বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ প্রথমে একটি জিনিস আমাদের বুঝতে হবে আমার চোখ কেমনভাবে কাজ করে। আমরা কীভাবে দেখি। সেটা একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। আমাদের চোখের সামনে একটি স্বচ্ছ কর্নিয়া আছে। তার পেছনে রয়েছে লেন্স। বাইরের যত আলো আসে, সেটি প্রতিফলিত হয়ে পেছনের কেন্দ্র রেটিনাতে গিয়ে পড়ে। রেটিনাতে পড়লে আমরা দেখতে পাই। আর রেটিনাতে না পড়লে আমরা দেখতে পাব না। এটা হলো আমাদের দেখার ব্যবস্থা।
শিশুদের বেলায় কী সমস্যা হচ্ছে? প্রথম হলো অপুষ্টিজনিত অন্ধত্য। যদিও এখন বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভিটামিন এ দেওয়ার ফলে এই অপুষ্টিজনিত সমস্যা কমে গেছে। তবুও খেয়াল রাখতে হবে আমাদের ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার, সবজি, ফলমূল, মলা মাছ, ছোট মাছ- এগুলো শিশুদের খেতে দিতে হবে। তাহলে শিশুদের যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন এ থাকবে। এবং সে ভিটামিনের কারণে অন্ধত্বে ভুগবে না।
প্রশ্ন : এর বাইরে অন্য আর কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বাবা-মাকে বুঝতে হবে। শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তার চোখ খুব ছোট থাকে। এর কারণে শিশু চোখে কিছুই দেখতে পারে না। জন্ম নেওয়ার পর শিশু চোখে তেমন দেখে না। ধীরে ধীরে তার এই দৃষ্টি শক্তিটা তৈরি হতে থাকে। যখন চোখের নিচে আলো পড়ে, সেই ছবিগুলো আস্তে আস্তে তার মস্তিস্কে যেতে থাকে। শিশুরা প্রথম দেখে মায়ের মুখ। কারণ মা যখন কোলে নিয়ে শিশুকে দুধ খাওয়ায়, আদর করে তখন তার মুখটা খুব কাছে আসে শিশুর। আস্তে আস্তে যখন বয়স বাড়তে থাকে তখন চোখও বড় হতে থাকে। চোখের কর্নিয়া ও লেন্সও বড় হতে থাকে। ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি তৈরি হয়। সাধারণত পাঁচ বছর বয়সে সে পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হওয়ার কথা।
প্রশ্ন : এই সময়ে অনেক শিশুকে দেখতে পাই আমরা চশমা পরছে এবং শিশু কম দেখছে, শিশু লেখাপড়ায় অমনোযোগী হচ্ছে— এই ঘটনা কেন ঘটছে?
উত্তর : এই বিষয়টিই আমাদের বোঝা দরকার। কেননা এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা যে বললাম চোখের কর্নিয়া এবং লেন্স মিলে চোখের দৃষ্টিটা ফেলছে। এই কর্নিয়ার একটি শক্তি আছে। লেন্সেরও একটি শক্তি আছে। লেন্সেরও একটা ক্ষমতা আছে। এখন কর্নিয়ার ক্ষমতা চল্লিশের বেশি। আর লেন্সের ক্ষমতা ১৮ থেকে ২০ এর মধ্যে। তবে সবার এক রকম নয়। একেকজনের একেক রকম। প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদাভাবে তৈরি হয়। আলাদা আলাদা ভাবে বড় হচ্ছে। প্রতিটি শিশু আলাদা আলাদাভাবে বড় হচ্ছে। কারো এটা একদম ভালোভাবে মিলে তৈরি হচ্ছে। কারো কম-বেশি হচ্ছে। যদি একটু কম-বেশি হয় তাহলে তো ছবিটা পড়বে না। যেকোনো শিশুরই এটা হতে পারে। তবে শিশুটি যদি দেখতে না পায় তাহলে সমস্যা তৈরি হবে।
প্রশ্ন : বাবা-মা বা অভিভাবকরা কী করে বুঝবেন তাঁর বাচ্চাটি চোখে কম দেখছে?
উত্তর : পাঁচ বছর পর শিশুর দৃষ্টিশক্তি পূর্ণতা পায়। তবে শিশুর দৃষ্টিশক্তির ১০ বছর পর্যন্ত উন্নতি ঘটতে পারে। বুঝতে হবে ১০ বছর পর্যন্ত যে দৃষ্টি শক্তি থাকবে বাকি সারাজীবন সেই দৃষ্টি শক্তি থাকবে। এখন চশমার প্রয়োজনীয়তা কেন হয়? চশমার প্রয়োজনীয়তা হয়, যদি কর্নিয়া এবং লেন্স মিলে যে ছবিটা ফেলার কথা ছিল সেটি না পড়তে পারে। তখন তো শিশুটি দেখবে না। তখন আমরা শিশুটির সামনে একটি চশমা দিয়ে দেই। চশমা তখন চোখের অংশ হিসেবে, সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করে। তাহলে আল্লাহর থেকে দেওয়া আছে লেন্স , কর্নিয়া । আর আমরা দেই চশমা, এই তিন জিনিস মিলিয়ে ছবিটা হয়।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের অনেকে চশমা পরতে অনীহা দেখায়। সে ক্ষেত্রে যদি চশমা না পরে তাহলে এই ক্ষীণ দৃষ্টি কী আরো সমস্যায় পড়তে পারে?
উত্তর : চশমা যদি সঠিক সময়ে না দেওয়া হয়, আমি তো বলেছি, পাঁচ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত, এই সময়ের মধ্যে যদি তার চশমার প্রয়োজন হয় এবং চশমা দেওয়া না হয়, তাহলে ছবিটা রেটিনার ওপর ঝাপসা ভাবে পড়ছে। এতে শিশু দেখতে পাচ্ছে না। শিশু দেখতে না পেলে চোখটা অলস হয়ে যায়। যদি এক চোখে চশমা লাগে আর আরেক চোখে না লাগে তবে যেই চোখে লাগে সেটা অলস হয়ে যাবে। আর যেটা না লাগে সেটা অলস হবে না। তার কারণে একটা চোখ তার অলস হয়ে থাকবে। এটা যদি আমরা চিকিৎসা না করি ১০ বছর পার হয়ে গেলে ওই যে এক চোখে দৃষ্টিশক্তি কম রয়েছে সেটা আর বাড়বে না। আর যদি চশমা দিয়ে দেই তাহলে ভালো হবে। আর এই অলস চোখটির জন্য কিছু ব্যায়াম আছে— সেগুলো যদি করাই বাচ্চাকে তাহলে এই দৃষ্টিশক্তিগুলো তৈরি হয়ে যাবে। ১০ বছর পার হয়ে গেলে দৃষ্টি শক্তি একেবারে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তাই শিশুর বয়স ৫ বছর বা তার আগে চোখের ডাক্তার দেখানো দরকার, যাদের কোনো সমস্যা নেই। আর যাদের সমস্যা আছে তারা আগে দেখাবেন। অলস চোখ টেরা হয় সাধারণত। চশমা বা বিয়াম এর পর ও যদি টেরা সোজা না হয় তবে ৫ বছরের মধ্যে অপারেশন করা দরকার।