ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগের জয় ও জাতীয় উন্নয়ন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে এখনো কথা চলছে। দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক মহল নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মানের, সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক বলে মতামত দিয়েছে। তবে কিছু সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছ। অভিযোগ রয়েছে কারচুপিরও। এরশাদ পরবর্তী তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সেখানেও কিন্তু নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্ক ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। সে বিবেচনায় এবারের নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে তাকে শাসক মহল আমলে না নিলেও পারে। তবে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে যেসব আসন নিয়ে, সেগুলো নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখতে পারে।

এবারের বিশাল বিজয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্ব যেমন আওয়ামী লীগকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে, তেমনি বিএনপির ভরাডুবির পেছনে তার অতীত কার্যকলাপ, জামায়াতের সঙ্গে সম্প্রীতি, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাব বলেই মনে করেন বিজ্ঞজনরা। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আস্থা রেখে জনগণ এ দলটিকে নির্বাচিত করেছে।

এমনভাবে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে যে কার্যত সংসদে কোনো বিরোধী দলই নেই। এ রকম সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং একচ্ছত্র আধিপত্য অনেক সময় দল তথা সরকারকে লাগামহীন বেপরোয়া করে তুলতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকার নিজের প্রয়োজনে গণমাধ্যম এবং বিবেকবান নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার পথ প্রশস্ত করে দিতে পারে। স্বাধীন গণমাধ্যম এবং দায়িত্ববান নাগরিক সমাজ পালন করতে পারে বিরোধী দলের ভূমিকা। তবে আশার কথা হলো, এবার জাতীয় পার্টি সরকারে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। দলটি একাদশ সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে।

সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম সৌন্দর্য কার্যকরী বিরোধী দল। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর সরকারের ভালো কাজের প্রশংসাও বিরোধী দলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সে বিবেচনায় জাতীয় পার্টি যদি সত্যিই সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে, তাহলে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে একাদশ সংসদের প্রতিটি অধিবেশন। আবার সরকারি দলেরও রয়েছে বিরাট ভূমিকা। তারা এবার সর্বোচ্চ মাত্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে। আত্মঅহমিকা যেন দলের গণতন্ত্র চর্চা ব্যাহত না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পাশাপাশি বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যা কম হওয়ায় তাদের কার্যকরী ভূমিকা পালনের পথ করে দিতে হবে। আলোচনা-সমালোচনা গ্রহণের মানসিকতা দেখাতে হবে। সরকার ইচ্ছা করলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কণ্ঠভোটেই যে কোনো বিল পাস করিয়ে নিতে পারে। তবে সেই বিল আইনে পরিণত হলে তাতে জনকল্যাণ বয়ে আসবে কিনা—সে ব্যাপারে সংসদীয় রীতি অনুসারে খোলা ফোরামে ব্যাপক বিস্তর আলোচনার সুযোগ রাখতে হবে। এর ফলে একদিকে যেমন সংসদে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাকবে, তেমনি সংসদীয় রীতি অনুসারে ভালো চর্চা দেশ ও জাতির সামনে উপস্থাপিত হবে। যেহেতু এই সরকার বার বার বলেছে গণতন্ত্রের পাশাপাশি উন্নয়নই তাদের টার্গেট, কাজেই তাদের সেই লক্ষ পূরণের জন্য এই গণতান্ত্রিক চর্চাগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।

গত দশ বছরে সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। জনগণের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে অনেক ক্ষেত্রেই। তবে এই উন্নয়ন যে একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন হয়েছে তা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক নজরদারি না থাকার কারণে বা অতি উৎসাহি নেতাকর্মী বা স্থানীয় নেতার কারণে ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে সরকারের সাফল্য ম্লান হয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় সরকারের সাফল্যের পাল্লাই ভারী।

পরপর দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাফল্যের তালিকাটি নেহায়েত ছোট নয়। তারপরও টানা তৃৃতীয় মেয়াদে অনেক সাধারণ ভোটারের মনেই দ্বিধা রয়েছে। আসলেই কি পারবে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে? এই ভাবনায় যারা বিশ্বাসী তাদের বিশ্বাসকে মিথ্যা প্রমাণ করার দায়িত্বও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। দশ বছরে সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এবারের পাঁচ বছর সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি হোক সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিরন্তর চেষ্টা। নির্বাচনী ইশতেহারে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে আওয়ামী লীগ যে ২১টি অঙ্গীকার করেছে তা-বাস্তবায়নের মূল বাধা যেন দুর্নীতি হয়ে না দাঁড়ায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই দুর্নীতি পরোপুরি নির্মূল কোনো দেশেই হয়নি। তবে অবশ্যই তা সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে হবে। এছাড়াও চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতার মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎপ্রকল্প, পায়রা বন্দর, নুতন কর্মসংস্থান, জনবান্ধব আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সামাজিক সুরক্ষা খাতসহ দারিদ্র্যকে ৫শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলেই এ সরকার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছতে পারবে।

চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, জঙ্গিবাদ, মাদক নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিশেষ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি অত্যন্ত মানবিক। আর এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে এদেশে অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। তাদের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দিনের পর দিন এই রোহিঙ্গাদের লালন করতে পারে না। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এদেশের কূটনীতিকদের আন্তর্জাতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। মিয়ানমারকে শরণার্থী গ্রহণে বাধ্য করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা করতে হবে। এর প্রথম কথাই হলো আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে। না হলে এ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। সরকারের উন্নয়ন এজেন্ডার সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

উন্নয়ন এর সংজ্ঞা দিনে দিনে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আর্থিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থানের উন্নয়নের সংজ্ঞাও পাল্টে যাবে। আগে যেখানে স্বাক্ষরজ্ঞানকে শিক্ষিত বলে সম্মান করা হতো, অদূর ভবিষ্যতে এদেশে শুধু স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্নকে খুব বেশি মাত্রায় সম্মান করা হবে না। আবার সুস্থ জীবন কিন্তু আয়ুষ্কাল কম, তাহলে সেটিও স্বাস্থ্য উন্নয়নের সংগায় পড়বে না। বাসস্থানের চাহিদাও এখন উন্নত হচ্ছে। শুধু মাথা গোজার ঠাঁইকে প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় মনে করা হলেও কালে কালে বাসযোগ্য আবাসনকেই মানদণ্ড বলে বিবেচনা করা হবে। সব মিলিয়ে উন্নয়ন হলো জনগণের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানো। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে যেভাবে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র শুধু রোল মডেলই হবে না, এটি হবে আরো বেশি কিছু। জনগণের রায়কে সম্মান করে আওয়ামী লীগ দেশকে সে পথে নিয়ে যাবে—এটাই প্রত্যাশা করি মনেপ্রাণে।

লেখক : কলামিস্ট মন্ট্রিয়েল, কানাডা

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

আওয়ামী লীগের জয় ও জাতীয় উন্নয়ন

আপডেট টাইম : ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে এখনো কথা চলছে। দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক মহল নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মানের, সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক বলে মতামত দিয়েছে। তবে কিছু সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছ। অভিযোগ রয়েছে কারচুপিরও। এরশাদ পরবর্তী তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সেখানেও কিন্তু নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্ক ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। সে বিবেচনায় এবারের নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে তাকে শাসক মহল আমলে না নিলেও পারে। তবে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে যেসব আসন নিয়ে, সেগুলো নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখতে পারে।

এবারের বিশাল বিজয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্ব যেমন আওয়ামী লীগকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে, তেমনি বিএনপির ভরাডুবির পেছনে তার অতীত কার্যকলাপ, জামায়াতের সঙ্গে সম্প্রীতি, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাব বলেই মনে করেন বিজ্ঞজনরা। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আস্থা রেখে জনগণ এ দলটিকে নির্বাচিত করেছে।

এমনভাবে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে যে কার্যত সংসদে কোনো বিরোধী দলই নেই। এ রকম সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং একচ্ছত্র আধিপত্য অনেক সময় দল তথা সরকারকে লাগামহীন বেপরোয়া করে তুলতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকার নিজের প্রয়োজনে গণমাধ্যম এবং বিবেকবান নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার পথ প্রশস্ত করে দিতে পারে। স্বাধীন গণমাধ্যম এবং দায়িত্ববান নাগরিক সমাজ পালন করতে পারে বিরোধী দলের ভূমিকা। তবে আশার কথা হলো, এবার জাতীয় পার্টি সরকারে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। দলটি একাদশ সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে।

সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম সৌন্দর্য কার্যকরী বিরোধী দল। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর সরকারের ভালো কাজের প্রশংসাও বিরোধী দলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সে বিবেচনায় জাতীয় পার্টি যদি সত্যিই সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে, তাহলে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে একাদশ সংসদের প্রতিটি অধিবেশন। আবার সরকারি দলেরও রয়েছে বিরাট ভূমিকা। তারা এবার সর্বোচ্চ মাত্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে। আত্মঅহমিকা যেন দলের গণতন্ত্র চর্চা ব্যাহত না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পাশাপাশি বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যা কম হওয়ায় তাদের কার্যকরী ভূমিকা পালনের পথ করে দিতে হবে। আলোচনা-সমালোচনা গ্রহণের মানসিকতা দেখাতে হবে। সরকার ইচ্ছা করলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কণ্ঠভোটেই যে কোনো বিল পাস করিয়ে নিতে পারে। তবে সেই বিল আইনে পরিণত হলে তাতে জনকল্যাণ বয়ে আসবে কিনা—সে ব্যাপারে সংসদীয় রীতি অনুসারে খোলা ফোরামে ব্যাপক বিস্তর আলোচনার সুযোগ রাখতে হবে। এর ফলে একদিকে যেমন সংসদে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাকবে, তেমনি সংসদীয় রীতি অনুসারে ভালো চর্চা দেশ ও জাতির সামনে উপস্থাপিত হবে। যেহেতু এই সরকার বার বার বলেছে গণতন্ত্রের পাশাপাশি উন্নয়নই তাদের টার্গেট, কাজেই তাদের সেই লক্ষ পূরণের জন্য এই গণতান্ত্রিক চর্চাগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।

গত দশ বছরে সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। জনগণের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে অনেক ক্ষেত্রেই। তবে এই উন্নয়ন যে একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন হয়েছে তা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক নজরদারি না থাকার কারণে বা অতি উৎসাহি নেতাকর্মী বা স্থানীয় নেতার কারণে ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে সরকারের সাফল্য ম্লান হয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় সরকারের সাফল্যের পাল্লাই ভারী।

পরপর দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাফল্যের তালিকাটি নেহায়েত ছোট নয়। তারপরও টানা তৃৃতীয় মেয়াদে অনেক সাধারণ ভোটারের মনেই দ্বিধা রয়েছে। আসলেই কি পারবে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে? এই ভাবনায় যারা বিশ্বাসী তাদের বিশ্বাসকে মিথ্যা প্রমাণ করার দায়িত্বও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। দশ বছরে সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এবারের পাঁচ বছর সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি হোক সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিরন্তর চেষ্টা। নির্বাচনী ইশতেহারে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে আওয়ামী লীগ যে ২১টি অঙ্গীকার করেছে তা-বাস্তবায়নের মূল বাধা যেন দুর্নীতি হয়ে না দাঁড়ায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই দুর্নীতি পরোপুরি নির্মূল কোনো দেশেই হয়নি। তবে অবশ্যই তা সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে হবে। এছাড়াও চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতার মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎপ্রকল্প, পায়রা বন্দর, নুতন কর্মসংস্থান, জনবান্ধব আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সামাজিক সুরক্ষা খাতসহ দারিদ্র্যকে ৫শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলেই এ সরকার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছতে পারবে।

চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, জঙ্গিবাদ, মাদক নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিশেষ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি অত্যন্ত মানবিক। আর এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে এদেশে অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। তাদের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দিনের পর দিন এই রোহিঙ্গাদের লালন করতে পারে না। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এদেশের কূটনীতিকদের আন্তর্জাতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। মিয়ানমারকে শরণার্থী গ্রহণে বাধ্য করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা করতে হবে। এর প্রথম কথাই হলো আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে। না হলে এ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। সরকারের উন্নয়ন এজেন্ডার সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

উন্নয়ন এর সংজ্ঞা দিনে দিনে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আর্থিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থানের উন্নয়নের সংজ্ঞাও পাল্টে যাবে। আগে যেখানে স্বাক্ষরজ্ঞানকে শিক্ষিত বলে সম্মান করা হতো, অদূর ভবিষ্যতে এদেশে শুধু স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্নকে খুব বেশি মাত্রায় সম্মান করা হবে না। আবার সুস্থ জীবন কিন্তু আয়ুষ্কাল কম, তাহলে সেটিও স্বাস্থ্য উন্নয়নের সংগায় পড়বে না। বাসস্থানের চাহিদাও এখন উন্নত হচ্ছে। শুধু মাথা গোজার ঠাঁইকে প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় মনে করা হলেও কালে কালে বাসযোগ্য আবাসনকেই মানদণ্ড বলে বিবেচনা করা হবে। সব মিলিয়ে উন্নয়ন হলো জনগণের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানো। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে যেভাবে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র শুধু রোল মডেলই হবে না, এটি হবে আরো বেশি কিছু। জনগণের রায়কে সম্মান করে আওয়ামী লীগ দেশকে সে পথে নিয়ে যাবে—এটাই প্রত্যাশা করি মনেপ্রাণে।

লেখক : কলামিস্ট মন্ট্রিয়েল, কানাডা