বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এতদিনের জমে থাকা পুঞ্জীভূত আগুনে যেন এক পশলা বৃষ্টির পরশ। পুরান ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। কেমিক্যালপল্লী বাস্তবায়নকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিসিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি সব সংস্থা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করলেও কেমিক্যালপল্লী নির্মাণ শেষ হতে সময় লাগবে ছয় মাস। এহেন পরিস্থিতিতে কেমিক্যালপল্লী নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে রাজধানীর আশপাশের সরকারি কারখানার অব্যবহৃত জায়গায় ব্যবসায়ীদের জন্য কেমিক্যাল মজুদ রাখার সুযোগ করে দিতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে কেমিক্যাল সংরক্ষণে বিশেষজ্ঞদের কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন তিনি। এজন্য দেশবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
নির্দেশনামার অংশ হিসেবে বলা হয়, রাজধানীর আশপাশে সরকারি কারখানার অব্যবহৃত জায়গায় পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের কেমিক্যাল মজুদ রাখা ও ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, কেমিক্যালপল্লী নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আগামী ছয় মাস এ ব্যবস্থা বহাল থাকবে এবং কেমিক্যালপল্লী নির্মাণ শেষে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের স্থায়ীভাবে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পুরান ঢাকায় অবস্থিত কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে শিল্প মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কেমিক্যাল কারখানা স্থানান্তরের জন্য কেরানীগঞ্জে ‘বিসিক কেমিক্যালপল্লী প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। ৫০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে এ প্রকল্পের ৯৩৬টি প্লট। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান উপজেলার বরবর্তা মৌজায় ‘বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী’ বাস্তবায়নের পথে। ৫০ একর জমির ওপর নির্মিত এ পল্লীতে থাকবে ৩৬০টি প্লট। তবে, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাদের মন্তব্য পাওয়া যেতে পারে। মন্তব্য যাই আসুক না কেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্যকারীরা বিচারের মুখোমুখি হবেন—এটাই সবার প্রত্যাশা।
এদিকে ঢাকার নিমতলীতে ২০১০ সালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির দেওয়া ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে চকবাজারে ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না—তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ১০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। আমলারা সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এসব অদক্ষ আমলা দিয়ে কী হবে?
আদালতের এই ভূমিকা আমাদের আশ্বস্ত করেছে, সাহস জুগিয়েছে। পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল অপসারণ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর হতে হবে। আদালতের পর্যবেক্ষণকে মাথায় রেখেই সরকারকে এ কাজে হাত দিতে হবে। অন্যথায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ একই বৃত্তে আবর্তিত হয়ে জনগণের আর্তনাদে আবার ভারী হয়ে উঠতে পারে পুরান ঢাকার পুঞ্জীভূত কষ্টের কাফেলা।