ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আট উপজেলা হাসপাতালের চিত্র শয্যা থাকলেও চিকিৎসা নেই

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে রোগীরা বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু করোনা রোগীদের চাপে সেখানেও তারা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত রোগীরা রাজধানী ঢাকায় চলে আসছেন।

করোনার জটিল রোগীদের পাশাপাশি অন্যান্য রোগীরাও চিকিৎসা সেবার জন্য রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অথচ জনবল সংকট না থাকলে এসব রোগের চিকিৎসা জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ওয়ার্ড পর্যায়ের হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিকে নেওয়া সম্ভব। জনবল সংকটের কারণে গ্রামাঞ্চলের হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা থাকলেও চিকিৎসা সেবা নেই। রোগীদের অনেকে সেখান থেকে ফেরত যাচ্ছেন। দেশের আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইত্তেফাকের প্রতিনিধি সরেজমিন পরিদর্শন করে চিকিৎসা সেবার এমন অব্যবস্থাপনার চিত্র দেখতে পেয়েছেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, করোনার প্রাথমিক চিকিৎসা জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েই সম্ভব। করোনাসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধও এসব হাপসাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে। আর যারা বিভিন্ন অপারেশনের জন্য ঢাকায় আসছেন, তাদের ৮০ ভাগের অপারেশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করা যায়। কিন্তু এনেসথেসিওলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান না থাকায় অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অর্থপেডিক, গাইনি, চক্ষু, ইএনটিসব অধিকাংশ অপারেশনের রোগীরা রাজধানীর হাসপাতালে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (হাসপাতালে) ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও বছরের পর বছর ধরে সবগুলো পদ শূন্য রয়েছে। ২০০৮ সালের ১ জুলাই তারিখে ৩০ শয্যার গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। প্রত্যন্ত গ্রাম ও পল্লী অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ওই সময়েই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিসিন, সার্জারি, অবেদিনবিদ, চক্ষু, অর্থো-সার্জারি, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, ইএনটি, কার্ডিলজি, গাইনি, শিশু এই দশটি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অর্থাৎ কনসালটেন্টের পদ সৃষ্টি করা হয়।

শুরু থেকেই এই হাসপাতালে অবেদিনবিদ অর্থাৎ এ্যানেসথেটিক্স কনসালটেন্ট (অজ্ঞান ডাক্তার) এবং চক্ষু বিভাগের কনসালটেন্ট ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বাকী বিভাগগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে চিকিৎসকরা রাজধানী ঢাকা কিংবা জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে বদলী হয়ে চলে যান। কোন কোন চিকিৎসক এখানে যোগদান করার প্রথম দিন থেকেই রাজধানীর কোন নামকরা হাসপাতালে প্রেষনে চাকুরী করার অর্ডার করিয়ে নেন। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাইন উদ্দিন খান মানিক জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে রোগীদেরও ভোগান্তি হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, টেকনিশিয়ানের অভাবে হাসপাতালের এক্সরে মেশিন সম্পূর্ণ নষ্ট ও মেরাতের অযোগ্য। এ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় সপ্তাহের ৭ দিনই অপারেশনর কাজ চলে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদার । তিনি আরও জানান জনবল সংকটে রয়েছি। তা ছাড়া ৩৫টা পোষ্ট থাকলেও ২৪ জন ডাক্তার থাকার কথা সেখানে আমি সহ ৯ জন রয়েছি অন্য পদে তো কোন লোকই নেই।

হাসপাতালের ৫ জন ডাক্তার আগেই ঢাকায় খুলনায় কেভিড হাসপাতালে যোগদান করেছে। ম্যান পাওয়ার সংকট এমন ভাবে দেখা দিয়েছে যে চিকিৎসা সেবাই হিমশিম খেতে হচ্ছে। করোনা প্রস্তুতি ইতোমধ্যে হাসপাতালে ১৫ বেডের করোনা ইউনিট চালু করা হলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ১৫ বেডে সংকলন হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে সরবরাহজনিত কারণে দেখা দেয় অক্সিজেন সংকট তবে এলাকার পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে মুমূর্ষ কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করার জন্য কোভিড হাসপাতালের প্রয়োজন।

বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা কাজী শাহ্জাহান সবুজ জানান, শার্শা উপজেলা হাসপাতালটি ১৯৬২ সালের ১২ই জুন নির্মিত হয়। এ উপজেলা হাসপাতালটি নানা সমস্যার মাঝেও মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমান সীমান্ত এলাকায় করোনা রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকায় নানা সমস্যায় পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করলেও দীর্ঘদিন পার হলেও ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু হয়নি। এখানে সরকারীভাবে ২১ জন ডাক্তারের পোষ্টিং থাকলেও আছে মাত্র ১৩জন, ২৫ জন সেবিকার পোষ্টিং থাকলেও আছে ২৩জন। তৃতীয়য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীর ও সংকট রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

বর্তমান করোনারোগীদের জন্য ২টি জোন করা হয়েছে ইয়েলো জোন এবং রেড জোন। শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ইউসুফ আলী জানান করোনা রোগীদের চিকিত্সা সেবার জন্য আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে স্বপ্ল আয়োজনে হলেও সকল ব্যবস্থা করে রেখেছি কিন্তু সীমান্ত বর্তী এ বিশাল জনগোষ্ঠির সেবার জন্য এখানে যে জনবল কাঠামো প্রয়োজন তা নেই।

কালাই (জয়পুরহাট) সংবাদদাতা তৌহিদুল ইসলাম তালুকদার লায়নর বলেন, ২০০৬ সালের ৯ মার্চ তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করলেও চিকিত্সক ও সরঞ্জাম সংকট ছিল সেই সময়েও। বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাগজ কলমে পদের সংখ্যা ৯৯ জন থাকলেও কর্মরত আছেন ৬১জন আর শূন্য পদ রয়েছে ৩৮জন। এতে জনবল সংকট থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এই উপজেলা ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ ২২ জন চিকিত্সকের পদ থাকলেও ডাক্তার পদায়ন না করায় বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৮জন ডাক্তার। আর বাকি পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। তবে কর্মরত ঐ ৮জন ডাক্তারের সঙ্গে ৫ জন সহকারী মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) আছেন।

শূন্য পদগুলো হচ্ছে-জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি এন্ড অবস) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেড্রিয়াটিক) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি) এক জন, হোমিও প্যাথিক/আয়োবেদিক মেডিকেল অফিসার এক জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার এক জন ও মেডিকেল অফিসার এক জন। এছাড়াও ২য়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ২৩ পদে ফাঁকা রয়েছে। সেগুলো হলো-মিডওয়াইফারী একজন, এমটি ল্যাব একজন, এমটি ফিজিওথেরাপী একজন, পরিসংখ্যাবিদ একজন, প্রধান সহঃকামঃহিঃরক্ষক একজন, প্রধান সহকরী একজন, হিসাব রক্ষক একজন, স্টোর কিপার একজন, ক্যাশিয়ার একজন, অফিস সহঃকামঃ কম্পিঃঅপারেটর একজন, অফিস সহায়ক দু-জন, ওয়ার্ড বয় দু-জন, আয়া দু-জন, কুক/মশালর্চী একজন, সিকিউরিটি গার্ড দু-জন, ওটি এ্যাটেনডেন্ট/বয় একজন, মালী একজন ও সুইপার দু-জন। ঐসব পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায়। কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.নূর আসাদ উজ-জামান বলেন, এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট ও মেডিকেল অফিসারের পদ কম থাকলেও সামার্থ্য অনুযায়ী রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাছাড়া এই হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড ঘোষণা করার ফলে এলাকার করোনা রোগীদের স্থাস্থ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম সায়েম জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে ৪ বেডের আইসোলেশন সেন্টার রাখা হয়েছে। এখানে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক নেই। হাইফ্লোনেজাল ক্যানোলা, সেন্টাল অক্সিজেন সরবরাহ , ভেন্টিলেটর , আইসিইউ বেড কিছুই নাই, আবার নেই প্রশিক্ষিত জনবল।

তিনি জানান ১৯ জন চিকিত্সকের মধ্যে রয়েছে ১১ জন,নার্স রয়েছে ২৩ জন এবং ওয়ার্ড বয় ও আয়া ৬ জনের মধ্যে রয়েছে ৪ জন। স্বাস্থ্য সহকারীর পদ শুন্য রয়েছে ১৪ জনের। এছাড়া রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যা। এছাড়া এক্সরে মেশিন বিকল, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন দুটি নষ্ট, ১০ বছর থেকে এ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে পড়ে আছে।

বেতাগী (বরগুনা) সংবাদদাতা মোঃ মিজানুর রহমান মজনু জানান, বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রথম শ্রেণির ২৮টি চিকিত্সকের পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৮ জন। এর ভিতর ২ জন চিকিত্সক অনত্র ডেপুটেশনে কর্মরত। এখানে ৮ জন চিকিত্সক কর্মরত দেখানো হলেও দুজন চিকিত্সক আছেন ডিপুটেশনে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ কমপ্লেঙ্ে কনিষ্ঠ কনসালট্যান্ট সার্জারি, মেডিসিন, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক সার্জারি, শিশু, চক্ষু, ইএনটি, ডেন্টাল, চর্ম ও যৌনরোগের চিকিত্সক থাকার কথা। তবে এখানে কোনো কনসালট্যান্ট চিকিত্সক নেই।

হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ানের পদ শূন্য থাকায় ১০ বছর যাবত্ মেশিনটি অকেজো অবস্থায় পরে আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. তেন মং বলেন, ‘হাসপাতালে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী চিকিত্সা নিচ্ছেন। অল্প জনবল দিয়েই আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে হিমশিম খেতে হয়।

লামা (বান্দরবান) সাংবাদদাতা মুহাম্মদ কামালুদ্দিন জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট লামা উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত রয়েছে ২জন মেডিকেল অফিসার ও ১ জন ডেন্টাল সার্জন। লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ মহিউদ্দীন মাজেদ চৌধুরী জানান, হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল কাঠামো ৩১ শয্যার। তার মধ্যেও ৬০% জনবলের পদ শূন্য রয়েছে। ২০ জন চিকিত্সকের স্থলে কর্মরত রয়েছে ৬ জন।

মেডিকেল অফিসার সংকটের কারণে চিকিত্সা প্রদানের হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের এক্সরে, আলট্রাস্নোগ্রাফি ও জিন এক্সপাট মিশিন জনবল সংকটের কারনে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ্যানেসথেটিষ্ট ও সার্জারি কনসালটেন্ট না থাকায় অপারেশন বিভাগে কোন রোগীকে চিকিত্সা দেওয়া যাচ্ছে না। র্দীঘদিন ধরে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে।

মাধবপুর(হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা শংকর পাল সুমন জানান, উপজেলার ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ ৪৮ বছরেও চালু হয়নি আপারেশন থিয়েটার। কনসালটেন্টের ১০টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য, নেই কোন টেকনেশিয়ান । এক্সরে , জরুরী প্রসুতি সেবা সহ অপারেশন সুবিধা না থাকায় প্রত্যাশিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারন জনগন । মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী এমপি বলেছেন, দেশে করোনা কালীন এ সংকটময় মুহুর্তে যা আছে তা দিয়েই জনগনকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে।

মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এ এইচ এম ইশতিয়াক মামুন জানান, মাধবপুরে করোনা পরিস্তিতি মোকাবেলায় ৫টি আইসোলেশন বেড, ২৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ রাখা হয়েছে। মাধবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ দিন ধরে কনসালটেন্টের ১০টি পদই শূন্য রয়েছে । টেকনেশিয়ানের অভাবে ১২ বছর ধরে এক্সরে মেশিন চালু করা যাচ্ছে না । মেশিনটি অকেজো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । বর্তমানে ১জন মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব), ১ জন এক্সরে টেকনেশিয়ান,১জন আ্য্যনেসথেসিয়া ও গাইনী কনসালটেন্ট নিয়োগ খুবই জরুরী । মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারী ৫০টি পদে ৩৫ জন কর্মরত এবং স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৩টি পদই শূন্য রয়েছে । একাধিক বার চাহিদা পত্র দেয়া হচ্ছে কোন কাজ হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আট উপজেলা হাসপাতালের চিত্র শয্যা থাকলেও চিকিৎসা নেই

আপডেট টাইম : ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে রোগীরা বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু করোনা রোগীদের চাপে সেখানেও তারা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত রোগীরা রাজধানী ঢাকায় চলে আসছেন।

করোনার জটিল রোগীদের পাশাপাশি অন্যান্য রোগীরাও চিকিৎসা সেবার জন্য রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অথচ জনবল সংকট না থাকলে এসব রোগের চিকিৎসা জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ওয়ার্ড পর্যায়ের হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিকে নেওয়া সম্ভব। জনবল সংকটের কারণে গ্রামাঞ্চলের হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা থাকলেও চিকিৎসা সেবা নেই। রোগীদের অনেকে সেখান থেকে ফেরত যাচ্ছেন। দেশের আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইত্তেফাকের প্রতিনিধি সরেজমিন পরিদর্শন করে চিকিৎসা সেবার এমন অব্যবস্থাপনার চিত্র দেখতে পেয়েছেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, করোনার প্রাথমিক চিকিৎসা জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েই সম্ভব। করোনাসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধও এসব হাপসাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে। আর যারা বিভিন্ন অপারেশনের জন্য ঢাকায় আসছেন, তাদের ৮০ ভাগের অপারেশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করা যায়। কিন্তু এনেসথেসিওলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান না থাকায় অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অর্থপেডিক, গাইনি, চক্ষু, ইএনটিসব অধিকাংশ অপারেশনের রোগীরা রাজধানীর হাসপাতালে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (হাসপাতালে) ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও বছরের পর বছর ধরে সবগুলো পদ শূন্য রয়েছে। ২০০৮ সালের ১ জুলাই তারিখে ৩০ শয্যার গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। প্রত্যন্ত গ্রাম ও পল্লী অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ওই সময়েই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিসিন, সার্জারি, অবেদিনবিদ, চক্ষু, অর্থো-সার্জারি, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, ইএনটি, কার্ডিলজি, গাইনি, শিশু এই দশটি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অর্থাৎ কনসালটেন্টের পদ সৃষ্টি করা হয়।

শুরু থেকেই এই হাসপাতালে অবেদিনবিদ অর্থাৎ এ্যানেসথেটিক্স কনসালটেন্ট (অজ্ঞান ডাক্তার) এবং চক্ষু বিভাগের কনসালটেন্ট ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বাকী বিভাগগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে চিকিৎসকরা রাজধানী ঢাকা কিংবা জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে বদলী হয়ে চলে যান। কোন কোন চিকিৎসক এখানে যোগদান করার প্রথম দিন থেকেই রাজধানীর কোন নামকরা হাসপাতালে প্রেষনে চাকুরী করার অর্ডার করিয়ে নেন। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাইন উদ্দিন খান মানিক জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে রোগীদেরও ভোগান্তি হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, টেকনিশিয়ানের অভাবে হাসপাতালের এক্সরে মেশিন সম্পূর্ণ নষ্ট ও মেরাতের অযোগ্য। এ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় সপ্তাহের ৭ দিনই অপারেশনর কাজ চলে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদার । তিনি আরও জানান জনবল সংকটে রয়েছি। তা ছাড়া ৩৫টা পোষ্ট থাকলেও ২৪ জন ডাক্তার থাকার কথা সেখানে আমি সহ ৯ জন রয়েছি অন্য পদে তো কোন লোকই নেই।

হাসপাতালের ৫ জন ডাক্তার আগেই ঢাকায় খুলনায় কেভিড হাসপাতালে যোগদান করেছে। ম্যান পাওয়ার সংকট এমন ভাবে দেখা দিয়েছে যে চিকিৎসা সেবাই হিমশিম খেতে হচ্ছে। করোনা প্রস্তুতি ইতোমধ্যে হাসপাতালে ১৫ বেডের করোনা ইউনিট চালু করা হলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ১৫ বেডে সংকলন হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে সরবরাহজনিত কারণে দেখা দেয় অক্সিজেন সংকট তবে এলাকার পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে মুমূর্ষ কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করার জন্য কোভিড হাসপাতালের প্রয়োজন।

বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা কাজী শাহ্জাহান সবুজ জানান, শার্শা উপজেলা হাসপাতালটি ১৯৬২ সালের ১২ই জুন নির্মিত হয়। এ উপজেলা হাসপাতালটি নানা সমস্যার মাঝেও মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমান সীমান্ত এলাকায় করোনা রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকায় নানা সমস্যায় পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করলেও দীর্ঘদিন পার হলেও ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু হয়নি। এখানে সরকারীভাবে ২১ জন ডাক্তারের পোষ্টিং থাকলেও আছে মাত্র ১৩জন, ২৫ জন সেবিকার পোষ্টিং থাকলেও আছে ২৩জন। তৃতীয়য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীর ও সংকট রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

বর্তমান করোনারোগীদের জন্য ২টি জোন করা হয়েছে ইয়েলো জোন এবং রেড জোন। শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ইউসুফ আলী জানান করোনা রোগীদের চিকিত্সা সেবার জন্য আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে স্বপ্ল আয়োজনে হলেও সকল ব্যবস্থা করে রেখেছি কিন্তু সীমান্ত বর্তী এ বিশাল জনগোষ্ঠির সেবার জন্য এখানে যে জনবল কাঠামো প্রয়োজন তা নেই।

কালাই (জয়পুরহাট) সংবাদদাতা তৌহিদুল ইসলাম তালুকদার লায়নর বলেন, ২০০৬ সালের ৯ মার্চ তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করলেও চিকিত্সক ও সরঞ্জাম সংকট ছিল সেই সময়েও। বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাগজ কলমে পদের সংখ্যা ৯৯ জন থাকলেও কর্মরত আছেন ৬১জন আর শূন্য পদ রয়েছে ৩৮জন। এতে জনবল সংকট থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এই উপজেলা ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ ২২ জন চিকিত্সকের পদ থাকলেও ডাক্তার পদায়ন না করায় বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৮জন ডাক্তার। আর বাকি পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। তবে কর্মরত ঐ ৮জন ডাক্তারের সঙ্গে ৫ জন সহকারী মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) আছেন।

শূন্য পদগুলো হচ্ছে-জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি এন্ড অবস) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেড্রিয়াটিক) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) এক জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি) এক জন, হোমিও প্যাথিক/আয়োবেদিক মেডিকেল অফিসার এক জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার এক জন ও মেডিকেল অফিসার এক জন। এছাড়াও ২য়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ২৩ পদে ফাঁকা রয়েছে। সেগুলো হলো-মিডওয়াইফারী একজন, এমটি ল্যাব একজন, এমটি ফিজিওথেরাপী একজন, পরিসংখ্যাবিদ একজন, প্রধান সহঃকামঃহিঃরক্ষক একজন, প্রধান সহকরী একজন, হিসাব রক্ষক একজন, স্টোর কিপার একজন, ক্যাশিয়ার একজন, অফিস সহঃকামঃ কম্পিঃঅপারেটর একজন, অফিস সহায়ক দু-জন, ওয়ার্ড বয় দু-জন, আয়া দু-জন, কুক/মশালর্চী একজন, সিকিউরিটি গার্ড দু-জন, ওটি এ্যাটেনডেন্ট/বয় একজন, মালী একজন ও সুইপার দু-জন। ঐসব পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায়। কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.নূর আসাদ উজ-জামান বলেন, এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট ও মেডিকেল অফিসারের পদ কম থাকলেও সামার্থ্য অনুযায়ী রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাছাড়া এই হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড ঘোষণা করার ফলে এলাকার করোনা রোগীদের স্থাস্থ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম সায়েম জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে ৪ বেডের আইসোলেশন সেন্টার রাখা হয়েছে। এখানে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক নেই। হাইফ্লোনেজাল ক্যানোলা, সেন্টাল অক্সিজেন সরবরাহ , ভেন্টিলেটর , আইসিইউ বেড কিছুই নাই, আবার নেই প্রশিক্ষিত জনবল।

তিনি জানান ১৯ জন চিকিত্সকের মধ্যে রয়েছে ১১ জন,নার্স রয়েছে ২৩ জন এবং ওয়ার্ড বয় ও আয়া ৬ জনের মধ্যে রয়েছে ৪ জন। স্বাস্থ্য সহকারীর পদ শুন্য রয়েছে ১৪ জনের। এছাড়া রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যা। এছাড়া এক্সরে মেশিন বিকল, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন দুটি নষ্ট, ১০ বছর থেকে এ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে পড়ে আছে।

বেতাগী (বরগুনা) সংবাদদাতা মোঃ মিজানুর রহমান মজনু জানান, বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রথম শ্রেণির ২৮টি চিকিত্সকের পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৮ জন। এর ভিতর ২ জন চিকিত্সক অনত্র ডেপুটেশনে কর্মরত। এখানে ৮ জন চিকিত্সক কর্মরত দেখানো হলেও দুজন চিকিত্সক আছেন ডিপুটেশনে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ কমপ্লেঙ্ে কনিষ্ঠ কনসালট্যান্ট সার্জারি, মেডিসিন, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক সার্জারি, শিশু, চক্ষু, ইএনটি, ডেন্টাল, চর্ম ও যৌনরোগের চিকিত্সক থাকার কথা। তবে এখানে কোনো কনসালট্যান্ট চিকিত্সক নেই।

হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ানের পদ শূন্য থাকায় ১০ বছর যাবত্ মেশিনটি অকেজো অবস্থায় পরে আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. তেন মং বলেন, ‘হাসপাতালে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী চিকিত্সা নিচ্ছেন। অল্প জনবল দিয়েই আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে হিমশিম খেতে হয়।

লামা (বান্দরবান) সাংবাদদাতা মুহাম্মদ কামালুদ্দিন জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট লামা উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত রয়েছে ২জন মেডিকেল অফিসার ও ১ জন ডেন্টাল সার্জন। লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ মহিউদ্দীন মাজেদ চৌধুরী জানান, হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল কাঠামো ৩১ শয্যার। তার মধ্যেও ৬০% জনবলের পদ শূন্য রয়েছে। ২০ জন চিকিত্সকের স্থলে কর্মরত রয়েছে ৬ জন।

মেডিকেল অফিসার সংকটের কারণে চিকিত্সা প্রদানের হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের এক্সরে, আলট্রাস্নোগ্রাফি ও জিন এক্সপাট মিশিন জনবল সংকটের কারনে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ্যানেসথেটিষ্ট ও সার্জারি কনসালটেন্ট না থাকায় অপারেশন বিভাগে কোন রোগীকে চিকিত্সা দেওয়া যাচ্ছে না। র্দীঘদিন ধরে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে।

মাধবপুর(হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা শংকর পাল সুমন জানান, উপজেলার ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ ৪৮ বছরেও চালু হয়নি আপারেশন থিয়েটার। কনসালটেন্টের ১০টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য, নেই কোন টেকনেশিয়ান । এক্সরে , জরুরী প্রসুতি সেবা সহ অপারেশন সুবিধা না থাকায় প্রত্যাশিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারন জনগন । মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী এমপি বলেছেন, দেশে করোনা কালীন এ সংকটময় মুহুর্তে যা আছে তা দিয়েই জনগনকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে।

মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এ এইচ এম ইশতিয়াক মামুন জানান, মাধবপুরে করোনা পরিস্তিতি মোকাবেলায় ৫টি আইসোলেশন বেড, ২৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ রাখা হয়েছে। মাধবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ দিন ধরে কনসালটেন্টের ১০টি পদই শূন্য রয়েছে । টেকনেশিয়ানের অভাবে ১২ বছর ধরে এক্সরে মেশিন চালু করা যাচ্ছে না । মেশিনটি অকেজো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । বর্তমানে ১জন মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব), ১ জন এক্সরে টেকনেশিয়ান,১জন আ্য্যনেসথেসিয়া ও গাইনী কনসালটেন্ট নিয়োগ খুবই জরুরী । মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারী ৫০টি পদে ৩৫ জন কর্মরত এবং স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৩টি পদই শূন্য রয়েছে । একাধিক বার চাহিদা পত্র দেয়া হচ্ছে কোন কাজ হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান।