ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি

অবশেষে নিজ বাসভূমিতে ফিরতে শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা। যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সোমবার সকাল থেকে উত্তর গাজার দিকে যাত্রা শুরু করেছে। ইসরাইলের হামলায় গত ১৫ মাসে ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে নিজ এলাকার দিকে যাচ্ছেন তারা। আনন্দে অশ্রুশিক্ত গাজাবাসী একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে সমুদ্রের তীর ধরে বালুকাময় পথে বাড়ির পথে হেঁটে চলেছেন বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী। তাদের গন্তব্য উপত্যকার উত্তরাঞ্চল। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান।
গাজার একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ক্রসিং খোলার ২ ঘণ্টার মধ্যে ২ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ হেঁটে উত্তর গাজায় ফিরে এসেছেন। এসব শরণার্থী ফিরিয়ে নিতে গাজা সরকার সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিয়োগ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, নেতজারিম চেকপয়েন্টের পশ্চিম অংশ দিয়ে আল রশিদ রোড ধরে গাজার মূল শহরের মধ্য দিয়ে উত্তর অংশে যাত্রা শুরু করেছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। শনিবারই নেতজারিম করিডোরের কাছে জড়ো হন তারা। ইসরাইলের অধিকৃত ভূমির ওই অংশ দিয়ে নিজ ভূমিতে ফিরতে অনুমতির আশায় সেখানে জড়ো হন ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু শনিবার ইসরাইলি সেনারা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে এবং কিছু লোকের ওপর গুলি চালায়। এতে একজন নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
শনিবারের জিম্মি মুক্তির তালিকায় আরবেল ইয়েহুদের নাম না থাকায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের আটকে দেয় ইসরাইল। তাদের অভিযোগ ছিল চুক্তি অনুযায়ী ইয়েহুদ নামের ওই নারীকে মুক্তি দেয়নি হামাস। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে যে, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে করিডোর পার হতে অপেক্ষারত বেসামরিক নাগরিকদের ভিড়ের ওপর ইসরাইলি হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। হামাসও পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, উত্তর গাজা অভিমুখী ফিলিস্তিনিদের পথ রুদ্ধ করাও যুদ্ধবিরতির চুক্তির লঙ্ঘন।
গাজাবাসীরা এই প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করে বলেছে যে, এটি একটি বিজয়ের দিন। হামাস নিজেই একটি বিবৃতিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রত্যাবর্তনকে ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘বিজয়’ এবং ইসরাইলিদের জন্য পরাজয় হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের যে অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল, তাদের প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য তাদের ভূমির সঙ্গে তাদের সংযোগ নিশ্চিত করেছে। আবারও প্রমাণ করেছে, মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার এবং তাদের দৃঢ় ইচ্ছা ভঙ্গ করার আক্রমণাত্মক লক্ষ্য অর্জনে দখলদার বাহিনী ব্যর্থ।
ইসলামিক জিহাদ এই প্রত্যাবর্তনকে তাদের সবার প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবেও বর্ণনা করেছে। যারা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক দেশত্যাগের স্বপ্ন পোষণ করত। গোষ্ঠীটি বলেছে, এটি এক মহাকাব্যিক দৃশ্য। আমাদের লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ উত্তর গাজায় ফিরে আসছে, এমন একটি এলাকা যা ইহুদিদের নৃশংসতার ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি

আপডেট টাইম : ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫
অবশেষে নিজ বাসভূমিতে ফিরতে শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা। যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সোমবার সকাল থেকে উত্তর গাজার দিকে যাত্রা শুরু করেছে। ইসরাইলের হামলায় গত ১৫ মাসে ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে নিজ এলাকার দিকে যাচ্ছেন তারা। আনন্দে অশ্রুশিক্ত গাজাবাসী একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে সমুদ্রের তীর ধরে বালুকাময় পথে বাড়ির পথে হেঁটে চলেছেন বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী। তাদের গন্তব্য উপত্যকার উত্তরাঞ্চল। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান।
গাজার একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ক্রসিং খোলার ২ ঘণ্টার মধ্যে ২ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ হেঁটে উত্তর গাজায় ফিরে এসেছেন। এসব শরণার্থী ফিরিয়ে নিতে গাজা সরকার সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিয়োগ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, নেতজারিম চেকপয়েন্টের পশ্চিম অংশ দিয়ে আল রশিদ রোড ধরে গাজার মূল শহরের মধ্য দিয়ে উত্তর অংশে যাত্রা শুরু করেছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। শনিবারই নেতজারিম করিডোরের কাছে জড়ো হন তারা। ইসরাইলের অধিকৃত ভূমির ওই অংশ দিয়ে নিজ ভূমিতে ফিরতে অনুমতির আশায় সেখানে জড়ো হন ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু শনিবার ইসরাইলি সেনারা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে এবং কিছু লোকের ওপর গুলি চালায়। এতে একজন নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
শনিবারের জিম্মি মুক্তির তালিকায় আরবেল ইয়েহুদের নাম না থাকায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের আটকে দেয় ইসরাইল। তাদের অভিযোগ ছিল চুক্তি অনুযায়ী ইয়েহুদ নামের ওই নারীকে মুক্তি দেয়নি হামাস। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে যে, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে করিডোর পার হতে অপেক্ষারত বেসামরিক নাগরিকদের ভিড়ের ওপর ইসরাইলি হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। হামাসও পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, উত্তর গাজা অভিমুখী ফিলিস্তিনিদের পথ রুদ্ধ করাও যুদ্ধবিরতির চুক্তির লঙ্ঘন।
গাজাবাসীরা এই প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করে বলেছে যে, এটি একটি বিজয়ের দিন। হামাস নিজেই একটি বিবৃতিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রত্যাবর্তনকে ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘বিজয়’ এবং ইসরাইলিদের জন্য পরাজয় হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের যে অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল, তাদের প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য তাদের ভূমির সঙ্গে তাদের সংযোগ নিশ্চিত করেছে। আবারও প্রমাণ করেছে, মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার এবং তাদের দৃঢ় ইচ্ছা ভঙ্গ করার আক্রমণাত্মক লক্ষ্য অর্জনে দখলদার বাহিনী ব্যর্থ।
ইসলামিক জিহাদ এই প্রত্যাবর্তনকে তাদের সবার প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবেও বর্ণনা করেছে। যারা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক দেশত্যাগের স্বপ্ন পোষণ করত। গোষ্ঠীটি বলেছে, এটি এক মহাকাব্যিক দৃশ্য। আমাদের লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ উত্তর গাজায় ফিরে আসছে, এমন একটি এলাকা যা ইহুদিদের নৃশংসতার ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।