ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালের বিবর্তনে অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাওরাঞ্চল বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সহ পার্শবর্তী উপজেলা হোমনা, মুরাদনগর, নবীনগর অঞ্চল থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে চতুর বাবুই পাখি। মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতা- “বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই” এই কবিতার কারনেই আজও সকলের মনে নিসর্গে পরিচিত হয়ে আছে সুনন্দ বাবুই পাখি ।

সময়ের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী, সম্প্রীতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। বর্তমান বৃষ্টিবাদলার দিন ও বর্ষা আগমনের পূর্বেই সাধারনত বাবুই পাখি বৃষ্টির পানি হতে ও প্রজননের জন্য নতুন বাসা বুনে। অথচ,এখন সেটি দেখা মিলা ভার। গ্রামবাংলায় এখন আর আগের মতো বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির দিকে বাবুই পাখি।

বাবুই আবহমান বাংলার শোভন পাখি। তালগাছের পাতায় দলবেধে বাসা বাঁধে তারা। তাদের বাসা সুউচ্চ তালগাছ আরও নয়নাভিরাম করে তোলে। এমন সুন্দর চমৎকার নিপুণ কারিগরী বাসা আর কোন পাখি বুনতে পারেনা। জানা মতে মানুষের পক্ষেও সম্ভব নয় এমন সুন্দর বাসা তৈরী করা । তাই বাবুই পাখির শিল্পিত বাসা নিসর্গকে মনোরম করে তোলে। যেমন দৃষ্টিনন্দন তাদের বাসা ঠিক তেমনি মজবুত।

প্রবল ঝড় বৃষ্টি-বাতাসেও টিকে থাকে তাদের বাসা। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করত বাবুই পাখিরা। একান্নবর্তী পরিবারের মত এক গাছে দলবদ্ধ বাসা বুনে এদের বাস। বাবুই পাখি একাধারে শিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনেরও প্রতিচ্ছবি। শক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন।

দিনে দিনে উজার হচ্ছে তালগাছ। তার সাথে উজার হচ্ছে বাবুই পাখির বাসা। কয়েক বছর পূর্বেও গ্রাম-গঞ্জের তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। কিন্তু এখন আগের মতো বাসা আর পড়েনা বাসা বাবুই পাখির। এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক যোগাত এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করত। এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো “তারা রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে। সকাল হলেই আবার তাদের ছেড়ে দেয়”।

সাধারণত তাল, খেজুর, নারিকেল, সুপারি ও আখক্ষেতে বাসা বাঁধে। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি এদের প্রধান খাবার। পাখি প্রেমিক সাবেক বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলহাজ¦ দুধ মিয়া বিএসসি বলেন, ‘বর্তমানে যেমন তাল জাতীয় গাছ হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমন হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি। আগের মতো তাল গাছো নাই আর বাবুই পাখিও নাই।’

সচেতন মহল মনে করেন বাবুই পাখির আবাস তাল গাছ এবং বাবুই পাখি সংরক্ষনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারীভাবে উদ্যোগ জরুরী।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

কালের বিবর্তনে অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

আপডেট টাইম : ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাওরাঞ্চল বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সহ পার্শবর্তী উপজেলা হোমনা, মুরাদনগর, নবীনগর অঞ্চল থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে চতুর বাবুই পাখি। মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতা- “বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই” এই কবিতার কারনেই আজও সকলের মনে নিসর্গে পরিচিত হয়ে আছে সুনন্দ বাবুই পাখি ।

সময়ের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী, সম্প্রীতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। বর্তমান বৃষ্টিবাদলার দিন ও বর্ষা আগমনের পূর্বেই সাধারনত বাবুই পাখি বৃষ্টির পানি হতে ও প্রজননের জন্য নতুন বাসা বুনে। অথচ,এখন সেটি দেখা মিলা ভার। গ্রামবাংলায় এখন আর আগের মতো বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির দিকে বাবুই পাখি।

বাবুই আবহমান বাংলার শোভন পাখি। তালগাছের পাতায় দলবেধে বাসা বাঁধে তারা। তাদের বাসা সুউচ্চ তালগাছ আরও নয়নাভিরাম করে তোলে। এমন সুন্দর চমৎকার নিপুণ কারিগরী বাসা আর কোন পাখি বুনতে পারেনা। জানা মতে মানুষের পক্ষেও সম্ভব নয় এমন সুন্দর বাসা তৈরী করা । তাই বাবুই পাখির শিল্পিত বাসা নিসর্গকে মনোরম করে তোলে। যেমন দৃষ্টিনন্দন তাদের বাসা ঠিক তেমনি মজবুত।

প্রবল ঝড় বৃষ্টি-বাতাসেও টিকে থাকে তাদের বাসা। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করত বাবুই পাখিরা। একান্নবর্তী পরিবারের মত এক গাছে দলবদ্ধ বাসা বুনে এদের বাস। বাবুই পাখি একাধারে শিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনেরও প্রতিচ্ছবি। শক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন।

দিনে দিনে উজার হচ্ছে তালগাছ। তার সাথে উজার হচ্ছে বাবুই পাখির বাসা। কয়েক বছর পূর্বেও গ্রাম-গঞ্জের তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। কিন্তু এখন আগের মতো বাসা আর পড়েনা বাসা বাবুই পাখির। এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক যোগাত এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করত। এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো “তারা রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে। সকাল হলেই আবার তাদের ছেড়ে দেয়”।

সাধারণত তাল, খেজুর, নারিকেল, সুপারি ও আখক্ষেতে বাসা বাঁধে। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি এদের প্রধান খাবার। পাখি প্রেমিক সাবেক বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলহাজ¦ দুধ মিয়া বিএসসি বলেন, ‘বর্তমানে যেমন তাল জাতীয় গাছ হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমন হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি। আগের মতো তাল গাছো নাই আর বাবুই পাখিও নাই।’

সচেতন মহল মনে করেন বাবুই পাখির আবাস তাল গাছ এবং বাবুই পাখি সংরক্ষনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারীভাবে উদ্যোগ জরুরী।