বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ খুব সাধারণ একটি ফল হিসেবেই ডালিম সবার কাছে পরিচিত। দামে সস্তা এবং সহজলভ্য। কারণ সারা বছরই বাজারে এই ফলটির দেখা মেলে। তবে ডালিমের চাইতে এটি বেদানা হিসেবে বেশি জনপ্রিয়। ফলটি টুকটুকে লাল রঙের হয়ে থাকে। এর ভেতরের দানাগুলোও লাল এবং রসালো। স্বাদে মিষ্টি এই ফলটি সবার কাছেই খুব প্রিয়।
ডালিম বা বেদানা শুধুমাত্র ফল হিসেবেই নয় বরং এর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেক সুবিধা রয়েছে। আমাদের শরীরের জন্য ডালিমের উপকারিতা বহু, যা জানলে অবাক হবেন আপনিও! স্বাস্থ্যের জন্য ডালিমের উপকারিতার কয়েকটি বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সমৃদ্ধ হওয়ায় ডালিম দেহের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ডালিমেরে দানায় এই উপদানগুলো বিদ্যমান থাকায় এই ফলটির বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে।
স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
ডালিমের মধ্যে অ্যান্টি-প্লাক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং সতেজ রাখে। ডালিমের উপস্থিত উপাদানগুলো ডেন্টাল ফলকের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়। ২০১১ সালের একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ডালিমের রস দাঁতের সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্যও ডালিম বেশ উপকারী। এটি অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং নাইট্রিক অক্সাইডের ভালো উৎস। এটি রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং রক্ত ধমনীতে পুষ্ট করার জন্য পরিচিত। এটি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও অনেকাংশে হ্রাস করে। ২০১১ সালের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে ডালিমের রস প্রতিদিন এক গ্লাস ডালিমের রস পান করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে
ডালিম জয়েন্ট এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যার জন্য একটি সফল চিকিৎসা। অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং সামগ্রিকভাবে জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিয়মিত ডালিমের বীজ গ্রহণ করুন। এটিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ-হ্রাসকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা জয়েন্টগুলোতে প্রদাহ হ্রাস করতে সক্ষম।
অ্যানিমিয়া তৈরিতে
রক্তাল্পতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডালিম একটি জীবন রক্ষাকারী ভেষজ। এটি শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে লাল রক্ত কোষের সংখ্যাও বাড়িয়ে তোলে। এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে রক্ত প্রবাহকেও উন্নত করে। এটি ছাড়াও এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা আয়রন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
হার্ট ভালো রাখতে
বর্তমানে ৮০ শতাংশ মানুষ হার্টের অসুখের জন্য মারা যায়। এই হার্ট রোগের একমাত্র কারণ ভেজাল খাদ্য। বাইরের জাংক ফুড এবং তেলে ভাজা মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে আমাদের হৃদয়। যার দরুন দেখা মিলছে ভিন্ন ধরনের হার্টের অসুখ।
বাইরের জাংক ফুডে অতিরিক্ত তেল থাকে। এই তেল জাতীয় খাবারগুলো আমাদের দেহের ধমনীর আবরণে জড়িয়ে থাকে এবং ধীরে ধীরে ধমনী সংকুচিত হতে থাকে। যার জন্য দিনের পর দিন মানুষের হার্টের সমস্যা বেড়ে চলেছে। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপাদান আমাদের হাতের সামনেই রয়েছে। নিয়মিত ডালিমের রস খেলে হার্টের অসুখের হাত থেকে রেহাই মেলে। কারণ ডালিমের রস দেহের অতিরিক্ত চর্বিগুলো গলিয়ে দিতে সহায়তা করে। তাই আপনার যদি হার্টের অসুখ থাকে দেরি না করে আজ থেকে নিয়মিত ডালিমের রস খাওয়া শুরু করুন।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হার্টের অসুখে ক্ষেত্রে ডালিমের উপকারিতা রয়েছে। এটি অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে এলডিএল কোলেস্টেরল রক্ষা করে।
ডায়রিয়া রোধ করে
ডালিম ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আমাদের সবারই একটা ভুল ধারণা রয়েছে ডায়রিয়া হলে ডালিম খাওয়া উচিত নয় কিন্তু আপনি কি জানেন ডায়রিয়া হলে ডালিমের রসের মতো ভালো বিকল্প অন্য কিছু হতে পারে না। নিয়মিত দু’বেলা ডালিমের রস খেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বেদানার বীজে অ্যান্টি ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা ক্যান্সারের কোষগুলোকে ক্রমবর্ধমান হতে বাঁধা দেয়। এছাড়াও এটি স্কিন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা করে।
পচন তন্ত্র ভালো রাখে
ডালিমের দানা ভিটামিন বি এর ভালো উৎস। এটির জন্যই পাচক তন্ত্র ভালো থাকে। কারণ ভিটামিন বি শরীরের ফ্যাট, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটকে দেহের শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
এছাড়া ডালিম ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ ধারণ করে যা আমাদের পাচক সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি নিয়মিত অল্প মাত্রায় ডালিম বা তার রস খান তাহলে আপনি হজম সম্পর্কিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে রেহাই দেয়।
ত্বকের যত্নে
ডালিমে ভিটামিন “সি” এবং অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ সমৃদ্ধ হওয়ায় ত্বকের যত্নে ডালিম অসাধারণ কার্যকর। এটি ত্বকের দাগছোপ রিমুভ করে ত্বকে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও ডালিমে উপস্থিত ভিটামিন “সি” ত্বক গ্লোয়িং করে, পাশাপাশি ত্বকে বয়সের ছাপ পরতে বাধা সৃষ্টি করে।