিল বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মিলের ডেলিভারি ইনচার্জ আবদুল করিম সকালের খবরকে বলেন, কারখানার ব্রয়লারে সমস্যার কারণে উত্পাদন বন্ধ ছিল। সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। সমস্যা দূর হলেই আবার উত্পাদন শুরু হবে ও চিনির সরবরাহ দেওয়া হবে। চিনি নিয়ে মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের আরেকটি অংশ হচ্ছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এখন চিনির জন্য মিলে ট্রাক পাঠালে চিনি ডেলিভারির ডেট দেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ দিন পর। কারওয়ান বাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, দুই ট্রাক চিনির জন্য মে মাসের ৫ তারিখে সিটি গ্রুপের কারখানায় ফোন দিয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছে ২৫ তারিখের আগে ডেলিভারি ডেট দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, অন্য সময় যেদিন চাইতাম সেদিনই তারা ট্রাকে চিনি লোড দিত এবং আমাদের গুদামে চলে আসত। কিন্তু এখন চিনি চাইলেই মিল থেকে সময় মতো পাওয়া যাচ্ছে না। আসলে তাদের কাছে পর্যাপ্ত চিনি থাকার পরও ইচ্ছা করে দীর্ঘ সময় পর ডেলিভারি ডেট দিচ্ছে। এভাবে বাজারে চিনির সঙ্কট তৈরি হচ্ছে এবং দাম বাড়ছে। বিশ্ববাজারে দাম কম : বিশ্ববাজারে গত প্রায় দুই মাস ধরে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনির (র সুগার) মূল্য ৪০৮ থেকে ৪১০ ডলারে ওঠানামা করেছে। প্রতি ডলারের মূল্য ৮২ টাকা ধরে টাকার অঙ্কে প্রতিকেজি ‘র’ সুগারের দাম পড়ে ৩৩ টাকা ৬২ পয়সা। আর এই অপরিশোধিত চিনি পরিশোধনের পর বাজার থেকে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। মাঝখানে কয়েকটি হাতবদল আর পরিশোধনের ব্যয় ধরে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। আমদানি পরিস্থিতি : চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাবে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ১৬ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। এর বাইরে পরিশোধিত চিনিও আমদানি হয়েছে। অথচ সারা বছর দেশে চিনির চাহিদা ১৬ লাখ টনের মতো, আর রমজান মাসে চাহিদা দুই থেকে আড়াই লাখ টনের মতো। সুতরাং দেখা যাচ্ছে চাহিদার কয়েকগুণ বেশি চিনি এখন দেশে মজুদ রয়েছে। তারপরও দেদার দাম বাড়ানো হচ্ছে চিনির। গত ১০ মাসে আমদানি করা মোট চিনির ৩৫ শতাংশ এনেছে মেঘনা গ্রুপ, প্রায় ৩১ শতাংশ এনেছে সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ এনেছে সাড়ে ১০ শতাংশ, আবদুল মোনেম গ্রুপ এনেছে ১০ শতাংশ ও দেশবন্ধু গ্রুপ ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। বাকিটা এনেছে ছোট আমদানিকারকরা। কয়েক বছর ধরেই চিনি আমদানির শীর্ষে অবস্থান করছে মেঘনা, সিটি ও এস আলম গ্রুপ। সূত্র জানায়, গত বছর রমজানের আগে মেরামতের নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানই একসঙ্গে কারখানা বন্ধ করে রাখে। এতে বাজারে চিনির সরবরাহ কমে সঙ্কট তৈরি হয় এবং দাম যায় বেড়ে। এবারও তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে থাকা মেঘনা গ্রুপ গত ২৮ এপ্রিল থেকে প্রায় ১০ দিন তাদের কারখানা বন্ধ রাখায় বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই সময় সিটি গ্রুপও কারখানা থেকে সরবরাহ কমিয়ে দিলে ঢাকার বাজারে চিনির সঙ্কট দেখা দেয়। হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। বাজার পরিস্থিতি : দিন দশেক আগেও চিনির পাইকারি দর ছিল প্রতিমণ ২ হাজার ১৮০ টাকা। গত এপ্রিলের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে পাইকারি বাজারে চিনির দাম। এপ্রিলে দর ওঠে ২ হাজার ৩০০ টাকারও বেশি। এখন পাইকারি বাজারে প্রতিমণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তো বিক্রেতারা যে যার ইচ্ছা মতো দামে চিনি বিক্রি করছে। কেউ বিক্রি করছে ৭০ টাকায়, কেউ ৭২, কেউ ৭৫, আবার কেউ ৮০ টাকায়ও বিক্রি করছে প্রতিকেজি চিনি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

চিনি নিয়ে চলছে তেলেসমাতি

আপডেট টাইম : ০৬:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০১৭

প্রতিবছর রোজার আগে চিনি নিয়ে কারসাজি নিয়মে পরিণত হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। রাজধানীসহ সারাদেশেই শুরু হয়েছে চিনি নিয়ে তেলেসমাতি কারবার। আর এই অবৈধ কারসাজিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে চিনি আমদানিকারক ও মিল মালিকরা। বিশ্ববাজারে যেখানে চিনির দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে, সেখানে বাংলাদেশে বাড়ছে দফায় দফায়। বিশ্ববাজারের প্রতিকেজি অপরিশোধিত ৩৪ টাকার চিনি দেশের ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, রোজার আগ দিয়ে নানা সমস্যার কথা বলে রিফাইনারি মিল মালিকরা তাদের কারখানা বন্ধ করে রাখে। এবারও একই কাজ করেছে মিল মালিকরা। দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মূলত পাঁচটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, দেশবন্ধু, আবদুল মোনেম ও এস আলম গ্রুপ। বছরে চাহিদার ১৬ লাখ টন চিনির প্রায় ৯০ ভাগই আমদানি করে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে পরিশোধনের পর প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করে পাইকারদের কাছে। আর পাইকারদের কাছ থেকে নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে চিনি যাচ্ছে ভোক্তার ঘরে। কিন্তু এই তিন মাধ্যম হয়ে চিনি কিনতে ক্রেতাকে এখন প্রতিকেজিতে বাড়তি গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। চিনি সিন্ডিকেট নিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সকালের খবরকে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে যেকোনো উত্সবে জিনিসপত্রের দাম কমে। আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো চিত্র। ব্যবসায়ীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে কখন রমজান মাস আসবে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট খালি করবে। চিনি ব্যবসায়ীরাও একই কাজ করছে। আসলে অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিশ্ববাজারে যেখানে চিনির দাম কম, সেখানে দেশের বাজারে বাড়ানো সম্পূর্ণ অনৈতিক। সরকার যদি চিনি ব্যবসায়ীদের চাপে রাখত তাহলে তারা এত বেপরোয়া হতে পারত না। অবশ্যই সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। প্রতিবছর চিনি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকে মিল মালিকরা। কারণ তারা রোজার আগে চিনিকল বন্ধ রাখে। গত বছর রোজার আগে যন্ত্রাংশের সমস্যার কথা বলে কারখানা বন্ধ রেখেছিল সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ। এবারও একই কাজ করেছে চিনির মিল মালিকরা। চলতি মাসের শুরু থেকে কারখানা বন্ধ রেখেছে সিটি, মেঘনা ও আবদুল মোনেম সুগার মিল। এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম সকালের খবরকে বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে মেঘনা সুগার মিলের কিছু অংশে উত্পাদন বন্ধ। একই অবস্থা সিটি ও এস আলমের। মিল বন্ধ থাকায় পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আসলে রোজার আগে বাজারে সঙ্কট তৈরির জন্যই মিল বন্ধ রাখা হয়। মিল বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মিলের ডেলিভারি ইনচার্জ আবদুল করিম সকালের খবরকে বলেন, কারখানার ব্রয়লারে সমস্যার কারণে উত্পাদন বন্ধ ছিল। সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। সমস্যা দূর হলেই আবার উত্পাদন শুরু হবে ও চিনির সরবরাহ দেওয়া হবে। চিনি নিয়ে মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের আরেকটি অংশ হচ্ছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এখন চিনির জন্য মিলে ট্রাক পাঠালে চিনি ডেলিভারির ডেট দেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ দিন পর। কারওয়ান বাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, দুই ট্রাক চিনির জন্য মে মাসের ৫ তারিখে সিটি গ্রুপের কারখানায় ফোন দিয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছে ২৫ তারিখের আগে ডেলিভারি ডেট দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, অন্য সময় যেদিন চাইতাম সেদিনই তারা ট্রাকে চিনি লোড দিত এবং আমাদের গুদামে চলে আসত। কিন্তু এখন চিনি চাইলেই মিল থেকে সময় মতো পাওয়া যাচ্ছে না। আসলে তাদের কাছে পর্যাপ্ত চিনি থাকার পরও ইচ্ছা করে দীর্ঘ সময় পর ডেলিভারি ডেট দিচ্ছে। এভাবে বাজারে চিনির সঙ্কট তৈরি হচ্ছে এবং দাম বাড়ছে। বিশ্ববাজারে দাম কম : বিশ্ববাজারে গত প্রায় দুই মাস ধরে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনির (র সুগার) মূল্য ৪০৮ থেকে ৪১০ ডলারে ওঠানামা করেছে। প্রতি ডলারের মূল্য ৮২ টাকা ধরে টাকার অঙ্কে প্রতিকেজি ‘র’ সুগারের দাম পড়ে ৩৩ টাকা ৬২ পয়সা। আর এই অপরিশোধিত চিনি পরিশোধনের পর বাজার থেকে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। মাঝখানে কয়েকটি হাতবদল আর পরিশোধনের ব্যয় ধরে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। আমদানি পরিস্থিতি : চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাবে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ১৬ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। এর বাইরে পরিশোধিত চিনিও আমদানি হয়েছে। অথচ সারা বছর দেশে চিনির চাহিদা ১৬ লাখ টনের মতো, আর রমজান মাসে চাহিদা দুই থেকে আড়াই লাখ টনের মতো। সুতরাং দেখা যাচ্ছে চাহিদার কয়েকগুণ বেশি চিনি এখন দেশে মজুদ রয়েছে। তারপরও দেদার দাম বাড়ানো হচ্ছে চিনির। গত ১০ মাসে আমদানি করা মোট চিনির ৩৫ শতাংশ এনেছে মেঘনা গ্রুপ, প্রায় ৩১ শতাংশ এনেছে সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ এনেছে সাড়ে ১০ শতাংশ, আবদুল মোনেম গ্রুপ এনেছে ১০ শতাংশ ও দেশবন্ধু গ্রুপ ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। বাকিটা এনেছে ছোট আমদানিকারকরা। কয়েক বছর ধরেই চিনি আমদানির শীর্ষে অবস্থান করছে মেঘনা, সিটি ও এস আলম গ্রুপ। সূত্র জানায়, গত বছর রমজানের আগে মেরামতের নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানই একসঙ্গে কারখানা বন্ধ করে রাখে। এতে বাজারে চিনির সরবরাহ কমে সঙ্কট তৈরি হয় এবং দাম যায় বেড়ে। এবারও তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে থাকা মেঘনা গ্রুপ গত ২৮ এপ্রিল থেকে প্রায় ১০ দিন তাদের কারখানা বন্ধ রাখায় বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই সময় সিটি গ্রুপও কারখানা থেকে সরবরাহ কমিয়ে দিলে ঢাকার বাজারে চিনির সঙ্কট দেখা দেয়। হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। বাজার পরিস্থিতি : দিন দশেক আগেও চিনির পাইকারি দর ছিল প্রতিমণ ২ হাজার ১৮০ টাকা। গত এপ্রিলের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে পাইকারি বাজারে চিনির দাম। এপ্রিলে দর ওঠে ২ হাজার ৩০০ টাকারও বেশি। এখন পাইকারি বাজারে প্রতিমণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তো বিক্রেতারা যে যার ইচ্ছা মতো দামে চিনি বিক্রি করছে। কেউ বিক্রি করছে ৭০ টাকায়, কেউ ৭২, কেউ ৭৫, আবার কেউ ৮০ টাকায়ও বিক্রি করছে প্রতিকেজি চিনি।