বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
গত বছর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মতো অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হলো।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিমসটেক সম্মেলনের নৈশভোজে দুই নেতার সাক্ষাৎ হয় এবং তাঁরা কুশলাদি বিনিময় করেন। নৈশভোজে উভয় নেতাকে বেশ কিছু সময় ধরে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলতে দেখা গেছে।
বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলন ২ থেকে ৪ এপ্রিল ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করার কথা বললেন ড. ইউনূস
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গতকালের বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধানতম দুই দেশের সরকারপ্রধান পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে খোলামনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। দুই সরকারপ্রধানের ৪০ মিনিটব্যাপী আলোচনা ছিল খোলামেলা, ফলপ্রসূ এবং গঠনমূলক।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের দুটি দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে আমাদের কঠিন সময়ে ভারত সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’
বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস সাত সদস্য দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন চান। তিনি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা এবং তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি চূড়ান্তকরণের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানান এবং ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তিনি উল্লেখ করেন, দুই প্রতিবেশী দেশের ইতিহাস বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় থেকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক মর্যাদার কথা স্মরণ করে বলেন, ভারত সর্বদা একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে।’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বেগের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা অনেকটাই অতিরঞ্জিত এবং ‘এর বেশির ভাগই ভুয়া খবর’।
যেসব হামলার অভিযোগ এসেছে, তা স্বচক্ষে যাচাই করার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিক পাঠানোর অনুরোধ জানান।
নরেন্দ্র মোদিকে ছবি উপহার দিলেন ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি ছবি (ফটোগ্রাফ) উপহার দিয়েছেন।
গতকাল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে বৈঠককালে অধ্যাপক ইউনূস নরেন্দ্র মোদির হাতে ছবিটি তুলে দেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অধ্যাপক ইউনূসকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। সেই মুহূর্তটি ধারণ করা ছবি আজ (গতকাল) ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকের পর ফেসবুক ও এক্সে মোদির পোস্ট
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে গতকাল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে পোস্ট করেছেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি গঠনমূলক ও জনকেন্দ্রিক সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মোদি আরো লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি এবং গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম রোধে ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য আমাদের গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।’
প্রধান উপদেষ্টা-থাই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক
ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন।
চুরি হওয়া অর্থ ফেরাতে কলম্বোর সহায়তা চেয়েছে ঢাকা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল ব্যাঙ্ককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এ সময় দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছেন।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে তাঁর দেশের প্রচেষ্টার কথা বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সংসদ পুনরুদ্ধারপ্রক্রিয়া ত্বরান্ব্বিত করার জন্য একটি নতুন আইন অনুমোদন করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কোটি কোটি ডলার ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টায় শ্রীলঙ্কার সমর্থন চেয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়া।
গতকাল ব্যাঙ্ককে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক
গতকাল বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন। গতকাল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে সাংরি-লা হোটেলে। ছবি : পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে সাক্ষাৎ করেন (বাঁয়ে) এবং সম্মেলনের সাইডলাইন বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তবগের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। গতকাল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে সাংরি-লা হোটেলে। ছবি : পিআইডি