ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লিচু খেয়ে শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী নিষিদ্ধ কীটনাশক: গবেষণা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ কীটনাশকের বিষক্রিয়ার কারণেই প্রায় পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে ১৩টি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ওই শিশুরা লিচু খাবার পর মারা গিয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, নিহত শিশুরা সবাই ‘অ্যাকিউট এনসেফালাইটিস সিনড্রোমে’ আক্রান্ত হয়েছিল, ফলে তাদের মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি হয়। লিচু গাছের নীচে বা আশেপাশে এই কীটনাশক বিষের প্রভাব থাকে।

নতুন ওই গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১২ সালে যে সময় শিশুদের মৃত্যু হয় সেই সময়ে চাষীরা তাদের শস্যক্ষেতে ‘এনডোসালফান’ নামের অত্যন্ত বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করেছিল। যে কীটনাশকটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ।

অ্যামেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড হাইজিনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, লিচু ফলগুলোতে ওই কীটনাশক বিষ মিশে গিয়েছিল যা খাওয়ার কারণে ২০ ঘন্টার মধ্যে তার প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্কে প্রদাহ শুরু হয় ও শিশুদের মৃত্যু ঘটে।

পোকামাকড় ঠেকাতে লিচুসহ বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ক্ষেতখামারে কীটনাশক মেশানো হয়। লিচু যখন বাতাসে গাছ থেকে নীচে পড়ে ফেটে যায় তখন ওই কীটনাশকের বিষ ফলে মিশে যায়-আর লিচু গাছের নীচে বা আশেপাশে থেকে সেই ফল খেয়ে শিশু বা অন্য মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।

লিচু খাবার পর শিশু মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ঘটেছিল। তবে ভারতের ঘটনা উদ্ধৃত করে ‘দ্য ল্যানচেটে’ প্রকাশিত জার্নালে বলা হয়েছিল যে- লিচু ফলের মধ্যেই থাকা একটি রাসায়নিকের কারণে এমনটা ঘটেছে। শিশু খালি পেটে লিচু খেলে এই রাসায়নিকের প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু ঘটতে পারে।

সেই প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলেছিলেন- লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেয়ে ফেললে শিশুদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কিন্তু নতুন এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে -বাংলাদেশে লিচু খাবার পর যে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে তার কারণ শুধুমাত্র এই ফলটি নয়।

“আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি বাংলাদেশে ২০১২ সালে যে শিশুরা লিচু খাবার পর মারা গেছে তারা ওই ফলের ভেতরের রাসায়নিকের জন্য মারা যায়নি। কৃষিকাজে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে” -বলেন গবেষণা দলের প্রধান লেখক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়ার ডিজিজ রিসার্চের সহযোগী বিজ্ঞানী।

“বাংলাদেশে যখন লিচুর ফলন হয় ও দেশের মানুষেরা যেই সময়টায় ওই ফল খায় তখনই ঘটনাটি ঘটেছে। লিচু খাবার কারণে যদি মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো তাহলে দেশের সব অঞ্চল থেকেই ব্যাপকহারে এ ধরনের মৃত্যুসংবাদ আমরা শুনতাম। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটতো না” -বলেন তিনি।

২০১২ সালের ৩১শে মে- ৩০শে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় দিনাজপুর জেলায় লিচু খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ১৪ শিশু, এদের মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র একজন বেঁচে যায়।

আক্রান্ত ওই এলাকায় সেইসময়ে অনুসন্ধান চালায় ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের একটি দল। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর ওই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানিয়েছিলেন যে -লিচুতে বিষাক্ত কীটনাশকের কারণে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে।

এরপর ওই ঘটনার অনুসন্ধানে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন’ এর গবেষক দল।

আর মার্কিন গবেষকেরা তাদের প্রতিবেদনে বলছেন- নিষিদ্ধ কীটনাশক ‘এনডোসালফান’ এর কারণে ওই শিশুদের মৃত্যু হয়েছিল।

এখানে উল্লেখ্য ‘এনডোসালফান’ নামের ওই কীটনাশকটি ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু তারও আগে ২০০৫ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ওই কীটনাশকটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

লিচু খেয়ে শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী নিষিদ্ধ কীটনাশক: গবেষণা

আপডেট টাইম : ০৩:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ কীটনাশকের বিষক্রিয়ার কারণেই প্রায় পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে ১৩টি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ওই শিশুরা লিচু খাবার পর মারা গিয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, নিহত শিশুরা সবাই ‘অ্যাকিউট এনসেফালাইটিস সিনড্রোমে’ আক্রান্ত হয়েছিল, ফলে তাদের মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি হয়। লিচু গাছের নীচে বা আশেপাশে এই কীটনাশক বিষের প্রভাব থাকে।

নতুন ওই গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১২ সালে যে সময় শিশুদের মৃত্যু হয় সেই সময়ে চাষীরা তাদের শস্যক্ষেতে ‘এনডোসালফান’ নামের অত্যন্ত বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করেছিল। যে কীটনাশকটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ।

অ্যামেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড হাইজিনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, লিচু ফলগুলোতে ওই কীটনাশক বিষ মিশে গিয়েছিল যা খাওয়ার কারণে ২০ ঘন্টার মধ্যে তার প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্কে প্রদাহ শুরু হয় ও শিশুদের মৃত্যু ঘটে।

পোকামাকড় ঠেকাতে লিচুসহ বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ক্ষেতখামারে কীটনাশক মেশানো হয়। লিচু যখন বাতাসে গাছ থেকে নীচে পড়ে ফেটে যায় তখন ওই কীটনাশকের বিষ ফলে মিশে যায়-আর লিচু গাছের নীচে বা আশেপাশে থেকে সেই ফল খেয়ে শিশু বা অন্য মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।

লিচু খাবার পর শিশু মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ঘটেছিল। তবে ভারতের ঘটনা উদ্ধৃত করে ‘দ্য ল্যানচেটে’ প্রকাশিত জার্নালে বলা হয়েছিল যে- লিচু ফলের মধ্যেই থাকা একটি রাসায়নিকের কারণে এমনটা ঘটেছে। শিশু খালি পেটে লিচু খেলে এই রাসায়নিকের প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু ঘটতে পারে।

সেই প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলেছিলেন- লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেয়ে ফেললে শিশুদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কিন্তু নতুন এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে -বাংলাদেশে লিচু খাবার পর যে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে তার কারণ শুধুমাত্র এই ফলটি নয়।

“আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি বাংলাদেশে ২০১২ সালে যে শিশুরা লিচু খাবার পর মারা গেছে তারা ওই ফলের ভেতরের রাসায়নিকের জন্য মারা যায়নি। কৃষিকাজে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে” -বলেন গবেষণা দলের প্রধান লেখক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়ার ডিজিজ রিসার্চের সহযোগী বিজ্ঞানী।

“বাংলাদেশে যখন লিচুর ফলন হয় ও দেশের মানুষেরা যেই সময়টায় ওই ফল খায় তখনই ঘটনাটি ঘটেছে। লিচু খাবার কারণে যদি মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো তাহলে দেশের সব অঞ্চল থেকেই ব্যাপকহারে এ ধরনের মৃত্যুসংবাদ আমরা শুনতাম। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটতো না” -বলেন তিনি।

২০১২ সালের ৩১শে মে- ৩০শে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় দিনাজপুর জেলায় লিচু খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ১৪ শিশু, এদের মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র একজন বেঁচে যায়।

আক্রান্ত ওই এলাকায় সেইসময়ে অনুসন্ধান চালায় ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের একটি দল। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর ওই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানিয়েছিলেন যে -লিচুতে বিষাক্ত কীটনাশকের কারণে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে।

এরপর ওই ঘটনার অনুসন্ধানে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন’ এর গবেষক দল।

আর মার্কিন গবেষকেরা তাদের প্রতিবেদনে বলছেন- নিষিদ্ধ কীটনাশক ‘এনডোসালফান’ এর কারণে ওই শিশুদের মৃত্যু হয়েছিল।

এখানে উল্লেখ্য ‘এনডোসালফান’ নামের ওই কীটনাশকটি ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু তারও আগে ২০০৫ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ওই কীটনাশকটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সূত্র: বিবিসি বাংলা