ঢাকা , রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা শিশুরা খাদ্য পানি ও চিকিৎসা সংকটে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কক্সবাজারের উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার শিশু মানবেতর পরিস্থিতিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটি জানায়, উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবার সংকটে রয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এদিকে রাখাইনে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের আঁকায় ফুটে উঠেছে সেনাদের নির্মমতার চিত্র। এসব শিশুর মনে এখনো দগদগে হয়ে আছে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।

গতকাল শুক্রবার ইউনিসেফের ফেসবুক পেজে এমনই একটি ছবি দেখা যায়। শিশুদের আঁকা এসব ছবিই বলে দেয় নির্যাতনের ঘটনা তাদের মনে কতটা ক্ষত তৈরি করেছে। ভুলে যাওয়া তো দূরের কথা, প্রতিনিয়ত সেসব স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। তারা ভয়াবহতার স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিকতায় ফিরতে পারবে কি না তা নিয়ে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইউনিসেফের ফেসবুক পেজে দেখা যায়, একটি শিশু এঁকেছে সামরিক হেলিকপ্টার থেকে বোমা ফেলে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চোখের সামনে পুড়ে যাচ্ছে সব। গাড়িচাপা দিয়ে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে। দল বেধে নির্যাতিত মানুষ নৌকায় করে পালিয়ে যাচ্ছে। ইউনিসেফের কর্মকর্তা সাইমন ইনগ্রাম বলেছেন, ‘রাখাইনে হত্যাযজ্ঞ থামাতে হবে। আমরা এ বিষয়ে আর চুপ করে থাকতে পারি না। তবে এ সংকট স্বল্পমেয়াদি না হলেও তাড়াতাড়ি সমাধান হবে না।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি সপ্তাহে ১২ হাজার শিশু শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে। ক্ষুধা ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা বেশির ভাগ শিশুই এখনো মানসিকভাবে বিভীষিকা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানো শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা। ইউনিসেফের কর্মকর্তা সাইমন ইনগ্রাম জানান, এ সংকট স্বল্পমেয়াদি নয় এবং তাড়াতাড়ি এর সমাধান হবে না। তাই এটা খুবই কঠিন যে সীমান্ত খুলে দিয়ে যাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে তাদেরকে বাংলাদেশি শিশুদের মতো সব সুবিধা নিশ্চিত করা।

মিয়ানমারের বেশির ভাগ রোহিঙ্গারই নাগরিকত্ব নেই। কোনো রকম বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো রকম পরিচয় ছাড়া সমাজে বাস করাটা খুবই কঠিন। দুই সপ্তাহ রোহিঙ্গাশিবিরে থাকার পর ইনগ্রাম বলেছেন, এখানে খাবারের সরবরাহ কম। প্রতি পাঁচজনে একজন শিশুর বয়স পাঁচের নিচে। তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। ইনগ্রাম বলেন, সেখানে ডায়রিয়া, কলেরাসহ অন্য পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি খুবই বেশি।

ইউনিসেফ তাদের বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা করেছে এবং কলেরার টিকা দিচ্ছে। জাতিসংঘের আহ্বান করা ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তার মধ্যে ৭৬ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে ইউনিসেফ। কিন্তু মাত্র সাত শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানান ইনগ্রাম। জাতিসংঘ সংস্থাগুলো এখনো রাখাইনে যাওয়ার অনুমতি চাইছে। সেখানে ঠিক কত রোহিঙ্গা না খেয়ে আছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য নেই তাদের কাছে।

ইনগ্রাম বলেন, ‘আমরা আবারও বলতে চাই, রাখাইনে শিশুদের জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজন। সেখানে শিশুসহ সবার ওপর হত্যাযজ্ঞ থামাতে হবে। আমরা এ বিষয়ে চুপ করে থাকতে পারি না।’

ইউনিসেফ এখন চারটি বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। সেগুলো হলো-১. বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মানবিক সহায়তা পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক সহায়তা ও অর্থ প্রদান। ২. রোহিঙ্গা শিশু ও পরিবারের নিরাপত্তা দেওয়া এবং রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হওয়া সব শিশুর দ্রুত অবাধ মানবিক সুবিধা নিশ্চিত করা। ৩. নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে সমর্থন দেওয়া। ৪. এই সমস্যার একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান টানা এবং রাখাইন রাজ্যে অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

রোহিঙ্গা শিশুরা খাদ্য পানি ও চিকিৎসা সংকটে

আপডেট টাইম : ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কক্সবাজারের উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার শিশু মানবেতর পরিস্থিতিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটি জানায়, উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবার সংকটে রয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এদিকে রাখাইনে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের আঁকায় ফুটে উঠেছে সেনাদের নির্মমতার চিত্র। এসব শিশুর মনে এখনো দগদগে হয়ে আছে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।

গতকাল শুক্রবার ইউনিসেফের ফেসবুক পেজে এমনই একটি ছবি দেখা যায়। শিশুদের আঁকা এসব ছবিই বলে দেয় নির্যাতনের ঘটনা তাদের মনে কতটা ক্ষত তৈরি করেছে। ভুলে যাওয়া তো দূরের কথা, প্রতিনিয়ত সেসব স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। তারা ভয়াবহতার স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিকতায় ফিরতে পারবে কি না তা নিয়ে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইউনিসেফের ফেসবুক পেজে দেখা যায়, একটি শিশু এঁকেছে সামরিক হেলিকপ্টার থেকে বোমা ফেলে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চোখের সামনে পুড়ে যাচ্ছে সব। গাড়িচাপা দিয়ে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে। দল বেধে নির্যাতিত মানুষ নৌকায় করে পালিয়ে যাচ্ছে। ইউনিসেফের কর্মকর্তা সাইমন ইনগ্রাম বলেছেন, ‘রাখাইনে হত্যাযজ্ঞ থামাতে হবে। আমরা এ বিষয়ে আর চুপ করে থাকতে পারি না। তবে এ সংকট স্বল্পমেয়াদি না হলেও তাড়াতাড়ি সমাধান হবে না।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি সপ্তাহে ১২ হাজার শিশু শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে। ক্ষুধা ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা বেশির ভাগ শিশুই এখনো মানসিকভাবে বিভীষিকা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানো শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা। ইউনিসেফের কর্মকর্তা সাইমন ইনগ্রাম জানান, এ সংকট স্বল্পমেয়াদি নয় এবং তাড়াতাড়ি এর সমাধান হবে না। তাই এটা খুবই কঠিন যে সীমান্ত খুলে দিয়ে যাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে তাদেরকে বাংলাদেশি শিশুদের মতো সব সুবিধা নিশ্চিত করা।

মিয়ানমারের বেশির ভাগ রোহিঙ্গারই নাগরিকত্ব নেই। কোনো রকম বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো রকম পরিচয় ছাড়া সমাজে বাস করাটা খুবই কঠিন। দুই সপ্তাহ রোহিঙ্গাশিবিরে থাকার পর ইনগ্রাম বলেছেন, এখানে খাবারের সরবরাহ কম। প্রতি পাঁচজনে একজন শিশুর বয়স পাঁচের নিচে। তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। ইনগ্রাম বলেন, সেখানে ডায়রিয়া, কলেরাসহ অন্য পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি খুবই বেশি।

ইউনিসেফ তাদের বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা করেছে এবং কলেরার টিকা দিচ্ছে। জাতিসংঘের আহ্বান করা ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তার মধ্যে ৭৬ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে ইউনিসেফ। কিন্তু মাত্র সাত শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানান ইনগ্রাম। জাতিসংঘ সংস্থাগুলো এখনো রাখাইনে যাওয়ার অনুমতি চাইছে। সেখানে ঠিক কত রোহিঙ্গা না খেয়ে আছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য নেই তাদের কাছে।

ইনগ্রাম বলেন, ‘আমরা আবারও বলতে চাই, রাখাইনে শিশুদের জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজন। সেখানে শিশুসহ সবার ওপর হত্যাযজ্ঞ থামাতে হবে। আমরা এ বিষয়ে চুপ করে থাকতে পারি না।’

ইউনিসেফ এখন চারটি বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। সেগুলো হলো-১. বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মানবিক সহায়তা পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক সহায়তা ও অর্থ প্রদান। ২. রোহিঙ্গা শিশু ও পরিবারের নিরাপত্তা দেওয়া এবং রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হওয়া সব শিশুর দ্রুত অবাধ মানবিক সুবিধা নিশ্চিত করা। ৩. নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে সমর্থন দেওয়া। ৪. এই সমস্যার একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান টানা এবং রাখাইন রাজ্যে অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা।