ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটের রাতারগুল আর মায়াবনের পর ‘কাঁঠালবাড়ী হাওর দ্বীপ’ দারুণ উপভোগ্য এক পর্যটন স্পট

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নাগরিক জীবনে বেঁধে দেওয়া ছকে আমাদের চলতে হয়। এই ছকে চলতে চলতে কখন মন অশান্ত হয়ে ওঠে। এই অশান্ত মনকে শান্ত করতে ভ্রমণের বিকল্প কিছু নেই। সিলেটের রাতারগুল আর মায়াবনের পর ‘কাঁঠালবাড়ী হাওর দ্বীপ’  দারুণ উপভোগ্য এক পর্যটন স্পট। সিলেটের হরিপুর থেকে মাত্র তিন-চার কিলোমিটার দূরে কানাইঘাট উপজেলার ৯ নম্বর রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে হাওরের মাঝখানে গাছপালায় ভরপুর অনেকগুলো টিলার ওপরের এই ছোট্ট গ্রামটিরই নাম ‘কাঁঠালবাড়ী’। সেখানকার প্রকৃতির মোহনীয় শোভা যে কারোর ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে।

যা দেখবেন

লালমাটি, গাছগাছালি, পাখপাখালি, খালবিল, পাল তোলা নৌকায় মানুষের যাতায়াত, জেলেদের মাছ ধরা, সারি সারি হাঁসের অবাধ বিচরণ, স্বচ্ছ সাদা পানি, পানিতে শাপলা ফুল, পানির ওপরে নীল আসমান। আর এর মধ্য দিয়ে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।  চারদিকে থৈ থৈ পানি, তার মাঝে হিজলগাছ, করচগাছ, চতুর্দিকে উঁচু-নিচু টিলা, টিলার বুকে ছোট-বড় বাড়ি, আছে টিলার মাঝে কাঁঠালগাছ, পেয়ারাগাছ, আমগাছ—এসব মিলিয়ে একেকটা টিলা যেন একেকটা আলাদা রাজ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যেন এক অপরূপ লীলাভূমি। সিলেটের রাতারগুল আর কাঁঠালবাড়ীর মধ্যে রয়েছে অনেকটা মিল। মিল রয়েছে উপজেলার নামের মাঝেও।

রাতারগুলের অবস্থান সিলেটের গোয়াইঘাট আর কাঁঠালবাড়ীর অবস্থান সিলেটের কানাইঘাট। শুধু যে ঘাটে ঘাটেই মিল তা নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও রাতারগুল থেকে কম নয় কানাইঘাটের কাঁঠালবাড়ীর সৌন্দর্য। যে কাঁঠালবাড়ীতে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, সেই কাঁঠালবাড়ীর প্রতিটি টিলা সত্যিই যেন আলাদা আলাদা একটি রাজ্য, একেকটি যেন আলাদা আলাদা দ্বীপ। যেখানে নেই কোনো যাতায়াত ব্যবস্থা, নেই কোনো শিক্ষাব্যবস্থা, নেই কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা। আছে শুধু ভ্রমণকারীদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মেটানোর অপরূপ দৃশ্য।

অনিন্দ্যসুন্দর বিশাল এ কাঁঠালবাড়ীর সঙ্গে অবশ্যই  তুলনা চলে  সিলেটের রাতারগুলের। কোনো অংশেই যেন কম নয় কাঁঠালবাড়ী। কোনো গাছের কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন যেন অন্ধকার লাগবে টিলাগুলো। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দেবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে পথ চলতে হয়। জলের নিচের অপূর্ব জগৎ।

যাত্রাপথের ঠিকানা

প্রথমে আপনাকে ট্রেন/বাসে করে সিলেট শহরে আসতে হবে। ভাড়া নেবে ২৬৫  থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। সেখান  থেকে বাস অথবা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে যেতে হবে কাঁঠালবাড়ীতে। সিলেট নগরী থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে কানাইঘাট গাজী বোরহান উদ্দিন রোড হয়ে রাজাগঞ্জ যেতে হয়। রাজগঞ্জ ইউনিয়নের বোরহান উদ্দিন রোডসংলগ্ন রাজাগঞ্জ বাজার থেকে গাজীপুর রাস্তা অথবা পারকুল রাস্তা হয়ে নৌকাযোগে পাড়ি দিতে হয় কাঁঠালবাড়ীতে।

রাজাগঞ্জ থেকে গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট হেঁটে ইঞ্জিন নৌকা অথবা ডিঙি নৌকায় পাড়ি দিতে হয় কাঁঠালবাড়ীতে। অথবা সিলেট নগরী থেকে হরিপুর হয়ে যাওয়া যায় কাঁঠালবাড়ী। এ ছাড়া কানাইঘাট সদর থেকে গাছবাড়ী হয়ে বিভিন্ন পথে সেখানে যাওয়া যায়। গাছবাড়ী  নারাইনপুর গ্রাম থেকে নৌকাযোগে, বাঁশবাড়ী থেকে নৌকাযোগে, শহরউল্লাহ হয়ে কাপ্তানপুর গ্রাম থেকে নৌকাযোগে যেতে পারবেন কাঁঠালবাড়ী। তবে বর্ষাকালে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ছাড়া নৌকা পাওয়া যায় না। সেখানে যেতে হলে স্থানীয়দের সঙ্গে আগেই কথা বলে নৌকার ব্যবস্থা করতে হবে।

সতর্কতা

কাঁঠালবাড়ী বা এর আশপাশে খাবারের হোটেল বা থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই খাবার রাজাগঞ্জ বা সিলেট থেকে নিয়ে যেতে পারেন। আরেকটা বিষয়, নৌকায় করে বেড়ানোর সময় পানিতে হাত না দেওয়াই ভালো। জোঁকসহ বিভিন্ন পোকামাকড় তো আছেই, মাঝেমধ্যে বিষাক্ত সাপও পানিতে দেখতে পাওয়া যায়। সাঁতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখা জরুরি। এ ছাড়া ছাতা, বর্ষাতি কিংবা রোদটুপিও সঙ্গে নিতে হবে। আরেকটি কথা—পলিথিন, বোতল, চিপসের খোসা, বিস্কুটের খোসা ইত্যাদি জিনিস পানিতে ফেলবেন না দয়া করে। আমাদের নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

সিলেটের রাতারগুল আর মায়াবনের পর ‘কাঁঠালবাড়ী হাওর দ্বীপ’ দারুণ উপভোগ্য এক পর্যটন স্পট

আপডেট টাইম : ০২:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নাগরিক জীবনে বেঁধে দেওয়া ছকে আমাদের চলতে হয়। এই ছকে চলতে চলতে কখন মন অশান্ত হয়ে ওঠে। এই অশান্ত মনকে শান্ত করতে ভ্রমণের বিকল্প কিছু নেই। সিলেটের রাতারগুল আর মায়াবনের পর ‘কাঁঠালবাড়ী হাওর দ্বীপ’  দারুণ উপভোগ্য এক পর্যটন স্পট। সিলেটের হরিপুর থেকে মাত্র তিন-চার কিলোমিটার দূরে কানাইঘাট উপজেলার ৯ নম্বর রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে হাওরের মাঝখানে গাছপালায় ভরপুর অনেকগুলো টিলার ওপরের এই ছোট্ট গ্রামটিরই নাম ‘কাঁঠালবাড়ী’। সেখানকার প্রকৃতির মোহনীয় শোভা যে কারোর ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে।

যা দেখবেন

লালমাটি, গাছগাছালি, পাখপাখালি, খালবিল, পাল তোলা নৌকায় মানুষের যাতায়াত, জেলেদের মাছ ধরা, সারি সারি হাঁসের অবাধ বিচরণ, স্বচ্ছ সাদা পানি, পানিতে শাপলা ফুল, পানির ওপরে নীল আসমান। আর এর মধ্য দিয়ে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।  চারদিকে থৈ থৈ পানি, তার মাঝে হিজলগাছ, করচগাছ, চতুর্দিকে উঁচু-নিচু টিলা, টিলার বুকে ছোট-বড় বাড়ি, আছে টিলার মাঝে কাঁঠালগাছ, পেয়ারাগাছ, আমগাছ—এসব মিলিয়ে একেকটা টিলা যেন একেকটা আলাদা রাজ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যেন এক অপরূপ লীলাভূমি। সিলেটের রাতারগুল আর কাঁঠালবাড়ীর মধ্যে রয়েছে অনেকটা মিল। মিল রয়েছে উপজেলার নামের মাঝেও।

রাতারগুলের অবস্থান সিলেটের গোয়াইঘাট আর কাঁঠালবাড়ীর অবস্থান সিলেটের কানাইঘাট। শুধু যে ঘাটে ঘাটেই মিল তা নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও রাতারগুল থেকে কম নয় কানাইঘাটের কাঁঠালবাড়ীর সৌন্দর্য। যে কাঁঠালবাড়ীতে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, সেই কাঁঠালবাড়ীর প্রতিটি টিলা সত্যিই যেন আলাদা আলাদা একটি রাজ্য, একেকটি যেন আলাদা আলাদা দ্বীপ। যেখানে নেই কোনো যাতায়াত ব্যবস্থা, নেই কোনো শিক্ষাব্যবস্থা, নেই কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা। আছে শুধু ভ্রমণকারীদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মেটানোর অপরূপ দৃশ্য।

অনিন্দ্যসুন্দর বিশাল এ কাঁঠালবাড়ীর সঙ্গে অবশ্যই  তুলনা চলে  সিলেটের রাতারগুলের। কোনো অংশেই যেন কম নয় কাঁঠালবাড়ী। কোনো গাছের কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন যেন অন্ধকার লাগবে টিলাগুলো। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দেবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে পথ চলতে হয়। জলের নিচের অপূর্ব জগৎ।

যাত্রাপথের ঠিকানা

প্রথমে আপনাকে ট্রেন/বাসে করে সিলেট শহরে আসতে হবে। ভাড়া নেবে ২৬৫  থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। সেখান  থেকে বাস অথবা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে যেতে হবে কাঁঠালবাড়ীতে। সিলেট নগরী থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে কানাইঘাট গাজী বোরহান উদ্দিন রোড হয়ে রাজাগঞ্জ যেতে হয়। রাজগঞ্জ ইউনিয়নের বোরহান উদ্দিন রোডসংলগ্ন রাজাগঞ্জ বাজার থেকে গাজীপুর রাস্তা অথবা পারকুল রাস্তা হয়ে নৌকাযোগে পাড়ি দিতে হয় কাঁঠালবাড়ীতে।

রাজাগঞ্জ থেকে গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট হেঁটে ইঞ্জিন নৌকা অথবা ডিঙি নৌকায় পাড়ি দিতে হয় কাঁঠালবাড়ীতে। অথবা সিলেট নগরী থেকে হরিপুর হয়ে যাওয়া যায় কাঁঠালবাড়ী। এ ছাড়া কানাইঘাট সদর থেকে গাছবাড়ী হয়ে বিভিন্ন পথে সেখানে যাওয়া যায়। গাছবাড়ী  নারাইনপুর গ্রাম থেকে নৌকাযোগে, বাঁশবাড়ী থেকে নৌকাযোগে, শহরউল্লাহ হয়ে কাপ্তানপুর গ্রাম থেকে নৌকাযোগে যেতে পারবেন কাঁঠালবাড়ী। তবে বর্ষাকালে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ছাড়া নৌকা পাওয়া যায় না। সেখানে যেতে হলে স্থানীয়দের সঙ্গে আগেই কথা বলে নৌকার ব্যবস্থা করতে হবে।

সতর্কতা

কাঁঠালবাড়ী বা এর আশপাশে খাবারের হোটেল বা থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই খাবার রাজাগঞ্জ বা সিলেট থেকে নিয়ে যেতে পারেন। আরেকটা বিষয়, নৌকায় করে বেড়ানোর সময় পানিতে হাত না দেওয়াই ভালো। জোঁকসহ বিভিন্ন পোকামাকড় তো আছেই, মাঝেমধ্যে বিষাক্ত সাপও পানিতে দেখতে পাওয়া যায়। সাঁতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখা জরুরি। এ ছাড়া ছাতা, বর্ষাতি কিংবা রোদটুপিও সঙ্গে নিতে হবে। আরেকটি কথা—পলিথিন, বোতল, চিপসের খোসা, বিস্কুটের খোসা ইত্যাদি জিনিস পানিতে ফেলবেন না দয়া করে। আমাদের নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।