বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সাধারণ মনে হলেও শত গুণে ভরপুর ইসবগুলের ভুসি। স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার এই ভুসি। এটি দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে এটি অভ্যন্তরীণ পাচনতন্ত্রের সমস্যা সমাধানে ঘরোয়া চিকিত্সা ও প্রতিকার হিসেবে বেশ উপযোগী।
আমাদের মধ্যে অনেকেই ঘুমানোর আগে অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ভেজানো ইসুবগুলের ভুসি খেয়ে থাকেন। কেউ কেউ এ ভুসি খায় রাতের খাবারের পরে অনেকক্ষণ ভিজিয়ে রেখে। কিন্তু ভিজিয়ে না রেখে ইসুবগুলের ভুসি পানি দিয়ে গুলিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেলেই ভালো ফল পাওয়া যায়। চলুন এবার ইসুবগুলের ভুসির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ
১ টেবিল চামচ ইসবগুলে আছে- ক্যালরি ৫৩ শতাংশ, ফ্যাট শূন্য শতাংশ, সোডিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম,কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) ১৫ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন (লোহা) ০.৯ মিলিগ্রাম।
কতটুকু খাবেন?
অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় ইসবগুল খেলে কোনো সমস্যা হয় না। প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ ৩ বার খাওয়া যায়। অবশ্যই তা পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। এছাড়া সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
চলুন এবার জেনে নেয়া যাক ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা সম্পর্কে-
হার্টের সুস্থতায়
ইসবগুলের ভুসিতে থাকা খাদ্যআঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আমাদেরকে হূদরোগ থেকে সুরক্ষিত করে। যে কারণে চিকিত্সকরা সব সময় হূদরোগ প্রতিরোধে এ ধরনের খাবারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এটি পাকস্থলীর দেয়ালে একটা পাতলা স্তর সৃষ্টি করে। যা খাদ্য হতে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়; বিশেষ করে রক্তের সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এছাড়াও এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দেয়, যা থাকলে ধমনীতে ব্লক সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
আমাশয়
ইসবগুল আমাশয়ের জীবাণু ধ্বংস করতে পারে না, তবে বের করে দিতে পারবে। তাই আমাশয়ের রোগীরা সকালে ও রাতে একগ্লাস ইসবগুলের শরবত খেলে উপকার পাবে। ওষুধ খেয়ে আমাশায় ঠিক করলে জীবাণুগুলো পেটের ভেতরে মরে গেলেও শরীর থেকে বের হয় না; যার কারণে আবারও আমাশায় রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া
যাদের ইউরিনে জ্বালাপোড়া আছে তারা সকালে-বিকালে শরবতের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমবে এবং ইউরিনের রঙ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। হাতে, পায়ে জ্বালাপোড়া ও মাথা ঘোরানো রোগে আখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিলিয়ে সকাল-বিকাল এক সপ্তাহ খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
অ্যাসিডিটির প্রতিকারে
আমাদের প্রায় সবারই কিছু না কিছু অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে, আর ইসবগুল হতে পারে এই অবস্থার ঘরোয়া প্রতিকার। ইসগুল খেলে তা পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে একটা প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, যা অ্যাসিডিটির বার্ন থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে। এছাড়াও এটি সঠিক হজমের জন্য এবং পাকস্থলীর বিভিন্ন অ্যাসিড নিঃসরণে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে প্রতিবার খাদ্য গ্রহণের পর ২ চামচ ইসবগুল আধা গ্লাস ঠাণ্ডা দুধে মিশিয়ে পান করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে
ইসবগুলে থাকে কিছু অদ্রবণীয় ও দ্রবণীয় খাদ্য আঁশের চমত্কার সংমিশ্রণ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে ঘরোয়া উপায় হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। পাকস্থলীতে গিয়ে এটি ফুলে ভেতরের সব বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি এক গ্লাস কুসুম গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে হবে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে
ইসবগুলের ভুসি ডায়রিয়া প্রতিরোধেও সক্ষম। ডায়রিয়া প্রতিরোধে ইসবগুল দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। কারণ দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক পাকস্থলীর ইনফেকশন সারায় এবং ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে বলে খুব কম সময়েই এটি ডায়রিয়া সারাতে পারে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে দিনে দু’বার ভরাপেটে ২ চামচ ভুসি ৩ চামচ টাটকা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
কোষ্ঠকঠিন্যতায়
কোষ্ঠকঠিন্যতায় ভুগলে ৫ থেকে ১০ গ্রাম ইসবগুল নিয়ে ১ কাপ ঠাণ্ডা বা গরম পানিতে আধাঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তাতে ২ থেকে ৩ চামচ চিনি মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে বা রাতে শোয়ার আগে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের পেটের পীড়া, কোষ্ঠকঠিন্যতায় উপকারী। যারা দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকঠিন্যতায় ভুগছেন তারা ২ মাস নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকঠিন্য দূর হবে। পেট স্বাভাবিক হলে সপ্তাহে ১ বা ২ দিনের বেশি না খাওয়াই ভালো। বেশি মাত্রায় খেলে ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে।
পেট পরিষ্কারের ওষুধের চেয়ে ইসবগুল অনেকগুণে উপকারী। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অর্শ্বরোগের সৃষ্টি হয়। অর্শ্বরোগ অনেক সময় ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতেও রূপান্তরিত হতে পারে। এসব সমস্যার শুরু থেকে সমাধান করতে ইসবগুলের ভুসি উপকারী। ওষুধ পেটকে কেমিক্যালাইস করে; ইসবগুলের ভুসি প্রাকৃতিকভাবে আমাদের সুস্থ রাখে। প্রতি রাতে ভুসি খেয়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করলে আমাশয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
সবশেষে বলা চলে, নির্দিষ্ট মাত্রায় ইসবগুল খেলে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা ভালো।