একটা সাইকেল, তার দু’ চাকায় দু রকম পাম দেয়া। একটায় হাওয়া বেশী একটায় কম। সেই সাইকেল কতদূর আর কিভাবে চলবে, বা আদৌ চলবে কিনা চালক পরিষ্কার বুঝতে পারবেন। যখন স্বামী-স্ত্রী একটি সংসার গঠন করেন, তখন আমাদের দেশে অধিকাংশ সময় আর কিছু না হোক জন্ম নিয়ন্ত্রণের গুরু দায়িত্বটি বর্তায় স্ত্রীর উপর। স্ত্রী চাইলো বা না চাইলো জন্ম নিরোধক কড়া কড়া ওষুধ গিলতে হয় তাকে, যাতে স্বামী রত্নটি কোন বাড়তি টেনশন না নিয়ে স্ত্রীকে প্রাণভরে উপভোগ করতে পারেন।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন স্ত্রীকে এই দায়িত্ব নিতে হবে? পুরুষরা কেন এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিতে চায় না। শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারটা তো একতরফা না। একতরফা ব্যাপার হয় ধর্ষণের ক্ষেত্রে। এই একতরফা দায়িত্ব চাপানো কি সেটা থেকে খুব আলাদা? যাই হোক, সেই গূঢ় আলোচনা সবার পছন্দ হবে না।
নানান রকম ওষুধ বেরিয়েছে। নানান বিশেষণে বিশেষায়িত। কাশ ফুল, স্বল্প মাত্রা। সেসব গিলতে গিলতে নারীর নাড়ি জ্বলে যায়, বন্ধ্যাত্ব আসে, জরায়ুর বারটা বেজে যায়, হরমোনাল ইম্বালান্স হয়, ইররেগুলার পিরিয়ড, টিউমার এমনকি ক্যান্সারও হয়ে যায়। শেষ মেষ জরায়ু কেটে বাদ দিয়ে জীবন বাঁচানো। তাও তো স্বামী সন্তুষ্ট হলো!
না, তারপর অন্য জ্বালা। স্বামীকে তৃপ্ত করতে যে শারীরিক সক্ষমতা দরকার, যৌনতার প্রতি আগের আকর্ষণ প্রয়োজন, তা অনেকটাই নেই। স্বামী সাহেবের তো তাতে পোষাচ্ছে না। তখন কখনও উলটো পাল্টা সাইটে গিয়ে বা আশে পাশে অন্য কোন নারীর দ্বারস্থ হতে হচ্ছে স্বামীটিকে।
ভোগান্তিটা কতদূর বুঝতে পারছেন? কথাগুলো বানানো নয়। বাস্তবের ভুক্তভোগী অনেক নারীর কথা।
এর উলটো চিত্রও আছে। অনেক পুরুষ আছে জন্ম নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব নিয়েছে স্ত্রীকে কোন রূপ চাপে না রেখে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে যাদের কথাই শুনেছি, সেখানে পুরুষরা জন্ম নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী নয়। ফলশ্রুতিতে মেয়েটিকে ৩/৪ বার অ্যাবরশনের মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে। আর তার ফল কী হতে পারে কম বেশী সবাই জানে। বাংলাদেশ গ্রাম অধ্যুষিত। সুতরাং চিত্রটা খুব একটা সুবিধার নয় এক্ষেত্রে।
ছেলেরা কেন আগ্রহী নয় সেসব শুনে মনে হয় তারা অবাধ ও নিয়ন্ত্রনহীন ভোগে বিশ্বাসী। সেখানে তার সঙ্গিনীর কি হাল হলো, সেটা তার বিবেচ্য বিষয় নয়। বিয়ে করে এনেছে, এখন সে তো ভোগেরই বস্তু। সন্তান যখন চাইনা, তখন নাড়ি জ্বালানো ওষুধ খাবে। যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়, অ্যাবরশন করাবে, সিম্পল!
পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রচলিত পদ্ধতিগুলো পুরুষের জন্য হানিকর নয়। কিন্তু বড়ি বা ইমপ্ল্যান্ট যেটাই বলেন না কেন, নারীর জন্য খুব ভাল বা স্বস্তিকর নয়, সেটা হলফ করেই বলা যায়। এসব ওষুধের বিশাল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রেখে যায় নারীর শরীরে। অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়া, চোখের নিচে গভীর কালো দাগ, অল্পতেই ক্লান্তিসহ নানারকম কষ্টে ভূগেন নারীরা।
অথচ দুজন মিলে একটা সংসারের সুন্দর কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পারস্পরিক, বিশ্বাস, আস্থা আর ভালবাসার জোরে গড়তে পারে ভবিষ্যতের ভিত। প্রয়োজন শুধু একতরফা সিদ্ধান্তের প্রয়োগ থেকে বেরিয়ে আসা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সেই মানসিকতা সেই মানবিকতা রাতারাতি বেড়ে যাবে, হয়তো এমন আশা করা এই মুহূর্তে আকাশ কুসুম কল্পনা হবে। তবু আশায় থাকলাম। বিপ্লব তো হঠাৎ করেই হয়।
– সঙ্গীত শিল্পী ও লেখক