বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারকে ফেরত নিতে হবে। এটা বাংলাদেশের জন্য বোঝা। বাংলাদেশ এই বোঝা কতদিন বইবে? এর একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত।’ গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নাগরিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টির প্রেক্ষিতে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকে উদ্দেশ্য করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে আপনার একটা উজ্জ্বল ভাবমূর্তি আছে, সেটা নষ্ট করবেন না।’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্কালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এ তথ্য জানান। প্রসঙ্গত, গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর এ পর্যন্ত ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক কারণে আশ্রয় দিলেও তাদের ফেরত নিয়ে পুনর্বাসিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা নাম উচ্চারণ না করে শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার কথা বললেও সন্ত্রাসীদের শাস্তির কথাও বলেন সুষমা স্বরাজ। তিনি বলেন, রাখাইনে অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী সন্ত্রাসীদের শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু এর জন্য নিরীহ লোকদের কেন শাস্তি পেতে হবে? নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রশংসাও করেন সুষমা স্বরাজ।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা ও পুলিশ ফাঁড়িতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে সেনা অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশাল সংখ্যার এই শরণার্থীদের বাংলাদেশের জন্য ‘বড় বোঝা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সংকটের স্থায়ী সমাধানে রাখাইনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবদান রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাক্ষাত্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ার কথা স্মরণ করেন। স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথাও। সেজন্য দেশটির নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। শেখ হাসিনা পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে উদ্বাস্তু হিসেবে দেশের বাইরে দীর্ঘদিন থাকার কথাও তুলে ধরেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সেদেশের পররাষ্ট্র সচিব ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
বৈঠকের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর ব্যবহূত কিছু সমরাস্ত্র প্রদানের অনুষ্ঠান হয়। বাংলাদেশকে শুভেচ্ছার স্মারক হিসেবে তখন ব্যবহূত এমআই হেলিকপ্টার, দুটি ট্যাংক, ২৫টি বিভিন্ন অস্ত্র দিয়েছে ভারত। গণভবনের অনুষ্ঠানে ৩৮ ক্যালিবারের একটি সার্ভিস রিভলবার শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন সুষমা স্বরাজ।