ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সামরিক আইন জারি করেও প্রত্যাহার, কেন পিছু হটল দ. কোরিয়ার সরকার

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইউন সুক-ইওল মঙ্গলবার দিনগত রাতে হঠাৎ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেশটিতে সামরিক আইন ঘোষণা করেন। কিন্তু ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই তিনিই আবার সামরিক আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কী এমন কারণ ছিল এর পেছনে?

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে এ নিয়ে গতকাল থেকেই নানা সংবাদ প্রকাশ পায়। সেসব প্রতিবেদনের সূত্র থেকে জানা যায়, মূলত দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদ সদস্যদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। এ কারণেই একদিন পার না হতেই তিনি সামরিক আইন জারির আদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে পার্লামেন্টে ভোটের পরপরই প্রেসিডেন্ট ইউন সুক–ইওল বলেন, ‘সামরিক আইনের অবসান ঘটাতে পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত মেনে নেব। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এ আইন প্রত্যাহার করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্টের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি সামরিক আইন প্রত্যাহারের কথা সামরিক বাহিনীকে জানিয়েছি। পার্লামেন্টের প্রস্তাব গ্রহণ ও সামরিক আইন প্রত্যাহার করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠক করছে। বৈঠকের পর সামরিক আইন তুলে নেয়া হবে।’

এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাতে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দেশে সামরিক আইন জারি করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। গভীর রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ওয়াইটিএনে দেওয়া জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।

সামরিক আইন জারির আকস্মিক ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল বলেছিলেন, ‘উদার এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সামরিক আইন জারির পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া তার আর কোনও উপায় ছিল না। বিরোধী দলগুলো সংসদীয় প্রক্রিয়া জিম্মি করে দেশকে সংকটের মাঝে ফেলে দিয়েছে।’

এরপর তিনি ঘোষণা করেন,‘আমি উত্তরের কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে মুক্ত কোরিয়ার প্রজাতন্ত্র রক্ষা, জনগণের স্বাধীনতা ও সুখ লুণ্ঠনকারী ঘৃণ্য উত্তর কোরিয়াপন্থী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল এবং উদার সাংবিধানিক সুরক্ষার জন্য সামরিক আইন ঘোষণা করছি।’

তবে এদিন রাত থেকেই প্রেসিডেন্টের সামরিক শাসন জারির আদেশ মেনে নেননি দক্ষিণ কোরিয়ার এমপিরা। সামরিক আইন জারির পর দেশটির পার্লামেন্ট ঘিরে উত্তেজনার পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থান নিতে দেখা যায়। প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের দাবিতেও তাদের স্লোগান দিতে শোনা যায়। এর এক পর্যায়ে পার্লামেন্ট ভবনে সেনাবাহিনীও প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল রাতে ১৯০ জন আইনপ্রণেতা নিরাপত্তা বাহিনীকে এড়িয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন এবং তারা সামরিক আইন জারির বিরুদ্ধে ভোট দেন।

উল্লেখ্য, সামরিক আইন জারি করায় জরুরি সময়ে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষের শাসন চলতে থাকে এবং স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার স্থগিত হয়ে যায়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

সামরিক আইন জারি করেও প্রত্যাহার, কেন পিছু হটল দ. কোরিয়ার সরকার

আপডেট টাইম : ১৩ ঘন্টা আগে

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইউন সুক-ইওল মঙ্গলবার দিনগত রাতে হঠাৎ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেশটিতে সামরিক আইন ঘোষণা করেন। কিন্তু ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই তিনিই আবার সামরিক আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কী এমন কারণ ছিল এর পেছনে?

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে এ নিয়ে গতকাল থেকেই নানা সংবাদ প্রকাশ পায়। সেসব প্রতিবেদনের সূত্র থেকে জানা যায়, মূলত দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদ সদস্যদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। এ কারণেই একদিন পার না হতেই তিনি সামরিক আইন জারির আদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে পার্লামেন্টে ভোটের পরপরই প্রেসিডেন্ট ইউন সুক–ইওল বলেন, ‘সামরিক আইনের অবসান ঘটাতে পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত মেনে নেব। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এ আইন প্রত্যাহার করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্টের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি সামরিক আইন প্রত্যাহারের কথা সামরিক বাহিনীকে জানিয়েছি। পার্লামেন্টের প্রস্তাব গ্রহণ ও সামরিক আইন প্রত্যাহার করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠক করছে। বৈঠকের পর সামরিক আইন তুলে নেয়া হবে।’

এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাতে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দেশে সামরিক আইন জারি করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। গভীর রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ওয়াইটিএনে দেওয়া জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।

সামরিক আইন জারির আকস্মিক ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল বলেছিলেন, ‘উদার এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সামরিক আইন জারির পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া তার আর কোনও উপায় ছিল না। বিরোধী দলগুলো সংসদীয় প্রক্রিয়া জিম্মি করে দেশকে সংকটের মাঝে ফেলে দিয়েছে।’

এরপর তিনি ঘোষণা করেন,‘আমি উত্তরের কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে মুক্ত কোরিয়ার প্রজাতন্ত্র রক্ষা, জনগণের স্বাধীনতা ও সুখ লুণ্ঠনকারী ঘৃণ্য উত্তর কোরিয়াপন্থী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল এবং উদার সাংবিধানিক সুরক্ষার জন্য সামরিক আইন ঘোষণা করছি।’

তবে এদিন রাত থেকেই প্রেসিডেন্টের সামরিক শাসন জারির আদেশ মেনে নেননি দক্ষিণ কোরিয়ার এমপিরা। সামরিক আইন জারির পর দেশটির পার্লামেন্ট ঘিরে উত্তেজনার পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থান নিতে দেখা যায়। প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের দাবিতেও তাদের স্লোগান দিতে শোনা যায়। এর এক পর্যায়ে পার্লামেন্ট ভবনে সেনাবাহিনীও প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল রাতে ১৯০ জন আইনপ্রণেতা নিরাপত্তা বাহিনীকে এড়িয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন এবং তারা সামরিক আইন জারির বিরুদ্ধে ভোট দেন।

উল্লেখ্য, সামরিক আইন জারি করায় জরুরি সময়ে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষের শাসন চলতে থাকে এবং স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার স্থগিত হয়ে যায়।